পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চামড়া শিল্পের আরো বিকাশের জন্য চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে আরো দুটি চামড়া শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, আমাদের আরো পরিকল্পনা আছে-মূলত রাজশাহী বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে-এ দুটি জায়গায় নতুন দু’টি চামড়া শিল্পাঞ্চল আমরা গড়ে তুলবো। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র ঢাকায় করলে হবে না এটিকে সমগ্র বাংলাদেশেও ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) তিনদিন ব্যাপী ‘লেদার প্রডাক্ট শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়ার এন্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০১৭’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ‘থিংক অ্যাহেড, থিংক বাংলাদেশ’ শীর্ষক থিম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং লেদারগুডস এন্ড ফুটওয়ার ম্যানুফ্যাকরার্স এন্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজক।
শেখ হাসিনা বলেন, চামড়া খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমাদের দেশে বিনিয়োগ ও রপ্তানীতে চামড়া প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে। এই খাতের উৎপাদনশীলতা এবং গুণগত উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে আরো সহায়ক হবে এই অনুষ্ঠানটি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বৈশ্বিক ক্রেতা ও বিনিয়োগকারিদের রুলস অব অরিজিন সম্পর্কে আরো আকৃষ্ট করবে। ২০১৭ সালের জন্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে আমরা ‘বর্ষপণ্য ২০১৭’ হিসেবে ঘোষণা করেছি (প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ২০১৭)। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া খাত হতে ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স¤প্রতি অধিকাংশ ট্যানারি আমরা হাজারিবাগ থেকে সাভারে নিয়ে গেছি। সাভারে পরিবেশ সম্মতভাবে এই শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে এবং একে ঘিরে যেন আরো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারে তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা নেব।
তিনি বলেন, আর্ন্তজাতিক মান এবং স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার জন্য বেসরকারি খাত সহযোগে একটি টেষ্টিং ও ক্যালিব্রেশন সেন্টার স্থাপনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আয়কর রেয়াত ওয়েট বøু লেদার ব্যতিত চামড়া খাতে এফওবি রপ্তানী মূল্যের ওপর একশ ভাগ এক্সপোর্ট পার্ফমেন্স লাইসেন্স সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। যাতে রপ্তানীটা আরো সহজ করা যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প স্থানান্তরের প্রণোদনা হিসেবে সাভার ট্যানারী শিল্পাঞ্চল থেকে ফিনিশড চামড়া রপ্তানীর ক্ষেত্রে শতকরা ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাদুকা রপ্তানীর ক্ষেত্রে ১৫ ভাগ নগদ সহায়তা আমরা দিচ্ছি। চামড়া ক্ষেত্রে শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় মেশিনারী আমদানীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানী উন্নয়ন তহবিল থেকে স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য সোর্সিং করা হচ্ছে। চামড়া খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটা পাবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, চামড়া খাতে অধিক সহায়তা প্রদানের পেছনে রয়েছে এর অমিত সম্ভাবনা। খাতটি একদিকে একটি অত্যন্ত শ্রমঘন শিল্প যা বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে সক্ষম অন্যদিকে এর শতভাগ কাঁচামাল আমাদের দেশেই বিদ্যমান রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যথাযথভাবে এই খাতকে কার্যকর করা হলে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে স্থিরকৃত ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানী আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এই খাত ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন করতে পারবে।
দেশে প্রতিনিয়ত যে সমস্ত পশু জবাই হয় তার চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার এবং এই শিল্পের দিকে আরো বিশেষভাবে নজর দিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দেখা গেছে এসব জবাইকৃত পশুর চামড়া যথাযথভাবে ছাড়ানো ও সংরক্ষণ করা হয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব গর্ব অনুভব করি যখন আমার দেশের তৈরী কোন একটা জিনিস আমি ব্যবহার করতে পারি বা বিদেশে গেলে দেখাতে পারি এটা আমার দেশের তৈরী। বাংলাদেশে আরো বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবার আশা পোষণ করে তিনি বলেন, ক্রেতাদের বাংলাদেশের চামড়া খাতে আরো অধিক পরিমানে বিনিয়োগ করতে এবং চামড়া খাতে অধিক পরিমানে সোর্সিং করার জন্য এ শিল্পে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহŸান জানাই।
এ সময় বিদেশ থেকে আগত অতিথিদের প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানান এবং এই অনুষ্ঠান দেশের রপ্তানী বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আইসিসিবির অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। এলএফএমইএবির সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম এবং বিশিষ্ট উদ্যোক্তা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে পূর্বে রেকর্ডকৃত শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো.শাহরিয়ার আলম এবং ভারপ্রাপ্ত এফবিসিসিআই সভাপতি ফজলে ফাহিমের বক্তব্যও প্রচার করা হয়।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট এ্যাডভাইজার সালমান এফ রহমান এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার গণভবনে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, কুটনিতিক সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং চামড়া খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আইসিসিবির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের চামড়া শিল্পের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে অনুষ্ঠানে একটি অডিও ভিজুয়াল পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ ১৫টি দেশের চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী লেদার শোতে অংশ গ্রহণ করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।