Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিঠিপত্র

| প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টাকাই যেন শিক্ষার্থীদের মূল শক্তি

একজন মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থী মানে একটি দেশের সম্পদ। আর একজন শিক্ষার্থীর মূল শক্তি হচ্ছে তার মেধা। তবে আজ আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এই কথা গুলো নিখাদ রসাত্মক। কারণ আজ আমাদের দেশের কিছুতেই মেধা দিয়ে বিচার হয় না, বিচার হয় করা হয় টাকা দিয়ে। যার টাকা আছে তার কাছে মেধাও আছে। এখন মেধা মানেই টাকা আর টাকা মানেই মেধা। এখন মেধাহীন শিক্ষার্থীরাও একটু চেষ্টা করলেই টাকা দিয়ে মেধা কিনে নিতে পারছে। আর প্রকৃত মেধা থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা তাদের প্রাপ্য স্থান বা মান পাচ্ছে না। কারণ এখন একজন শিক্ষার্থীর মেধাও টাকার কাছে হেরে যায়। একজন শিক্ষার্থী যদি টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে পরিক্ষা দিতে পারে তখন অন্য শিক্ষার্থী তার মেধা খাটিয়ে আর কি বা পরিক্ষা দিবে। মেধাতে নয়, টাকাতেই এখন শিক্ষার্থীদের মূল শক্তি। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ণ করার সাথে সাথে তাদের টাকার মূল্যায়ণও বেশ ভালো ভাবে হচ্ছে। যার প্রমাণ আমরা নিজেরাই প্রতিদিন দেখছি। যে শিক্ষার্থীর মেধা রয়েছে সে সিট পাচ্ছে কি পাচ্ছেনা তা না জানলেও তবে যে শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে কন্ট্রাক করেছে তাদের সিট কিন্তু বুকিং হয়ে গেছে। তাদের টাকার কাছে অন্য শিক্ষার্থীর মেধা বেচাকেনা হয় এভাবেই। সত্যি বলতে টাকার কাছে আজ আমরা সব কিছুই বিলিয়ে দিয়েছি, কারণ আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় নেশা হচ্ছে লোভ। এই নেশার কাছে আমরা অনেকেই হেরে যাই। বর্তমানে কিছুতেই মেধার বিচার হয়না, বিচার হয় টাকাতে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, এমনকি সরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রেও একজন মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীর চাইতে টাকা ওয়ালা শিক্ষার্থীর প্রাধান্য বেশী দেয়া হয়। মেধা নির্বাচনে সত্যিকারের মেধা সম্পন্ন ব্যাক্তিরাই সবসময় পিছনে পড়ে থাকে, আর সত্যিকারের টাকার শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ বেশী হয়ে থাকে। আজকাল টাকা দিয়ে সবকিছুই বেচাকেনা হয়ে থাকে। টাকা থাকলেই হয় মেধার প্রয়োজন নেই বলেই চলে। যদি মেধার প্রয়োজন হতো তবে বন্ধ হতো প্রশ্ন ফাস, বন্ধ হতো পরিক্ষায় জালিয়াতি, বন্ধ হতো পরিক্ষার কেন্দ্রে নকল করা, বন্ধ হতো টাকার মধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধা বেচাকেনা। কিন্ত আজ আমাদের দেশে এটাই দেখতে হচ্ছে। আর দেখতে হচ্ছে এর বিরোদ্ধে প্রশাসন এর নড়বড়ে অবস্থান। প্রশাসন শুধু আশ্বাস দিতে জানে তবে বাস্তবে এর কঠিন বিচার করতে পারছেনা। প্রশাসনের সঠিক নজনদারী এবং আইন প্রয়োগ করা হলে হয়তো আজ এই অপরাধের নমুনা কিছুটা কমতো। দু একজনকে আইনের আওতায় আনলেও, আইনের পিছনে আরো অনেক শিক্ষার্থী লোক চক্ষুর অন্তরালে ফাকি দিয়ে এই ধরনের নোংরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই অপরাধ মুখ বুঝে সহ্য করছে দেশের সকল শিক্ষার্থী। তবে কি এভাবেই চলতে থাকবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা? প্রশ্নটা হয়তো আমার মতো লাখ শিক্ষার্থীর কাছে রয়ে গেল। আজকাল মেধা দিয়েও ভালো চাকরি জোটে না মেধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের। কারণ ভালো চাকরির জন্য প্রয়োজন টাকা। যাদের কাছে টাকা আছে তাদের মেধার প্রয়োজন হয়না। মেধা ছাড়াই ভালো ভালো চাকরি তাদের নাগালে, কারণ তাদের মূল হাতিয়ার টাকা। আর চাকরিতো তারাই কিনছে যাদের কাছে চাকরি পাওয়ার মতো নূন্যতম মেধাও নাই। তবুও টাকা দিয়ে চাকুরি কিনতে পারছে। ভাবতেই কেমন জানি অবাক লাগে। আর অবাক লাগবেনাই বা কেনো, কারণ তারাই নাকি দেশের বড় বড় স্থানে চাকুরি করবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাদেরকেই ব্যবহার করা হবে, অথচ যাদের চাকরিটাই হচ্ছে টাকায় কেনা। হয়তো সকলের চাকরি টাকায় কেনা না, তবে আমাদের ভেতরেই রয়েছে টাকায় কেনা চাকরি করছে। এভাবে একদিন আমাদের দেশে তাদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। আর সঠিক মেধা সম্পন্ন ব্যাক্তির সংখ্যা কমে যাবে। আর আমাদের দেশ পৌছে যাবে অনেক অনেক পেছনে। আমরা বিষয়টাকে যতটা সহজভাবে নিচ্ছি আসলে কি বিষয়টা ততটা সহজ? আমরা যদি একবার দেশ এবং দেশের মানুষের কথা ভেবে গভির ভাবে চিন্তা করি তবে আমরা এর সঠিক সমাধান ঠিকি বের করতে পারবো।
আজহার মাহমুদ,
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন