পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে কটুক্তি এবং পবিত্র কাবা ঘরকে অবমাননা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাগলাপীরে সংঘর্ষ এবং শলেয়াশা ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দু পল্লীতে আগুন দেয়ার ঘটনার শুরু থেকেই পুলিশের ভুমিকা ছিল সন্তোষজনক এবং উল্লেখ করার মত। ঘটনার পর থেকে প্রতিটি বিষয় চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রকৃত অপরাধী ও দুস্কৃতিকারীদের সনাক্তের পাশাপাশি ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। পুলিশের কঠোর অবস্থান এবং বিচক্ষণতার কারণেই বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা থেকে যেমন রক্ষা পেয়েছে সাধারণ মুসল্লীরা, তেমনি গোটা ঠাকুরপাড়ার হিন্দু পল্লীটিও রক্ষা পেয়েছে দুস্কৃতিকারীদের হাত থেকে। কেননা, দুস্কৃতিকারীদের উদ্দেশ্য ছিল পরিকল্পিত এবং সুদুর প্রসারী। সেক্ষেত্রে পুলিশের বিচক্ষণতা এবং কঠোর নিরাপত্তার কারনেই দুস্কৃতিকারীরা পুলিশের চোখ এড়িয়ে ৪/৫টি বাড়িতে আগুন লাগাতে পেরেছিল। সেখানেও পুলিশের তৎপরতায় আগুন বেশিদুর এগুতে পারেনি বলে জানিয়েছেন খোদ ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের লোকজন। তাদের ভাষায় ‘পুলিশ না থাকলে হামার কিছুই থুইল না হয়, হামার সবাকে জ্বলে-পুড়ি মারিল হয়। পুলিশ হামাক বাঁচাইছে, শোকরবার সকাল থাকি পুলিশ পাহারা আছিল। এমতন অবস্থায় কাঁয় যে কোনপাক থাকি আসি আগুন নাগে দিল, দিশা পাই নাই। ঘটনার পর আইজ পরযন্ত পুলিশ হাঁমাক পাহারা দিয়া থুইচে, ভগবান ওমার ভাল করুক। পরশাশন হামার ঘর-বাড়ি বানে দেচে, খাওনের ব্যবস্তা করচে, হামরা বেজায় খুশি। হামার কোন দুঃখ নাই। হামরাও চাই যারা আগুন দেচে তামাক গেরেপতার করুক, ভাল মানুষগুলা যেন গেরেপতার না হয়’।
এদিকে, শুক্রবার ঘটনার পর থেকে পুলিশ দু®কৃতিকারীদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এবং ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ইতিমধ্যে একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে নিরীহ মানুষ গ্রেফতাতর না হয়। তিনি নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে নির্ভয়ে বাড়ি ফিরতে আহŸান জানিয়েছেন। সূত্র মতে, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান নিজেই ঘটনা তদন্তে এবং আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়টি কড়া মনিটরিং করছেন। ইতিমধ্যে তিনি কয়েক দফা ঘটনাস্থলে গিয়ে হিন্দু পরিবারগুলোর সাথে কথা বলেছেন। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী মুসলিম পরিবারগুলোর লোকজনদের সাথেও কথা বলেছেন এসময় তিনি নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানী বা গ্রেফতার না করার আশ্বাস দিয়েছেন। সুত্র আরও জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারের বিষয়টি পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান কঠোরভাবে মনিটরিং করছেন। ঘটনায় কারা ইন্ধনদাতা, কারা অর্থের যোগানদাতা, কারা কিভাবে বক্তব্য দিয়েছেন ইত্যাদি বিষয় বিষয় পর্যালোচনা করে অপরাধীদের সনাক্ত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নিরপরাধ কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আসামীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি হিন্দু পল্লীতে আগুনের উৎস খুঁজছে পুলিশ। প্রথম কোন বাড়িতে আগুন লাগল, সেখানে বিক্ষোভকারীরা ছিল কি না, কোন দিক থেকে আসতে পারে, আগুনের সূত্রপাত সর্বপ্রথম কোত্থেকে, কে বা কারা দিল সেই আগুন, বিক্ষোভকারীরাই আগুন লাগিয়েছে নাকি তৃতীয় কোন পক্ষের দুস্কৃতিকারীরা আগুন লাগিয়েছে ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। এছাড়াও পাগলাপীর বাজার এলাকা থেকে শলেয়াশা ঠাকুরপাড়া আধা ঘন্টার রাস্তা হেঁটে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের পক্ষে আগুন দেয়া আদৌ কতটুকু সম্ভব, এসব বিষয়ও জোরালোভাবে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক্ষেত্রে পুলিশের ভিডিও ছাড়াও বিভিন্নভাবে সংগৃহিত ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে পুলিশ। পাশাপাশি ফেসবুকের আলোচিত সেই আইডিটি টিটুর কিনা তা সনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত টিটুকে বুধবার ৪দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তার নিকট থেকে উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। পোষ্টদাতা টিটু রায় নিরক্ষর এবং সে ৭/৮ বছর থেকে গ্রামে থাকে না মর্মে পরিবার ও প্রতিবেশিদের দাবীর বিষয়টিও পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে ক্ষতিয়ে দেখছে। তবে সে যদি ৭/৮ বছর থেকে এলাকায় না আসে তথা নারায়নগঞ্জেই থাকে তাহলে পার্শ্ববর্তী গ্রাম নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলনা চিড়াভাজা এলাকার তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকল কিভাবে? মঙ্গলবার সেখান থেকে তাকে গ্রেফতারের পর থেকেই এ প্রশ্ন সবার মুখে ঘুরপাক খাচ্ছে।
ওদিকে, ফেসবুকে পোস্টদাতা সেই টিটু রায়ের শলেয়াশা ঠাকুরপাড়াস্থ বাড়িতে অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও ফুটেজ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একদল পুলিশ মহাসড়ক থেকে টিটুর বাড়ির উদ্দেশ্যে কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। সেখানে গিয়েই পুলিশ দেখলো টিটুর রান্নাঘরে আগুন জ্বলছে। তারা হন্ত দন্ত হয়ে আগুন নেভানোর জন্য ছুটে যাচ্ছে। শার্টপরা এক হিন্দু যুবকসহ কয়েকজন হিন্দু যুবক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুন দেখছে। পুলিশ বলছে এখানে কে আগুন দিলো? তোমরা এখানে আগুন লাগালে কেন? কে দিলো আগুন?। তখন একজন হিন্দু লোক বলে ‘কাই আগুন দিল কাঁয় জানে’। এসব বলেই তারা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর পুলিশ সদস্যরা বালু দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। সেখানে পুলিশ সদস্যরা পানির জন্য ডাকতে থাকে, বালতি চায়। কিন্তু উপস্থিত কোন হিন্দুই পুলিশকে আগুন নেভানের কাজ সহযোগিতা করেনি এবং বালতি এন দেয়নি। তারা আস্তে আস্তে সেখান থেকে ছটকে পড়ে। শেষের দিকে এক যুবক এক বালতি পানি এনে দেয়। ততক্ষণে টিটুর রান্নাঘর পুড়ে যায়। এসব বিষয়ও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যে মামলা তদন্তে ডিবি পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছেন পুলিশ সুপার। ডিবি পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি বিষয় চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব শিগরিরই প্রকৃত অপরাধীরা বেরিয়ে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।