Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ রবীন্দ্রনাথের ছোট্ট গল্পের মতোই

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আরো একটি ইতিহাসের সাক্ষী হলো। বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলো বঙ্গবন্ধুর গড়া বাংলাদেশের মানুষ শুধু নিতেই জানেন না; দিতেও জানে। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর যে ভাষণের কারণে উদ্যানটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ; গত মাসে সেই ভাষণ বৈশ্বিক স্বীকৃতি ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করেছে ইউনেস্কো।
বিভিন্ন দেশের ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি-প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্বের সম্পদ ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’। এত বড় স্বীকৃতির জন্যই ইউনেস্কোকে অভিনন্দন জানাতে ওই উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী-শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক-অধ্যাপকরা আয়োজক হলেও সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। না সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটা কোনো দলীয় সমাবেশ ছিল না। কয়েকদিন আগে বিএনপির এই মাঠে মহাসমাবেশ করেছে। সে কারণে অনেকেই মনে করতেন আওয়ামী লীগ পাল্টা মহাসমাবেশ করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগেই দেশবাসীকে জানিয়ে দেন এটা মূলত নাগরিক সমাজের সমাবেশ। অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন মাত্র। বাস্তবেও দেখা গেল তাই। তারপরও কথা থেকে যায়। নাগরিক সমাবেশ হলেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ভাষণ দেবেন; সেখানে দিকনির্দেশনামূলক রাজনৈতিক বক্তব্য না থেকে পারেই না। দেশবাসী সেই প্রত্যাশাই করেছিল।
নির্বাচন কমিশন রোডম্যান ঘোষণার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিভিন্ন জেলা সফর করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন এবং আগামীতে আবার নৌকায় ভোট দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আবার ঐতিহাসিক ওই মাঠে এক সপ্তাহ আগে বেগম খালেদা জিয়া সমাবেশ করে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। মানুষের প্রত্যাশা ছিল নাগরিক সমাবেশ হলেও শেখ হাসিনা ভাষণে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরবেন।
অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশের বাস্তবতা তাই বলে। ১০ বছর আগে দুই শীর্ষনেত্রীকে যখন বন্দী করা হয়; দেশের মানুষের চাপেই ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সরকার তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে। দুই শীর্ষ নেত্রীকে নিয়েই মানুষ স্বপ্ন দেখেন আবার অতাশায় ভোগেন। দুই নেত্রীর ভালোমন্দের সঙ্গে দেশের মানুষের ভাগ্য নির্ভরশীল। দুই শীর্ষ নেত্রীর প্রতি দেশের মানুষ এতোই নির্ভরশীল যে একজন কোনো কথা বললে অন্যজন তা নিয়ে কি বক্তব্য দেন সেটা জানার জন্য মানুষ মুখিয়ে থাকেন। শুধু দেশের মানুষই নয়, ঢাকায় কর্মরত বিদেশি ক‚টনীতিক এবং দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরাও মুখিয়ে থাকেন দুই শীর্ষ নেত্রীর কথার পিঠে কথা এবং মনোভাব বোঝার জন্য। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে বেগম জিয়া বক্তব্য দিয়েছেন দেশবাসী তা শুনেছেন। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন মানুষ তা শুনেছে। কিন্তু ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনি দেশের রাজনীতি-নির্বাচন নিয়ে কি বার্তা দেন তা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিল উপস্থিত দর্শক শ্রোতা এবং দেশের কোটি কোটি মানুষ। সে কারণেই শেখ হাসিনা যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যাণের মঞ্চে হাজির হন তখন উপস্থিত জনতা তুমুল করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানায়।
নাগরিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই তৎপর্যপূর্ণ এবং প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পঁচাত্তরের ট্রাজেডির পর বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার শত চেষ্টা হলেও ইতিহাসে যার নাম অক্ষয়, তা মুছে ফেলা যায়নি। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচারে বাধা দেয়া হয়েছে। ভাষণ প্রচারে যত বাধা এসেছে, তত তা জাগ্রত হয়েছে। মানুষ ভাষণ প্রচারের জন্য জীবন পর্যন্ত দিয়েছে’। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বালক খোকা শেখড়ে রাজনীতি শুরু করে শিখরে উঠে এসে বঙ্গবন্ধু হয়েছেন, জাতির পিতার মর্যাদা পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পরতে পরতে অর্থাৎ ’৫২ ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ’৬৯ গণঅভ্যত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয় ইত্যাদিতে নেপথ্যে থেকে যিনি অবদান রেখেছেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতি, বিভিন্ন সময় দলটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এত অর্জনের নেপথ্যে ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অবদানের কথা মানুষ জানতে পারল। সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও পর্দার আড়াল থেকেও যে ‘রাজনীতির যাদুকর’ হওয়া যায় সেটা দর্শকরা জানতে পারলেন প্রধানমন্ত্রীর কথায়। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশা ছিল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ হাসিনা আগামী দিনের দেশজ রাজনীতি, গণতন্ত্র, নির্বাচন, বৈশ্বিক রাজনীতি ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে দিক-নিদের্শনামূলক বক্তৃতা করবেন। কিন্তু যারা এই প্রত্যাশা করেছিলেন তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট্ট গল্পের মতোই- শেষ হয়েও হইলো না শেষ। দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেক কিছু জানতে পারলেন। তারপরও কিছু একটা যেন রয়ে গেল অজানাই।

 



 

Show all comments
  • তুষার ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:১৬ এএম says : 1
    ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাই, তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সাজিদ ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:১৮ এএম says : 1
    খুব ভালো বিশ্লেষণধর্মী একটি লেখা লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আনোয়ার আলী ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২০ এএম says : 1
    এ ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণ।
    Total Reply(0) Reply
  • খোরশেদ ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২১ এএম says : 0
    অরাজনৈতিক বলা হলেও এটা কী পুরোপুরি অরাজনৈতিক সমাবেশ ছিলো ?
    Total Reply(0) Reply
  • জুয়েল ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২২ এএম says : 0
    পরে আবার কোন এক সময় বাকী কথাগুলো হয়ত বলবেন
    Total Reply(0) Reply
  • টয়া ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৩ এএম says : 1
    এই সমাবেশকে নিয়ে একটি ব্যতিক্রমধর্মী লেখা। আমার ভালোই লেগেছে
    Total Reply(0) Reply
  • মিলন ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২৪ এএম says : 0
    শেষ হলে তো শেষই। তাই কিছু বাকি থাকা ভালো
    Total Reply(0) Reply
  • saif ১৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:২৬ পিএম says : 0
    জয় য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য় বাংলা, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু পরবাশে সেটা আর সম্ভব হয় না। বর্তমান কোন দলকে সমর্থন করিনা, তবে বঙ্গ বন্ধু কে ভালোবাসি কেননা আমি আমার দেশ কে ভালো বাসি, জয় বাংলা, বঙ্গ বন্দু আর বাংলাদেশ একই সুতোয় গাথা। আল্লাহ্‌ আমাদের দেশের প্রতি রহম করুন এবং রক্ষা করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ