Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সংঘ পরিবার আগুন নিয়ে খেলছে : মুসলিম প্রতিনিধি

অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে সংঘ পরিবারের হুমকি

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


ইনকিলাব ডেস্ক : সংঘ পরিবার স¤প্রতি ঘোষণা করেছে যে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে শুধু রাম মন্দিরই নির্মাণ করা হবে। অন্য কোনো নির্মাণ নয় এবং সেই নির্মাণকার্য শুরু হচ্ছে আগামী বছর থেকে। আদালতের বাইরে আপোষ মীমাংসায় তারা আগ্রহী নয়।
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার ২৫তম বর্ষপূর্তির ঠিক মুখে মৌলবাদী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কর্নাটকের উড়ুপিতে সংঘ পরিবার আয়োজিত ধর্ম সংসদ থেকে ঘোষণা করে, আগামী বছর থেকে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতেই শুরু হবে রাম মন্দির নির্মাণ। ঐ জমিতে অন্য কোনো নির্মাণ নয়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হিন্দু কর সেবকরা বাবরি মসজিদ ভাঙার পর কেটে যায় ২৫ বছর। মামলা মোকদ্দমা চলে বহু বছর। এলাহাবাদ হাই কোর্টে এক প্রস্থ রায় ঘোষণার পরেও তার চূড়ান্ত মীমাংসা হয়নি। ঐ রায়ে বিতর্কিত জমিকে বিবদমান তিন পক্ষের মধ্যে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। তখন অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মামলা চলে যায় শীর্ষ আদালতে। স¤প্রতি আর্ট অফ লিভিং-এর ধর্মগুরু শ্রী শ্রী রবিশংকর আদালতের বাইরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এক মীমাংসাসূত্র বের করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু সংঘ পরিবার তাতে আমল দেয়নি। তাদের মতে, ধর্ম সংসদই বলবে শেষকথা।
এই আবহে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বুঝিয়ে দেন, অযোধ্যার রামজন্মভূমিতে রাম মন্দিরই আমাদের বানাতে হবে, সেখানকার পাথর দিয়েই, অন্য কোনো নির্মাণ নয়। আর সেই নির্মাণ শুরু হতে আর দেরি নেই। আগামী বছর থেকেই শুরু হবে সেই নির্মাণকার্য। এটা হাততালি কুড়াবার ঘোষণা নয়। গভীর ধর্মবিশ্বাস থেকেই করা হয়েছে, যেটা নড়চড় হবার প্রশ্ন নেই। এই ধর্ম সংসদ থেকেই ডাক দেওয়া হয় গো-হত্যা বন্ধ করার, গরুকে জাতীয় প্রাণীর মর্যাদা দেওয়ার, লাভজেহাদ বা হিন্দু-মুসলিম বিয়ে-শাদির ওপর নিষেধাজ্ঞা, ধর্মান্তরকরণ ইত্যাদি বিষয়।
সংঘ-পরিবারের এই ধরনের ঘোষণায় সরব হয় মুসলিম শিবির। তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে হায়দ্রাবাদের সাংসদ এবং এআইএমআইএম-এর সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, সংঘ পরিবার আগুন নিয়ে খেলছে। সুপ্রিম কোর্টকে পর্যন্ত পরোয়া করছে না। করলে অযোধ্যার বিতর্কিত জমি নিয়ে এমন মন্তব্য কেউ করতে পারে না। বিষয়টির সংবেদনশীলতার দিকে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান। মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের মুখপাত্র মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি জানিয়েছেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। বিচার বিভাগের ওপর আমাদের আস্থা আছে। শীর্ষ আদালতের রায় আমরা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করবো। কিন্তু তার আগেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। কংগ্রেস পার্টির মুখপাত্র আনন্দ শর্মাও অনুরূপ মন্তব্য করে বলেছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এই ধরনের ঘোষণায় সুপ্রিম কোর্টকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে. অযোধ্যা মামলায় যা অবস্থান নেবার, তা শীর্ষ আদালতই নেবে। উল্লেখ্য, আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের আটটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে মোদীর জয়লাভ হবে নিঃসন্দেহে এক বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনীতিকদের অনেকে মনে করেন, গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে রামমন্দির নির্মাণের কর্মসূচির আগাম ঘোষণা করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ভোটের রাজনীতির সব অপ্রিয় প্রশ্ন থেকে দৃষ্টি সরাতেই এই মেরুকরণের বার্তা। মোদী সরকার এখন কি অবস্থান নেয়, সেটাই দেখার।
রাজনীতির অভিজ্ঞ বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ ইস্যু সম্পর্কে ডয়চে ভেলের কাছে তার মত ব্যক্ত করতে গিয়ে বললেন, সংঘ পরিবার নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিষয়টিকে জিইয়ে রেখে হিন্দু ভোট সুসংহত করতে চাইছে। এটা ওদের পুরোনো অ্যাজেন্ডা। এছাড়া অন্যকিছু ওদের মাথায় ঢোকে না। এটাই ওদের নিজস্ব সাংগঠনিক ধারা। সংগঠনকে ধরে রাখতে এই ধরনের কথাবার্তা বলতে হয়, তাই বলে। রাম মন্দির নিয়ে আমজনতার খুব যে একটা মাথাব্যথা আছে এমনটা আমার মনে হয় না। তাই এই ইস্যুতে ওরা কোনো মধ্যস্থতাও চায় না। তাই শ্রী শ্রী রবিশংকরের উদ্যোগ বানচাল হয়ে গেল। আর শীর্ষ আদালতের রায়ের কথা বলছেন? ওদের মতে, ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপারটা আদালতের এক্তিয়ারে পড়ে না। আগেও বিচার বিভাগের অনেক রায় ওরা অমান্য করেছে। তার জন্য হাসিমুখে জেলে যেতেও রাজি। যেমনটা হয়েছিল বাবরি মসজিদ ভাঙার সময়। তৎকালীন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কল্যান সিং হাসতে হাসতে একদিনের কারাবাস মেনে নিয়েছিলেন। তবে সা¤প্রদায়িক গÐগোলের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে বললেন, মুসলিমরাও বুঝতে পারছে, এটা সংঘ পরিবারের এক ধরনের ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ