পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নৌযান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে নৌ-পরিবহন অধিদফতর অফিস আদেশ জারি করে জাহাজের নকশা অনুমোদনে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল। আদেশে বলা হয়েছিল, নতুন জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা অনুমোদনের আগে সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতির সুপারিশ লাগবে। এতে নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছিল। এই আদেশের বিরুদ্ধে একজন জাহাজ মালিক রিট করার পর হাইকোর্ট নৌ-অধিদফতরের আদেশ স্থগিত করলে তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গিয়েছিল সরকারপক্ষ তথা নৌ-অধিদফতর। আপিল বিভাগ রিটটি নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে পাঠিয়ে এ সংক্রান্ত রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের দেয়া আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে নকশা অনুমোদনের ওপর অধিদফতরের জারি করা অফিস আদেশ বহাল রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেই নতুন জাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা অনুমোদনের ওপর সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে নৌ-অধিদফতর। এ ক্ষেত্রে জাহাজ মালিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা কিংবা তাদের মতামত নেয়া হয়নি বলে একাধিক জাহাজ মালিক নেতা জানিয়েছেন। এমনকি নকশা অনুমোদন প্রক্রিয়া শিথিল করে সাত দিনের ব্যবধানে জারি করা দুটি অফিস আদেশের অনুলিপিও কোনো জাহাজ মালিক সংগঠনকে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, দেড় মাসের মধ্যে শতাধিক জাহাজের নকশাও অনুমোদন দিয়েছে অধিদফতর; যার মধ্যে একটি বিতর্কিত ডিজাইন ফার্ম (নকশা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান) বেঙ্গল মেরিন ডিজাইন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের অথরাইজড অফিসার এ এন এম বদরুল আলম রাতুলের একাই প্রায় ৩০টি নকশা রয়েছে। এদিকে একজন কর্মকতা একাই ৩০টি নকশা অনুমোদন দিয়েছেন, তা তদন্ত করবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
জাহাজের নকশা অনুমোদনের মতো অভ্যন্তরীণ নৌযানের ড্রাইভারশিপ (চালক) পরীক্ষায়ও আগের মতো সেই অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় অতিমাত্রায় অনিয়ম ও অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে এবং পাস করার বিষয়টি সম্পূর্ণ দালালনির্ভর হয়ে পড়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এই দালালদের তালিকায় আলমগীর মামুন, জসিমউদ্দিন ওরফে কালা জসিম, মো. মাসুদ রানা ও মো. আবির হোসেন নামে চার ব্যক্তি রয়েছেন; যারা কেউই নৌ-পরিবহন অধিদফতরের কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী নন। ২০১৬ সালের ১২ মে নৌ-মন্ত্রণালয়ের সভায় নতুন নৌযান নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা অনুমোদনের জন্য মালিকপক্ষের ছাড়পত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নৌ-পরিবহন অধিদফতর ওই বছরের ৩০ জুন এক অফিস আদেশে মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সমন্বয় এ সংক্রান্ত একটি গঠন এবং নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে স্ব স্ব শ্রেণিভুক্ত জাহাজের মালিকপক্ষের (সমিতি) ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ফারুক হোসেইন নামের এক জাহাজ মালিকের করা রিটের (রিট নম্বর ১৩৭৫/২০১৭) পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত ২৭ ফেব্রæয়ারি নৌ-অধিদফতরের ওই অফিস আদেশের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় এবং ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এরপর আবেদনটি গত ৩ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সোমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ মামলাটি সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আপিল বিভাগের আদেশে ইতোপূর্বে দেয়া চেম্বার বিচারপতির স্থগিতাদেশও বহাল রাখা হয়। আইনজ্ঞরা বলছেন, সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার ফলে নতুন নৌযানের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে গত বছরের ৩০ জুন জারি করা নৌ-পরিবহন অধিদফতরের অফিস আদেশ বহাল রয়েছে। এ কারণে ৩০ জুন ২০১৬ তারিখ জাহাজ মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ছাড়পত্র ব্যতিরেকে নতুন নৌযানের নকশা অনুমোদনের কোনো সুযোগ নেই।
মন্ত্রণালয়ের অভিযোগে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নৌযানের ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায়ও সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এই পরীক্ষায় পাস করে সনদ পাওয়ার জন্য জনপ্রতি প্রথম শ্রেণিতে এক লাখ, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৮০ হাজার ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৬০ হাজার টাকা পরীক্ষা কমিটিকে দিতে হয়। নির্ধারিত দালাল মারফত এই টাকা কমিটির চেয়ারম্যানের বিশ্বস্ত ক্যাশিয়ার মো. মাসুদ রানা এবং মো. আবির হোসেনের কাছে জমা হওয়ার পরই পরীক্ষার আগের দিন চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের কাছে ‘প্রশ্নপত্র’ পৌঁছে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, গত ৩০ অক্টোবর দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২৫ জনের ৫৬ জন, ১৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় শ্রেণিতে ২৪ জনের মধ্যে ১৩ জন এবং ২১ আগস্ট প্রথম শ্রেণিতে ৬৪ জনের মধ্যে ২২ জন পরীক্ষার্থী পাস করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নৌযান মালিকদের সাতটি সংগঠন নৌ-পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালককে একটি যৌথ চিঠি দিয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর অধিদফতরে জমা দেয়া ওই চিঠিতে নতুন নৌযানের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের ১২ মে তারিখের সভার সিদ্ধান্ত অনুসরণের অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে নৌ-পরিবহন অধিদফতরের ২০১৬ সালের ৩০ জুন তারিখে জারি করা অফিস আদেশ অনুযায়ী মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সমন্বয় গঠিত কমিটির সুপারিশ ছাড়া কোনো নকশা অনুমোদন থেকে বিরত থাকার দাবি জানানো হয় ওই চিঠিতে। সংগঠনগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা, বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অয়েল ট্যাংকার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ট্যাংকার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রæপ। কিন্তু তাদের আবেদন আমলে নেয়নি অধিদফতর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।