Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রত্যক্ষদর্শী সন্তানদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা রিমান্ডের আসামির

রাজধানীর কল্যাণপুরে গৃহবধূ শাম্মী হত্যা মামলা

সাখাওয়াত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দুই শিশু সন্তানের সামনে স্বামীর হাতে নির্মমভাবে গৃহবধূ শামিমা লাইলা আরজুমান্না খান শাম্মী খুনের ঘটনায় জড়িতরা বহাল তবিয়তে। রাজধানীর মিরপুর মডেল থানা পুলিশ ঘাতক স্বামী আলমগীর হোসেন টিটুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কিন্তু দীর্ঘ ৫ মাস ২০ দিনেও জড়িত অন্যান্যরা ধরাছোয়ার বাইরে। রিমান্ডে থেকে আলমগীর অন্যান্য আসামীদের সহযোগিতায় প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিশু সন্তানকে নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদি নিহতের ভাই ফরহাদ হোসেনের। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজধানীর মিরপুর মডেল থানার এসআই মো. নওশের আলী গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আলমগীর হোসেন টিটু তার স্ত্রী শাম্মীকে যে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এ বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে সে (আলমগীর) বেশ চতুর। নানা ভাবে হত্যার কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। এক প্রশ্নের জবাবে এসআই মো. নওশের আলী বলেন, এটি আত্মহত্যা হওয়ার সুযোগ নেই। কারন নিহতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে। অপরাধী যত কৌশলেই গ্রহন করুর তাকে ছাড় দেয়া হবে না। এ হত্যাকান্ডের জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতার করা হবে বলে তিনি জানান। মা শাম্মী হত্যার ঘটনায় পাঁচ বছরের শিশু আরিয়ান জানান, আমার বাবা অন্য বাসার এক কাজের মহিলাকে বিয়ে করেন। ঘটনার দিন মায়ের গলায় দড়ি দিয়ে বাবা তাকে মেরে ফেলে। এরপর ফ্যানে ঝোলায়। মাকে খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে। গত ৮ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নুর নবীর কাছে শিশু আরিয়ান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। গত ৭ জুন রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে ভাড়া বাসায় একটি বায়িং হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন টিটু তার স্ত্রী শামিমা লাইলা আরজুমান্না খান শাম্মীকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করে। পরে চিকিৎসার নামে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর ছোট ভাই মো. ফরহাদ হোসেন খান বাবু বাদী হয়ে ৮ জুন মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ ঘাতক স্বামী আলমগীর ও তার তৃতীয় স্ত্রী ইসরাত জাহান মুক্তাকে গ্রেফতার করে। মামলার বাদী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, মামলাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছে জড়িতরা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নওশের আলী প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ঘাতক আসামির পক্ষে ভূমিকা রাখছেন। তিনি জানান, এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই শিশু আরিয়ান ও তার ছোট ভাই দেড় বছরের অ্যারনের জীবন বাঁচাতে তাদের ঢাকা থেকে নানার বাড়ি ময়মনসিংহে নিয়ে যান। বাদী মো. ফরহাদের অভিযোগ, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অনেক চাপাচাপি করার পরও তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী শিশু আরিয়ান ও গাড়ির ড্রাইভারকে সাক্ষী হিসেবে থানা কিংবা আদালতে জবানবন্দি নিতে অনীহা প্রকাশ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে আদালতে আবেদন করলে ৮ আগস্ট আরিয়ানের জবানবন্দি নেয়া হয়। পরে আদালত ঘটনার পরোক্ষ সাক্ষী ড্রাইভার মো. কামাল হোসেনেরও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার আদেশ দেন। কিন্তু সাক্ষী হিসেবে ড্রাইভারের জবানবন্দি নেয়ার প্রয়োজন নেই বলে বাদী পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীকে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। মামলার বাদী মো. ফরহাদ জানান, এসব কারণে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় তিনি মামলাটি র‌্যাব কিংবা পিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া তার আশঙ্কা, মামলার আসামি ভগ্নিপতি মো. আলমগীর হোসেন টিটু জামিনে মুক্তি পেয়ে ঘটনার সাক্ষী শিশুপুত্র আরিয়ানকে গুম করতে পারেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ