Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন বছরের শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ভাতা পাবেন -প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:০৭ পিএম | আপডেট : ৬:২২ পিএম, ২১ নভেম্বর, ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার আগামী জানুয়ারি মাস থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে ভাতা প্রদান করবে। তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (তৎকালীন ইপিআর) সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের ভাতা প্রদান করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০১৭’ উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা/উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারা সে সময় বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন বলে সে সময়ে তাদের ভাতা প্রদান করা হয়নি। তারা প্রায় সকলেই এখন অবসরে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও সমস্যায় রয়েছেন, আমরা এদের সকলকেই আগামী জানুয়ারি থেকে ভাতা প্রদান করবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দিবসে তিনি এখানে এলেই প্রতিবছর এই দাবি উঠতো। কাজেই আমরা এটি (ভাতা) প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদেরকে আমরা মর্যাদা দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার ফলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রেখে আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন।
জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের অবদানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে তার সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ ৯০০/- টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ১০,০০০/- টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ভাতা ভোগীর সংখ্যা এক লাখ থেকে বাড়িয়ে দুই লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে যথাক্রমে বীরশ্রেষ্ঠদের জন্য ৩০,০০০ টাকা, বীর উত্তমদের জন্য ২৫,০০০ টাকা, বীর বিক্রমদের জন্য ২০,০০০ টাকা এবং বীর প্রতীকদের জন্য ১৫,০০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন শ্রেণীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাগণকে শিক্ষা ভাতা, কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে বিবাহ ভাতা, উৎসব ভাতা, দেশে বিদেশে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতিটি জেলায় ভবন নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে ৪৯টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন এবং হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৩ থেকে মোট ১,০৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৭০টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ইতোমধ্যে ২৫১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভূতপূর্ব অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী মহান সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকলকে শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অকুতোভয় সদস্য এবং আপামর জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বরের শুরুতে যুক্ত হয় ভারতীয় মিত্র বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী, বাংলার মুক্তিপাগল জনতা ও মিত্র বাহিনীর একযোগে শত্রুকে আক্রমণ আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত হয়। আমরা অর্জন করি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সুমহান দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর উপর ন্যস্ত। এ পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বশীল অংশগ্রহণ বজায় রাখছে। আমি এজন্য সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সব ধরনের কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, আজ দেশের সকলবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে এবং বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা আজ বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছি। আমরা সেই সক্ষমতা এবং সামর্থ্য অর্জন করেছি এবং আমাদেরকে তা ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঙালি জাতি বিজয়ী জাতি এবং এ জাতি কখনও মাথা নত করে থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার এই গৌরবকে আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর। কিন্তু, হারানো গৌরব আমরা আবার ফিরিয়ে এনেছি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার লক্ষই ছিল দেশের জনগণকে দারিদ্রের কষাঘাত থেকে মুক্ত করা। মানুষ উন্নত জীবন পাবে, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবে, শিক্ষা পাবে এবং তারা মাথা উঁচু করে চলবে।
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বহুকষ্টে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। আমরা এটা কখনও হতে দেব না। জাতি মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে এবং আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলবো যে স্বপ্ন একদিন জাতির পিতা দেখেছিলেন।
বক্তব্যের শেষ প্রান্তে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে এটাই প্রমাণ হয়েছে যে, ইতিহাসকে কখনও মুছে ফেলা যায়না এবং ইতিহাস তার স্থান একদিন ঠিকই করে নেবে। এটা এখন প্রমাণিত। ওই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে জাতির পিতা বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঙালি জাতি ওই ভাষণের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রকার দিক নির্দেশনা পেয়েছিল। অথচ এটা কোন লিখিত ভাষণ ছিল না, ছিল উপস্থিত বক্তৃতা। তিনি বলেন, জাতির পিতা তার ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং গেরিলা যুদ্ধের চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্ষমতা লিপ্সুরা ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র করে এবং জাতির পিতার নামও তার সকল অর্জনকে মুছে ফেলে দিতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। কাজেই যারা ১৯৭৫ এর পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে পতিত হয়েছে। তারা কূপমণ্ডূকতায় ভুগেছে। তারা দেশের স্বাধীনতাকে ধূলিসাৎ করে সমগ্র দেশকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে সম্মানী চেক এবং মোবাইল ট্যাবসহ বিভিন্ন উপহার ৭ বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার এবং মুক্তিযুদ্ধে সম্মাননা পদকপ্রাপ্তদের মাঝে বিতরণ করেন। এছাড়া ‘শান্তিকালীন’ পদক ২০১৬ বিজয়ী ১২ জন এবং ‘অসামান্য সেবা’ পদক বিজয়ী ১৪ জনসহ সশস্ত্র বাহিনীর ২৬ জন সদস্যের মাঝে অনুষ্ঠানে তিনি পদক বিতরণ করেন।



 

Show all comments
  • SHAUKAUT ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:১৬ পিএম says : 1
    er jonnei prodhan montrike bolbo jatike ekta shunirdistho pothe ogroshor korar jonno jatir pitar name shara desher prottek shojorer maze ekti kore plaza toiri kore deaa jar madddhome jati dik nirdeshona pabe emonki jati shadhinotar gourob vhodh korbe er moddho theke tajolei amra unnoto jatider moto banglawo ogroshor jote parbe dhonnobad.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ