Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

চট্টগ্রামে দুর্ভোগে নিম্ন-মধ্যবিত্ত

| প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে কষ্টে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের। চালসহ নিত্য পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা নিন্ম ও মধ্যবিত্তরা। ফের বিদ্যুতের দাম বাড়ায় মূল্যবৃদ্ধির আতঙ্কে আছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন গ্যাস ও পানির মূল্যবৃদ্ধির পর বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর তাতে মানুষের জীবযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে। দুর্ভোগ বাড়বে স্বল্প আয়ের মানুষের।
সরকার চলতি বছরে দুই দফা গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পাওয়া না গেলেও মাস শেষে মোটা অংকের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি প্রকল্প চালু হওয়ার পর নগরীতে পানি সরবরাহ কিছুটা বাড়তেই বাড়ির মালিকেরা ভাড়া ভাড়িয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নতুন নিয়মে গৃহকর আদায়ের ঘোষণা দিতেই ফের বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দুই দফা বেড়েছে গণপরিবহন ভাড়া। চাল, পিঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দামের উর্ধগতি থেমে নেই। চারিদিকে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এই মহানগরী দিনে দিনে ব্যয়বহুল নগরীতে পরিনত হচ্ছে। এতে নিদারুন কষ্টে পড়েছে সীমিত আয়ের লোকজন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীর জনসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। যাদের বিশাল অংশ নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত। এখানকার মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ দরিদ্র। অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। যা আয় করছেন তার পুরোটাই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে পরিবারের ভরন পোষন ও সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে। তাদের সঞ্চয় বলে আর কিছুই থাকছে না। দিনে দিনে সবকিছু দাম বাড়ছে কিন্তু সেই অনুপাতে মানুষের আয় বাড়ছে না। অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের অভাবে নতুন বিনিয়োগ নেই। বিদ্যমান কলকারখানাগুলোর একটি অংশ বিশেষ করে তৈরী পোশাক খাতের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকোচিত হয়ে পড়ছে।
এ অবস্থায় ফের বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে জনদুর্ভোগ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আবার বাড়িয়েছে সরকার। এর ফলে প্রতি মাসে বাড়তি টাকা গুণতে হবে ভোক্তাদের। এই দফায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। নতুন এ হার আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। নতুন হারে আবাসিকে মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ১৫ টাকা, ১৫০ ইউনিটে ৪৮ টাকা, ২৫০ ইউনিট পর্যন্ত ৯০ টাকা, ৪৫০ ইউনিট পর্যন্ত ১৯৬ টাকা এবং ১০০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়বে ৬০৪ টাকা। নয় বছর আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর এ পর্যন্ত আট বার বাড়ানো হল বিদ্যুতের দাম।
চট্টগ্রামে এখনও বিদ্যুৎ সংকট চলছে। রাতে দিনে সমানে লোডশেডিং করা হচ্ছে। গ্যাস নির্ভর সকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাসের পর মাস অলস বসে আছে। এতে করে বিদ্যুৎ সংকট আরও চরমে উঠেছে। বিদ্যুতের ভূতুরে বিলে দিশেহারা গ্রাহকেরা। মিটার রিডিং না দেখেই তৈরী করা বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রাহকদের। এতে বিদ্যুত ব্যবহার না করেও অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে। এনিয়েও গ্রাহকদের মধ্যে নানা অসন্তোষ আছে। ভূতুড়ে বিলের যন্ত্রণা থেকে গ্রাহকদের মুক্তি দিতে প্রি-পেইড কার্ড সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা চলছে ধীরগতিতে। মাত্র লাখ খানেক গ্রাহককে এই নতুন পদ্ধতিতে আনা গেছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে এ প্রকল্প দ্রæত বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। গত ২৬ মে চট্টগ্রামে পিডিবি কর্মকর্তাদের এক সভায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শম্বুকগতিতে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করার কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি গত তিন বছরে আপনাদের অনেকবার বলেছি। কিন্তু প্রি-পেইড মিটার লাগাতে আপনাদের অনিচ্ছা। তিন বছরে লাগালেন এক লাখ। অথচ গ্রাহক আছে সাত লাখ। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে আমি সাত লাখ প্রি-পেইড মিটার দেখতে চাই।’ জানা গেছে মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরও কাজের গতি আসেনি। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের যন্ত্রণা থেকেও গ্রাহকদের রেহাই মিলেনি। তার উপর ফের বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় গ্রাহকেরা ক্ষুদ্ধ।
বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে জানিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর এম. সিকান্দর খান বলেছেন এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে আরও কিছু পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। এমনিতেই সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। তার উপর বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধি মানুষের সে দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে দেবে। তিনি বলেন বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধির পক্ষে সরকার যুক্তি দিয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু র্দ্বূলতার কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে নিতে দাম বাড়ানো হয়েছে। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারের উচিত দূর্বলতা চিহ্নিত করে তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া। তা না করে গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া সঠিক হয়নি। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে জ্বালানির দাম কমানোর কথা সেখানে সরকার তা বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্যাসের দামও দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ফের বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। ক্যাবের সাথে বৈঠকে আমাদের দাবির মুখে জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুতের দাম কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এরফলে আরও একদফা নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশপাশি নগরীতে বাসা ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সিটি কর্পোরেশন গৃহকর বাড়িয়ে দেওয়ায় আরও একদফা বাড়ি ভাড়া বাড়ছে। এতে করে সাধারণ মানুষ চরম সংকটে পড়বে।
তিনি বলেন, কোনখাতেই সুশাসন আর জবাবদিহিতা নেই, নাগরিক হিসাবে মানুষ নূন্যতম পরিসেবা পাচ্ছে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবখাতই ব্যয়বহুল। এই দুটি খাতে সরকারী সুবিধা অপ্রতূল। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে দ্রæত। কিন্তু সে অনুপাতে মানুষের আয় বাড়ছে না। বাড়ছে না কর্মসংস্থানও। গ্যাস, বিদ্যুৎ আর পানি সংকটের মধ্যেই দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে ভোক্তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ