ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
বৃক্ষ, লতাগুল্ম, গাছগাছালি ভূ-প্রকৃতির অলংকার, মহান আল্লাহর অপার রহমত। আমাদের জীবন ধারণের জন্য অক্সিজেন দেয় বৃক্ষ। ঔষধী বৃক্ষ মানুষের জীবন রক্ষায় ঔষধ-পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা করে বৃক্ষ। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশেও বৃক্ষরাজির গুরুত্ব অপরিসীম। একটি দেশের মোট আয়তনের আনুমানিক ত্রিশভাগ ভূমিতে বৃক্ষরাজি থাকা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়াতে বৃক্ষরাজির বেড়ে উঠা সহজতর। কিন্তু বৃক্ষঘাতকরা বৃক্ষরোপণ-লালনের চাইতে কর্তনেই অতি উৎসাহী। বনরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কতিপয় অসাধু বনকর্মকর্তা বনদস্যুদের সঙ্গে অশুভ আঁতাত করে বাংলাদেশের বনজসম্পদ উজাড় করছে। দেশীয় বনভূমির পরিমাণ ত্রিশ শতাংশ থাকা তো দূরের কথা, ১০ শতাংশও নেই।
দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ, পরিচর্যা ও লালনের চিত্রটি মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয়। বর্ষাকালে জাতীয় পর্যায় থেকে জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত উৎসবাকারেই বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৃক্ষমেলায় নানান প্রজাতির বৃক্ষরাজির সঙ্গে বর্তমান প্রজন্ম পরিচিত হয়। চারাও বিক্রি হয় প্রচুর। বৃক্ষমেলা শেষে এর আবেদন শেষ হয়ে যায়। ফলতঃ স্বল্পমেয়াদী বৃক্ষমেলা ও প্রদর্শনী বৃক্ষর্চ্চায় ইতিবাচাক অবদান রাখতে পারে না। আমাদের ব্যাক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষরোপণকে দিবস ভিত্তিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে, সাংবাৎসরিক কার্যক্রমে রূপান্তরিত করতে হবে। নতুবা বৃক্ষনিধন বৃক্ষলালন কার্যক্রমের চাইতে অধিক হয়ে যাবে। জাতীয়ভাবে বৃক্ষ ও প্রকৃতি প্রেমীদের সংখ্যাও হাতে গোনা দু’চারজন মাত্র। তাদের মধ্যে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা সম্প্রতি লোকান্তরিত হয়েছেন। গণমুখী উন্নয়ন কর্মী, মাটি ও মানুষের বন্ধু শাইখ সিরাজ একজনই প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের প্রধান মুকিত মজুমদার বাবুও একজনই। তরুলতা, বৃক্ষবিষয়ক আন্দোলন রাজধানী ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, সিলেট অঞ্চলে পাহাড়-পর্বত-বৃক্ষরাজি থাকলেও মফস্বলে বৃক্ষ পরিচর্যার আন্দোলন বেগবান হয়নি। সিলেট অঞ্চলে প্রকৃতি ও নিসর্গপ্রেমী সাংবাদিক-কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী তার উদ্যোগে দীর্ঘদিন যাবত বৃক্ষরোপণ করে তাঁর প্রিয় ভুবনকে সবুজাভ করে তুলেছেন। তার স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন। পাক আমলের প্রথম ভাগে ঐতিহ্যবাহী জেলা হবিগঞ্জের এক খান্দানী ও অভিজাভ পরিবারের সন্তান সৈয়দ আবরু শুভ বিবাহের পরদিনই ঘর-সংসার ছেড়ে আল্লাহর নামে ফানাফিল্লাহ হয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলেন অজানার পথে। এসেছিলেন শ্রীমঙ্গলে। এই গৃহহীন ফকির আজীবন রাস্তাঘাটে বৃক্ষরোপণ করে গেছেন। তিনি এখন সিরাজনগরে চির শয়ানে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে তিনি গাছপীর হুজুর নামে খ্যাত।
বাংলাদেশের মাটি উর্বর। আবহাওয়াও অনুকূলে। এ কারণে বৃক্ষরোপণ, পরিচর্যা ও লালনের প্রকৃত পরিবেশ বিদ্যমান। বৃক্ষরোপণ সুন্নত। ছদকায়ে জারিয়া। গাছ মানুষের বন্ধু। জীবনে-মরণে প্রয়োজনীয়। ছেলে মাস্তান-নেশাখোর হতে পারে, বৃদ্ধ পিতা মাতাকে ওল্ডহোমে পাঠাতে পারে, ভরন-পোষণ না দিতে পারে, ঐশীর মতো খুনীও হতে পারে, কন্যা সন্তান পিতা-মাতাকে পরিত্যাগ করে প্রেমিকের হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে চলে যেতে পারে কিন্তু বৃক্ষ প্রতারণা করে না, সময় মতো ফুল দেয়, ফল দেয়, সবুজাভ করে আমাদের বিবর্ণ পৃথিবী, বর্ণহীন ভালোবাসাকে।
লেখক: অ্যাডভোকেট, হাইকোর্ট এবং সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।