পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় আশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আলবদর, খুনি ও ইতিহাস বিকৃতকারীরা যেন আর বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসতে না না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরো এগিয়ে যাবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশ গড়ে উঠবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে সরকারিভাবে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালি শেষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে রাজধানীসহ সারাদেশেই আয়োজিত হয়েছে এই শোভাযাত্রা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর বেলা ৩টায় শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত হন ২টা ৫৮ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত হওয়ার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কাজ শুরু হয়।
এর আগে, গতকাল দুপুর ১২টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে সরকারি উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ওই উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়। ৩২ নম্বরে পুষ্পস্তবক অর্পণ পর্ব শেষ হওয়ার পর সেখান থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা নিয়ে সোহরাওয়ার্দীতে যান আওয়ামী লীগের নেতানেত্রী ও সরকারি কর্মকর্তারা। তাদের হাতে থাকা ব্যানার-ফেস্টুনে ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায় রাখতে পারবা না’; ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’- বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিভিন্ন অংশ লেখা ছিল। সোহরাওয়ার্দীতে সভা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই শাহবাগ মোড়, রমনা পার্ক, মৎসভবন মোড়, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর, টিএসসি এলাকা জনস্রোতে পরিণত হয়।
এরপর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো হয়। পরে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণ শেষ করেন ৪টা ১০মিনিটে।
৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে সরকারের উদ্যোগে পালিত এই দিনটিকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সেদিন এসেছিলাম, বক্তৃতা শুনেছিলাম, আন্দোলন তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল; তাও দেখেছিলাম।
তিনি বলেন, আজকে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার মনে পড়ছে ’৭১ এর সেই ৭ মার্চের কথা। বারবার মনে পড়ছে, সেই দিনের কথা। বাংলার মানুষের মনে যে আর্তি উঠেছিল, এই ভাষণের মধ্যদিয়ে তিনি সেই আত্মার কথাই তুলে ধরেছিলেন। এত দূরদর্শিতা, এত দিকনির্দেশনা পৃথিবীর কোনো ভাষণে পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র ৫৪ বছর বয়সে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। এর মধ্যে অর্ধেক সময় তার কেটেছে কারাগারে। আমরা সন্তানরা পিতা হিসেবে তাকে কতটুকু পেয়েছি ? স্কুল থেকে জেল গেটে গিয়ে দেখা করেছি। কলেজ থেকে জেল গেটে গিয়ে দেখা করেছি। ইউনিভার্সিটি থেকেও জেল গেটে গিয়ে দেখা করেছি।
৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই ভাষণের জন্য কোনো নোট ছিল না। এই ভাষণ লিখিত ছিল না। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য জাতির পিতা তার হৃদয় থেকে সেদিন ভাষণ দিয়েছিলেন।
সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থেকে এই ভাষণ শোনা এবং লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু সমগ্র দেশবাসীকে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন তার কন্যা। তিনি বলেন, তিনি বলেছিলেন, তোমাদের যা যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। আরো বলেছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। জাতির পিতা জানতেন, এই ভাষণের পর স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, তাকে হত্যা বা গ্রেফতার করা হতে পরে। সে জন্যই তিনি বলে গিয়েছিলেন, আমি যদি হুমুক দিবার নাও পারি...আমাকে যদি হত্যা করা হয়...’। এত দূরদর্শী ভাষণ পৃথিবীতে আর একটিও নেই।
স্বাধীনতার পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধুর আরো আগের জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি তিন নেতার মাজারে ফুল দিতে গিয়ে বলেছিলেন, এই ভূখন্ডের নাম হবে বাংলাদেশ। আজ লাল-সবুজের পতাকাও তারই পছন্দ করা। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি, এটা তার খুব পছন্দের গান ছিল।
ঐতিহাসিক এই ভাষণের প্রেক্ষাপটের পেছনে প্রধানমন্ত্রী তার মা শেখ ফজিলাতুন্নেছার কথা তুলে ধরে বলেন, এই ভাষণের কারণে আমার মার কথা মনে পড়ে যায়। আমার মা বলেছিলেন, কারো পরামর্শ তোমার শোনার দরকার নেই। তুমি তোমার মনের কথা বলবে। কারণ তুমি তোমার সারাটা জীবন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে এসেছ।
তিনি বলেন, আজকে আমরা আনন্দিত। আনন্দিত যে ৪৬ বছর আগে জাতির পিতা যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা আজকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ইতিহাস বারবার ফিরে আসে। এই ভাষণ একসময় বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছিল। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল, এ ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল, আজকে তারা কোথায় মুখ লুকাবে? আর যেন স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, খুনি ও ইতিহাস বিকৃতিকারীরা দেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে উল্লেখ করে রাজাকার, আলবদরদের মন্ত্রী করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চেয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলন, ’৭৫ এ কেবল জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়নি, যে আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সেই আদর্শকেও ভুলুণ্ঠিত করে রাজাকার আলবদরকে ক্ষমতায় বসানো হয়। তারা ইতিহাস বিকৃত করে। জাতির পিতার ভাষণ নিষিদ্ধ করে। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে কত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছরেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এক কোটি মানুষ শরণার্থী, সাত কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে তিন কোটি মানুষ গৃহহীন। লাখ লাখ মানুষ হত্যা হয়েছে, নারী ধর্ষিত হয়েছে। রাস্তাঘাট, সেতু ধ্বংস হয়েছে। এসব রাস্তাঘাট মেরামত করা, গৃহহীনদেকে ঘরের ব্যবস্থা করা, শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ থেকে অগ্রযাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের। কিন্তু শত্রুরা তা থামিয়ে দেয়।
দেশের কয়েকটি প্রজন্ম স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারেনি মন্তব্য করে তাদের জন্য দুঃখ হওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যারা এই ভাষণ একদিন নিষিদ্ধ করেছিল, তাদের অবস্থানটা এখন কোথায়? তারা যে মহাসত্যকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।
জাতির পিতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যও কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার দেখানো পথেই এখন এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অর্থনীতি এখন শক্তিশালী।
বাংলাদেশকে এক সময় বিশ্ব করুণার চোখে দেখত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিকভাবে দেশ মর্যাদা পেয়েছে। আজকে আমাদের কেউ করুণা করতে পারে না। অর্থনৈতিকভাবে আমরা আজ শক্তিশালী। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
গতকাল দুপুরে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভযাত্রা। হাজার হাজার মানুষ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আসতে থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এই কর্মসূচির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দুপুর ১২টার পর থেকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সমাবেশে মন্ত্রীপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের স্বাগত বক্তব্যের পর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশাত্মবোধক নাচ-গান ও কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্যান্য শিল্পীদের উপস্থাপনা মুগ্ধ করে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।