Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধান কাটা শুরু

ফলন ভালো কিছু এলাকায় চিটা নিয়ে দুশ্চিন্তা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 চট্টগ্রাম অঞ্চলে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা। ফলনও খুব ভালো। এতে বেজায় খুশি কৃষক। তবে চট্টগ্রাম জেলার অনেক এলাকায় ধানের সাথে চিটার পরিমাণ বেশি বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ধানের শীষে ধানের চেয়ে চিটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে কিছুটা দুশ্চিন্তাও আছে। এরমধ্যে সাগরে নিম্নচাপের ফলে আবহাওয়া ফের বৈরি হয়ে উঠেছে। নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম অঞ্চল অতিক্রম করলে ঝড়ো হাওয়ায় পাকা ধানের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া যেসব এলাকায় ধানে এখনও ফুল রয়েছে সেখানে ক্ষতির আশঙ্কাও করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। 

এবার রের্কড বৃষ্টিপাত, পাহাড়ী ঢল ও বন্যা হয়েছে। কাপ্তাই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ায় চট্টগ্রামের শস্যভাÐার হিসেবে পরিচিত গুমাই বিলসহ উত্তর চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় টানা পানিবদ্ধতা হয়। তাতে কয়েক দফায় রোপা আমন বিনষ্ট হয়েছে। বিনষ্ট হয়েছে বীজতলাও। তবুও দমে যায়নি কৃষক। নতুন বীজতলা তৈরী হয়েছে। অনেক এলাকায় দ্বিতীয়বারের মতো আবাদ হয়েছে। সেই কষ্টের সুফল পেতে শুরু করেছেন প্রান্তিক চাষীরা। আদিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে সোনালী ধানের হাসি। কষ্টার্জিত সেই ফসলের হাসিতে হাসছেন কৃষাণ-কৃষাণী।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের ৫ জেলায় ১৩ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে শুরু হয় আমন ধান কাটা। ফলনও খুব ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এতে কৃষকরা খুশি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমনের ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হচ্ছে। যা গতবারের তুলনায়ও বেশি। এবার হাইব্রীড ধানের ফলন মিলছে প্রতি হেক্টরে ৪.১ মেট্রিক টন (চাল)। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৫৫ মেট্রিক টন। উফশীতে প্রতি হেক্টরে ফলন মিলছে ২.৮৪ মেট্রিক টন, আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২.৪ মেট্রিক টন। স্থানীয় জাতের আমনের ফলন মিলছে ১.৫৫ মেট্রিক টন, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১.৬৮ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইনকিলাবকে বলেন, এবার আমনের ফলন খুব ভাল হচ্ছে। বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রব ছিলো না। এতে করে ফলন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আশা করছি আমন আবাদের মতো ফলনেও এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। তিনি বলেন, আমন আবাদের সময় কয়েক দফা ভারী বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় রোপা আমন ও বীজতলা নষ্ট হয়। তবে এতে কৃষকরা হতাশ না হয়ে নতুন করে বীজতলা তৈরী করেন। অনেক এলাকায় একাধিকবার আমনের আবাদ করতে হয়েছে। এতে করে আবাদের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রবও ছিলো না। ফলে ফলন অনেক ভাল হয়েছে। কৃষি বিভাগের নিবিড় তদারকি আর কৃষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমনে সুফল মিলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় ধানের সাথে বেশি পরিমাণ চিটা পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। রাঙ্গুনীয়ার গুমাই বিলের চাষি আবদুল আজিজ ইনকিলাবকে বলেন, গুমাইবিলসহ উত্তর চট্টগ্রামের অনেক এলাকায় আমনে চিটা দেখা যাচ্ছে। ধানের সাথে চিটা থাকবে এটা স্বাভাবিক তবে এবার চিটার পরিমাণ বেশি। এতে করে ফলন কম হচ্ছে, কৃষকেরাও হতাশ বলে জানান তিনি। তবে গতবারের তুলনায় এবার ধানের দাম এখনও কিছুটা বেশি বলে জানান তিনি। দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং উপকূলীয় এলাকাতেও ধানের সাথে চিটার পরিমাণ বেশি বলে জানা গেছে। কয়েক দফা রোপা আমন বিনষ্ট হওয়ার ফের বীজতলা তৈরী আমন চাষ করতে হয়েছে এইসব এলাকার চাষীদের। চিটার কারণে ফলন কমে যাওয়ায় কৃষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোঃ আমিনুল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, কিছু কিছু এলাকায় ধানের সাথে চিটা পাওয়া যাচ্ছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে খুব বেশি না। আর এই কারণে ফলন কমে যাওয়ারও কোন আশঙ্কা নেই। তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে নিম্নচাপের কারণে এই অঞ্চলের কিছু এলাকায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সে সময় যেসব এলাকায় ধানের ফুল ছিলো সেসব এলাকায় কিছু চিটা দেখা যাচ্ছে। তার পরিমাণ তেমন বেশি না। এতে ফলনে কোন প্রভাব পড়বে না। তিনি দাবি করেন এবার চট্টগ্রাম জেলার সর্বত্র আমনের আশাতিত ফলন হয়েছে। এবার সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে, ফলনেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, এবার চট্টগ্রাম অঞ্চলে রের্কড পরিমাণ ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। প্রায় সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর এই ফসল চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষকদের কাছে ধানের বড় ফসল হিসাবে পরিচিত। অনেক কৃষক পরিবার তাদের সারা বছরের চাল সংগ্রহ করে এই আমন ফসল থেকে। এই ধান আবাদে খরচ কম কিন্তু ফলন বেশি হয়। এবার আবহাওয়া পুরোপুরি অনুক‚লে ছিল। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ১৪ হাজার ১০২ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, যা মোট জমির ৮ শতাংশ। কক্সবাজারে ১৪ হাজার ৫২ হেক্টর ধান কাটা শেষ হয়েছে। এই জেলায় আমন কর্তন হয়েছে ১৮ শতাংশ। নোয়াখালীতে ২০ হাজার ২৯ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়, যা মোট জমির ২০ শতাশ। ফেনীতে ৫ হাজার ২১৭ হেক্টর ও লক্ষীপুরে ৭ হাজার ৩২২ হেক্টর জমির আমন ধান কাটা হয়েছে। ওই দুই জেলায় যথাক্রমে ৮ ও ১০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত গড়ে ৫ জেলায় ১৩ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আরও প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটার উপযোগী হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ