Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেকারত্বের অভিশাপ

মো. তোফাজ্জল বিন আমীন | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশে বেকারের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কটা অনেক পুরনো। এবারের বিতর্কটা উস্কে দিয়েছে খোদ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো- বিবিএস। বিবিএস’র হিসাবে বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ। যদিও দেশে বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখ। ২০১৩ সালের জরিপেও বেকারের সংখ্যা একই ছিল। দেশের প্রতিথযশা অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জরিপের এই ফলাফল মেনে নিতে পারেননি। তারা বলছেন, এই জরিপ আসলে জনগণের সাথে ধোঁকার শামিল। শুধু তা-ই নয়, বিবিএস দাবি করেছে, গত দেড় বছরে দেশে নাকি ১৪ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। অর্থাৎ সরকার ১৪ লাখ বেকারের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নরসহ বিশিষ্টি অর্থনীতিবিদরা বিবিএস’র পরিসংখ্যানকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর হিসিবে অভিহিত করেছেন। তারা বলেছেন, যেখানে দেশে একটি পিয়ন পদে চাকরির জন্য কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়ে, সেখানে মাত্র ২৬ লাখ বেকারের তথ্যটা ভিত্তিহীন এবং মানুষকে বোকা বানানোর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, ভারতে সম্প্রতি চতুর্থ শ্রেণির গ্রেডে ৬ হাজার পদের বিপরীতে ২৫ লাখ আবেদন পড়েছিল। আর ভারতের মতো দেশে এ অবস্থা হলে বাংলাদেশের অবস্থা তো আরও করুণ। সেখানে মাত্র ২৬ লাখ বেকার কীভাবে হয়। তারা আরো বলেন, এ বিষয়ে বাস্তব চিত্র পেতে বেশি দূর যাওয়া লাগবে না। একটি গ্রাম ঘুরে জরিপ করলেই জানা যাবে কতজন দক্ষ ও অদক্ষ বেকার বসে আছে। সময়মতো কাজ কিংবা চাকরি না পেয়ে অনেক শিক্ষিত বেকার হতাশায় নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। এছাড়া অর্ধশিক্ষিত ও শিক্ষিত, দক্ষ-অদক্ষ বেকার তো প্রতি বাড়িতেই কমপক্ষে ২/১ জন পাওয়া যাবে। সরকার চায় না, জনগণ প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানার সুযোগ পাক। কারণ তাহলে সরকারের ব্যর্থতার চিত্রটা জাতির সামনে উন্মোচন হয়ে যাবে।
ক্ষমতাসীনরা তো বলেন দেশে যত উন্নয়ন হয়েছে তার সিংহভাগই এই সরকারের আমলে হয়েছে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম উন্নয়নের পেছনে আওয়ামী সরকারের ভূমিকা বেশি। আলাদিনের চেরাগের মতো হঠাৎ করে একটি দেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রতে পরিণত হয়নি। উন্নয়নের সবটুকু ফসল যদি সরকারেই হয় তাহলে বেকারত্বের দায়টাও সরকারকে নিতে হবে। উন্নয়নের মাপকাঠি পরিমাপ করার জন্যে দাঁড়িপাল্লার প্রয়োজন নেই। দেশের সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করলেই উত্তরটা পাওয়া যাবে। কালভার্ট আর ফ্লাইওভার নির্মাণ করলেই যদি দেশ উন্নত হতো তাহলে তো বেকারের সংখ্যা কমে যেত। সরকারের আজ্ঞাবহরা যতই উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে হাততালি দিক আর চটকদার কথা বলুক যদি বেকারত্বের অবসান করতে না পারে তাহলে এ উন্নয়নের কোন মানে হয় না। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্টের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, বর্তমানে বালাদেশে ৪৭ শতাংশ ¯œাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী বেকার। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এ হিসাবে ২ কোটির উপর লোক বেকার। বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কি না সে বিষয়টি অনুধান করার জন্য পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। সে সম্পর্কে সহজে ধারণা পাওয়ার জন্য বিনিয়োগের দিকে দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে। সরকার বলছে বিনিয়োগ বাড়ছে। অথচ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মারাত্মক স্থবিরতা চলছে। দেশি পুঁজিপতি বা শিল্প মালিকরা কোনো কারখানায় বিনিয়োগ করার পরিবর্তে বিদেশে টাকা পাচার করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে বিদেশিরাও বিনিয়োগ করতে আসছে না। তারা বাংলাদেশের জন্য নিয়ে আসা অর্থ দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে বা এশিয়ার অন্য কোনো দেশে শিল্প কারখানা গড়ে তুলছেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি এম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠিত সত্য হল বিনিয়োগ বাড়েনি। উন্নয়নের একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে, কর্মসংস্থান। আর এই কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন দেশে শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি। বিগত বছরগুলোতে দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে যে লুটপাট আর বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আমরা শুধু উন্নয়ন চাই না, উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তিও চাই।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন