Inqilab Logo

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমারের সৈন্যরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জবাই করে হত্যা ও জীবন্ত পুড়িয়ে মারছে

পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর রিপোর্ট

| প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ডিজিটাল জার্নাল : মিয়ানমারের সৈন্যরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জবাই করেছে ও জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। বুধবার পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর রিপোর্টে এ কথা বলা হয়। রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আরো প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও দক্ষিণ এশিয়া ভিত্তিক ফরটিফাই রাইটস প্রণীত এ রিপোর্টে গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং এ বছরের ৫ আগস্ট থেকে সর্বসাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত বেসামরিক রোহিঙ্গাদের উপর ব্যাপক ও ধারাবাহিক হামলার দালিলিক বিবরণ রয়েছে।
‘দে ট্রায়েড টু কিল আস অল’ (তারা আমাদের সবাইকে হত্যা করতে চেয়েছিল) শিরোনামের ৩০ পৃষ্ঠার এ রিপোর্টটি মিয়ানমার সৈন্যদের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ও প্রত্যক্ষদর্শী ২শ’ ব্যক্তি এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য কর্মীদের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে। কিছু বিশ^নেতা ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের পোড়ামাটি নীতিমূলক সামরিক অভিযানকে জাতিগত নিধন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
রিপোর্টে বলা হয়, ফরটিফাই রাইটস ও হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম সংগৃহীত সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা যায় যে, মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক দুষ্কৃতকারীরা দু’ দফা হামলাকালে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে ও জাতিগত নিধন চালিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, এ সব কাজ যে রোহিঙ্গা জনগণের গণহত্যা তার বহু সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। পূর্বে অপরিচিত একটি গ্রæপ নিরাপত্তা অফিসারদের উপর হামলা ও তাদের হত্যা করেছে বলে কথিত অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত বছরের অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গা মুসলমান অধ্যুষিত রাখাইনে নিধন অভিযান শুরু করে। তারা এ পর্যন্ত ৭ লাখের মত রোহিঙ্গাকে গৃহহীন করে স্বদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। এ সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, সেনাবাহিনীর এ সব অভিযান গণ নৃশংসতা চালানোর পন্থা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ভ‚িম ও আকাশ থেকে বেসামরিক রোহিঙ্গাদের উপর গুলি চালিয়েছে। সৈন্য ও ছুরি হাতে বেসামরিক বৌদ্ধরা রোাহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ও তাদের জবাই করে হত্যা করে। অনেক রোহিঙ্গাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। সৈন্যরা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করছে। তারা পুরুষ ও বালকদের গণহত্যা করছে।
ফরটিফাই রাইটস এবং হলোকাস্ট মিউজিয়ামের সাইমন-স্কিওড সেন্টার ফর দি প্রিভেনশন অব জেনোসাইড -এর তদন্তকারীরা রাখাইন রাজ্য ও বাংলাদেশ -মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা সফর করেন। রিপোর্টে আগস্টে ৩টি গ্রামে গণহত্যার ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেয়া হয়। তাদের সাক্ষ্যে বলা হয়, সৈন্যরা এক একবার হামলায় শত শত লোককে হত্যা করে। হত্যাকান্ড শেষ হলে সৈন্যরা নিহতদের লাশ স্ত‚প করে , তারপর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা সৈন্য ও তাদের সহযোগী উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের শিউড়ে ওঠার মত বিবরণ দেন। রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা বিশ^ব্যাপী ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী শুধু রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাই তাদের লক্ষ্য বলে তাদের দুষ্কর্মের সাফাই গাইছে।
ওয়াশিংটনের শীর্ষ ক‚টনীতিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমার সফরে যাবার একদিন পর পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত এ রিপোর্টে বলা হয়, মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের দ্বারা সংঘটিত ব্যাপক নৃশংসতার বিশ^াসযোগ্য খবর রয়েছে। টিলারসন মিয়ানমার সফরে গিয়ে এ সব অভিযোগের ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও দেশের কার্যত বেসামরিক নেত্রী অং সান সু কি’র প্রশাসন নৃশংসতার অভিযোগ নাকচ করেছে এবং জাতিগত নিধনের অভিযোগ তদন্তে জাতিসংঘ তদন্তকারীদের সে দেশে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ফরটিফাই রাইটস ও হলোকাস্ট মিউজিয়াম বলেছে, দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে রাখাইন রাজ্যে এবং মিয়ানমারের অন্যত্রও আবারো গণ নৃশংসতার ঝুঁকি রয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ