Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তৃতীয় কাউকে ডাকতে হবে কেন?

প্রধানমন্ত্রী বললেন, রোহিঙ্গা ফেরানোর সম্মতিপত্র স্বাক্ষর ‘কূটনৈতিক সাফল্য’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে গত বছর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে সম্মতিপত্র স্বাক্ষর হওয়াকে বাংলাদেশের ‘বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য’ হিসেবে অবিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে প্রথমবারের মতো ‘রাষ্ট্রদূত সম্মেলন’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যে কোনো সমস্যা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমতার ভিত্তিতে, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে না। তিন দিনের এই রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে বর্তমানে বিশ্বের ৫৮টি দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের ক‚টনীতিকরা অংশ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ডিপ্লোমেসিতে আগে পলিটিক্যাল বিষয়টা গুরুত্ব পেত। এখন ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি চালু হয়ে গেছে।
রোঙ্গিহা সমস্যা সমাধানের কথা বলতে গিয়ে ১৯৯৮ সালে আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কেন আমাকে তৃতীয় কাউকে ডাকতে হবে? গত সপ্তাহের শেষে মিয়ানমারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একটি সম্মতিপত্রে সই করেছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত যৌথ ঘোষণার আলোকে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নিজ দেশের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। রাখাইনে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ওই সইয়ের পর দেশের সাবেক কূটনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা দাবি করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আলোচনায় জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী দেশগুলোকে সঙ্গে রাখার। তাদের আশঙ্কা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে ৮৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর এবার ২৫ আগস্টের পর নতুন করে বাংলাদেশে আসে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এবার গণহত্যা ও ধর্ষণের মতো দমন-পীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের চাপের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আলোচনায় সম্মত হয় মিয়ানমার।
প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে সম্পৃক্ত করার দাবি থাকলেও মিয়ানমার তাতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে নতুন চুক্তি করে প্রত্যাবাসনের উপর জোর দিয়ে এলেও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারের চাহিদা অনুযায়ী ১৯৯২ সালের যৌথ ঘোষণার আওতায় সমঝোতায় রাজি হয়।
১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে মিয়ানমারের আরাকান থেকে রোহিঙ্গাদের চলে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ বলেন, মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে অন্তত একটা সমঝোতা করতে পেরেছি। যার মাধ্যমে আমরা আশা করি, অন্তত এই মিয়ানমার নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে পারব। মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো সন্দেহ নেই, তারপরও যেহেতু প্রতিবেশী দেশ, প্রতিবেশী দেশের সাথে আমরা একটা ভালো সম্পর্ক রেখে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে চাই।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, এইচটি ইমাম, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপুমণি, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশের সমর্থন পাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশ সমর্থন দিয়েছে, সাধুবাদ জানিয়েছে। তারা জানতে চাচ্ছে- কী কী লাগবে। তারা সব করতে রাজি আছে। বাংলাদেশ বোধ হয় আর কোনোদিনই এত বড় ক‚টনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভ‚মিতে ফেরত পাঠাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশে কূটনীতিকদের সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
বিশ্বের দেশে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের কীভাবে স¤প্রসারণ করা যায় সে দিকে রাষ্ট্রদূতদের নজর দেয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কীভাবে কোন কোন দেশে পণ্য পাঠাতে পারি তা অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা, দেশে আরো বিনিয়োগ আনা, নতুন রফতানি বাজার সৃষ্টি, জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হতে রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বিদেশে পালিয়ে থাকা জাতির পিতার খুনি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। অপপ্রচার করে তারা যেন দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে না পারে। পঁচাত্তরের পর যারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, তারা বসে নেই। তারা বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে। কূটনীতিকদের দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে কাজ করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেন কোনোরকম হয়রানির শিকার না হন। প্রবাসে যারা আছেন তাদের ভালো-মন্দ দেখা, তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করা ক‚টনীতিকদের কাজ। বিদেশ কর্মরত কূটনীতিকদের সপ্তাহে কিংবা মাসে একবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বসে তাদের সমস্যার কথা শোনা এবং সমাধান করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা ভুলে গেলে চলবে না; তারাই কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করেন। তারা যে টাকা পাঠায় এটাই আমাদের রিজার্ভের বড় অংশ। আমরা যে এতগুলো কূটনৈতিক মিশন চালাচ্ছি; এর বেশির ভাগ কন্ট্রিবিউশন প্রবাসীরাই করছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আবারো বলবো, প্রবাসী বাঙালিরা যেনো হয়রানির শিকার না হন। তাদের সঙ্গে মানবিক দৃষ্টি দিয়ে আচরণ করবেন। তাদেরকে আস্থার জায়গায় নেবেন।



 

Show all comments
  • কাজল ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ২:১২ এএম says : 0
    সাফল্য তখনই আসবে যখন তাদেরকে তা;দের অধিকারসহ ফেরত পাঠাতে পারবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Mostofa ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১:২৩ পিএম says : 0
    এখণ এই চুক্তিমত মিয়ানমার যদি তার নাগরিদের ফেরত নেয়। তাহলে ভবিষ্যাতে চিনের প্রভাব বাংলাদেশে আরও বাড়বে। সেই সাথে বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ধরে রাখা ভারতের জন্য কঠিন হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rajib Khan ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১:২৩ পিএম says : 0
    Well played Bangladesh
    Total Reply(0) Reply
  • Anup Mandal ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১:২৪ পিএম says : 0
    যতো সহজে চুক্তি হলো ততো সহজে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিবে না। just akta eyewash. দেখেন কি হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Ahmed ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৩৮ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের সব দল নেতারা ভারত মুখি,সবাই ভারতের আশীর্বাদ খুজে।ভারতের প্রভাবমুক্ত হওয়া এখন সময়ের দাবি।
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৩৯ পিএম says : 0
    এগিয়ে যান আপনি। কাজ করে যান দেশের জন্য। এদেশের মানুষ আপনার পাশে থাকবে
    Total Reply(0) Reply
  • কাসেম ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৪০ পিএম says : 0
    কাউকে ডাকতে হবে না। শুধু তাদেরকে নাগরিক অধিকারসহ মিয়ানমারে ফেরত পাঠান তাহলেই হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ