পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নিহত ৪৪৫ : আহত সাড়ে ৬ হাজারেরও বেশি : ৭ দশমিক ৩ মাত্রার কম্পনে হাজার হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত : ধ্বংসস্তূপে আটকা বহু মানুষ : বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমবেদনা
ইরান ও ইরাকের উত্তর সীমান্তে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৪৪৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ৭.৩ মাত্রার এ ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন ৭ হাজার ১০০ জনের বেশি। আহতদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর জখম থাকায় মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইরানের স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা ১৮ মিনিটে ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং এর মূলকেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৩.৯ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পটি মূল আঘাত হেনেছে ইরাকের আধা স্বায়ত্ত¡শাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে। ওই অঞ্চলের সীমান্তে অবস্থিত ইরানের কুর্দিস্তান ও কেরমানশাহ প্রদেশও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দু’টি দেশের হাজার হাজার বাড়িঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পে কেরমানশাহ প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ওই প্রদেশে ১২৯ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ‘সারপাল-ই-জাহাব’ শহরে ৬৮ জন, ‘কাসরে শিরিন’ শহরে ৩৮ জন এবং কেরমানশাহ শহরে ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভূমিকম্পে সারপল-ই-জাহাব শহরের প্রধান হাসপাতালটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ওদিকে, ইরাকি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটির সুলাইমানিয়া প্রদেশে অন্তত ৩০ জন নিহত ও কয়েকশ’ মানুষ আহত হয়েছে। এ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ইরানেই আহত হয়েছে এক হাজারের বেশি মানুষ।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ভূমিকম্প কবলিত এলাকাগুলোতে জোরেশোরে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুররেজা রাহমানি ফাজলিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, তা তুরস্ক, আর্মেনিয়া, কুয়েত, জর্দান, লেবানন, সউদী আরব, বাহরাইন ও কাতার থেকেও অনুভূত হয়।
মার্কিন ভূতাত্তি¡ক জরিপ বিভাগ জানিয়েছে, কুর্দি সরকার-শাসিত সুলাইমানিয়া শহর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে হালাবজার কাছে ভূমিকম্প প্রচÐ আঘাত হেনেছে।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রের দূরত্ব অনেক হলেও সেখানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বাগদাদের ভবনগুলো প্রচÐভাবে কেঁপে ওঠে। অনেকে একে প্রথমে বিস্ফোরণ বলে মনে করলেও কম্পন এক মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী হওয়ায় পরে একে ভূমিকম্প বলে বুঝতে পারে।
ভূমিকম্পের পর কয়েক দফা আফটার শক হয়েছে এবং ইরানের কুর্দিস্তান, কেরমানশাহ, ইলাম, খুজিস্তান, হামেদান, পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, লোরেস্তান, তেহরান, কাজভিন, যানজান ও কোম প্রদেশ থেকে তা অনুভূত হয়।
ইরানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে কেরমানশাহ প্রদেশে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং ইন্টারনেট সেবায় বিঘœ দেখা দিয়েছে।
তিন সন্তানের জননী মাজিদা আমির বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সন্তানদের নিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে। মনে হচ্ছিল ভবনটি বাতাসে নাচছে। প্রথমে আমি মনে করেছিলাম বড় কোনও বোমার বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে শুনলাম চারপাশের সবাই ভূমিকম্প বলে চিৎকার করছে।
কেরমানশাহ্’র ডেপুটি গভর্নর মোজতবা নিক্কাদার বলেন, কর্তৃপক্ষ তিনটি জরুরি শিবির খুলছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় রেডক্রসের ৩০টি দলকে পাঠানো হয়েছে। অঞ্চলটি কোন কোন এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইরাকের কর্মকর্তারা জানান, দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশে সুলাইমানিয়ায় বাসিন্দারা ভূমিকম্পের সময় দৌঁড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সেখানে বেশ কয়েকটি সম্পদ ও স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে।
এএফপি’র সাংবাদিকরা জানান, ভূমিকম্পটি ২৫ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হানে। এটি বাগদাদে ২০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। ইরাকের অন্যান্য প্রদেশগুলোতে আরো বেশি সময় ধরে শক্তিশালী এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সীমান্তের ওপারে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে তাবরেজসহ বেশ কয়েকটি নগরী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে।
এএফপি’র এক প্রতিনিধি বলেন, ‘তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মালাতিয়া থেকে ভান পর্যন্ত ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়।’ ভূমিকম্পের সময় তুরস্কের দিয়ারবাকিরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
ইরানে কেন বার বার ভূমিকম্প হয়?
বিশ্বের যেসব এলাকায় বার বার এ ধরনের ভূমিকম্প হয় ইরান তার একটি। এর আগেও দেশটিতে বেশ কিছু বড় আকারের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর কারণ হচ্ছে, সাধারণভাবে বলা যায়, আরাবিয়া এবং ইউরেশিয়া টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষ। আরাবিয়া প্লেটটি প্রতি বছর কয়েক সেন্টিমিটার করে উত্তরে সরে যাচ্ছে। ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আরাবিয়া প্লেট ইউরেশিয়া প্লেটটিকে নিচ থেকে ধাক্কা দিচ্ছে। কিন্তু দেশটির উত্তর-পশ্চিমে এই দুটো প্লেট একে অপরকে সরাসরি ধাক্কা দিচ্ছে। এসব সংঘর্ষ থেকেই সেখানে সৃষ্টি হয়েছে জাগরস পর্বতমালার।
প্রাথমিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, থ্রাস্ট ফল্টের (চাপের কারণে একটি প্লেট যখন আরেকটি প্লেটের উপর উঠে যায়) কারণে এই ভূমিকম্প হয়েছে। এ ভূমিকম্পে কতো মানুষ হতাহত হতে পারেন তার একটি হিসাব অনুমান করার চেষ্টা চলছে। এটা করা হয় ভূমিকম্পের মাত্রা, জনবসতির ঘনত্ব এবং স্থানীয় বাড়িঘর কী ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে। এ মডেল থেকে হয়তো প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায় না। কিন্তু এই দুর্যোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
এদিকে ইরানের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি, ইরানে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত মাইকেল ক্লর-বার্চটোল্ড, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা মুহাম্মাদ আসিফ সমবেদনা জানিয়েছেন। সূত্র : বিবিসি, পার্স টুডে ও রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।