Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন : পাঠ্যপুস্তক তৈরিতে প্রতি স্তরে দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ৭:০৭ পিএম
  • ১৬টি ধাপে সুশাসনের ঘাটতি চিহ্নিত
  • স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় ই-টেন্ডারিং চালুর সুপারিশ 

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তকের পাণ্ডুলিপি তৈরি, ছাপা ও বিতরণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’র (এনসিটিবি) পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা ও সরবরাহের সর্বমোট ২০টি ধাপের মধ্যে ১৬টি ধাপে সুশাসনের ঘাটতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে হয়। এসব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ১৬ দফা সুপারিশ পেশ করেছে দুর্নীতি বিরোধী এই সংস্থাটি। সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোরশেদা আক্তার। গবেষণাটি অক্টোবর ২০১৬ থেকে অক্টোবর ২০১৭ সময়ের মধ্যে পরিচালিত হয়। গুণগত এ গবেষণায় এনসিটিবি’র কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন কমিটির সদস্য, পাণ্ডুলিপি লেখক, সংশ্লিষ্ট সম্পাদক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ, তদারকি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম কর্মীর সাক্ষাৎকার গৃহীত হয়েছে।
গবেষণার বলা হয়, এনসিটিবি কর্মকর্তারাও এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেদনে পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়নের প্রক্রিয়া চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের মতাদর্শীদের প্রাধান্য দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে কাউকে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়। কোনো ক্ষেত্রে লেখা নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক মতাদর্শের প্রভাব দেখা যায়। আবার সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের কোনো কোনো বিষয় এবং শব্দ পরিবর্তন করা হয়। গবেষণায় বলা হয়, শিক্ষাক্রম অনুসরণ না করেই অনেক সময় অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখা পরিবর্তন করা হয়। পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরা বলা হয়, এনসিটিবির কর্মকর্তাদের একাংশ পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বানের আগেই প্রস্তাব অনুযায়ী প্রাক্কলিত দর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়। পরে এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে দরপত্র দাখিল করে। বিতরণ পর্যায়েও নানা ধরনের অনিয়ম হয় বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়। এ বিষয়ে বলা হয়, কয়েকটি জেলায় নির্ধারিত সময়ে পাঠ্যবই সরবরাহ করা না হলেও পরে সঠিক সময়ে প্রাপ্তি প্রতিবেদন দেয়া হয়। প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এনসিটিবির পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন–প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ, সঠিকভাবে পাণ্ডুলিপি রেখা হচ্ছে না, দলীয় রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত প্রভাব বিদ্যমান দেখা যায়। পাঠ্যবই ছাপায় দুই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। প্রথমত, ব্যক্তিগত আর্থিক সুবিধা আদায় এবং কার্যাদেশ প্রদানে দুর্নীতি। এছাড়াও, প্রতিটি পাঠ্যবইয়ের জন্য সম্পাদক, সংকলক ও লেখকদের সাথে এনসিটিবি’র চুক্তির প্রথা প্রবর্তন; দক্ষতাসম্পন্ন লেখক নিয়োগ ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর আওতায় লেখকদের সম্মানী নির্ধারণ এবং পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে ই- টেন্ডারিং প্রথা চালুর সুপারিশ করেছে টিআইবি। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এখানে অনিয়মের ব্যাপক চিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, মেধাভিত্তিক সমাজ গঠনে রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার বাস্তবায়নকারী সংস্থা এনসিটিবি কর্তৃক সম্প্রতি একটি বিশেষ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চাহিদার প্রেক্ষিতে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন ও সংশোধন আনা হয়েছে, যার অনেক কিছুই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও মৌলিক চেতনার পরিপন্থী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টিআইবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ