Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ডিএসসিসি’র হকার পুনর্বাসন প্রকল্প ১০ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 ডিএসসিসি’র হাকার পুনর্বাসন প্রকল্প গত ১০ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি। রাজধানীর ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের পর, তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিদেশ পাঠানোর প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ঘোষণা হওয়ার পর ১০ মাস পার হয়ে গেলেও এ জটিলতার কোন প্রকার সমাধান বের করা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি বিভাগ থেকে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের যে তালিকা করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওই তালিকার প্রায় আড়াই হাজার হকারের মধ্যে মাত্র ৬৯ জন বিদেশ যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।
উচ্ছেদ হওয়া হকারদের অভিযোগ, হকারদের জন্য যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে প্রকৃত হকারদের নাম নেই। দলীয় লোকদের তালিকাভুক্ত করায় বিদেশে যাওয়ার আবেদনে অনাগ্রহী তারা। তবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তা পেলেই প্রকল্প তৈরির কাজ শেষ করে জমা দেওয়া হবে।
রাজধানীর মূল সড়ক ও ফুটপাত দখল করে হকারদের বসা বন্ধ করতে বারবার অভিযান পরিচালনা করে কোনও ফল পায়নি সিটি কর্পোরেশন। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনি প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী চলতি বছরের শুরুতেই রাজধানীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। জনবহুল এলাকা গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন ও নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে পথচারীদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নিয়োগ করা হয় স্বেচ্ছাসেবক ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের। এতে অনেকটা সফল হয় সংস্থাটি। এরপর নগরভবন ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করে হকাররা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
উচ্ছেদের কারণে বেকার হওয়া হকারদের কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করে সেই সময় মেয়র সাঈদ খোকন তাদেরকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করেন। মেয়রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যদি কোনও হকার ফুটপাত ছেড়ে কর্মসংস্থানের জন্য চাকরি করতে বা বিদেশ যেতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে সিটি কর্পোরেশন তাদেরকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন এবং কেউ বিদেশ যেদে চাইলে তাকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। মেয়রের এমন ঘোষণার পর উচ্ছেদ হওয়া হকারদের অন্তত ৬৯ জন বিদেশ যেতে আবেদনও করেন।
ডিএসসিসি মেয়রের এমন সিদ্ধান্তের পর চলতি বছরের ২২ ফেব্রæয়ারিতে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনও জানিয়েছেন, পুনর্বাসনের জন্য হকারদের আবেদন পাওয়ার পর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রমিক হিসেবে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
প্রথম অবস্থায় কয়েকজন হকার নেতাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও কর্পোরেশনের সে সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা থাকেনি। সিটি কর্পোরেশন যাদের নিয়ে এগোচ্ছে তাদের অধিকাংশই হকার না। যে কারণে প্রকৃত হকারদের পক্ষ থেকে কর্পোরেশনের এ উদ্যোগে সাড়া মিলছে না।
গুলিস্তানের হকার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৯ বছর ধরে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের পাশে হকারি করে আসছি। বহুবার সিটি কর্পোরেশন আমাদের উচ্ছেদ করেছে। এখনও রাস্তায় বসতে পারি না। ছুটির দিনে যেটুকু সময় পাই শিল্পকলার সামনে বসি। পত্রিকা ও লোক মুখে শুনতেছি হকারদের নাকি সিটি কর্পোরেশন বিদেশ পাঠাচ্ছে। আবার নাকি প্রকৃত হকারদের তালিকাও করা হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় আমার নাম আছে কিনা জানি না।
বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা মুর্সিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, সিটি কর্পোরেশন হকারদের বিদেশ পাঠানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা কি হকাররা জানে? গত ১২ জুন হকার নেতাদের নিয়ে সেমিনার করা ছাড়া আর কী কাজ হয়েছে। আমরা চাই না হকাররা রাস্তায় থেকে জনগণের সমস্যা সৃষ্টি করুক। কিন্তু তারা যেহেতু রাষ্ট্রের নাগরিক সেহেতু এই নাগরিকদের বিকল্প পুনর্বাসন করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর বিষয়টাও অতো সহজ না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, অতীতেও বহুবার হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত হকাররা পুনর্বাসিত হয়নি। হকার পুনর্বাসনের নামে রাজনৈতিক নেতাকর্মী পুনর্বাসিত হয়েছে। এখন সিটি কর্পোরেশন যাদের তালিকা করেছে তাদের অধিকাংশই হকার না। তাছাড়া যাদের সঙ্গে বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে বৈঠক করা হয়েছে তাদের সঙ্গেও হকারদের কোনও যোগসূত্র নেই। যে কারণে হকারদের দিক থেকে সিটি কর্পোরেশন সাড়া পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, হকারদের বিদেশ পাঠানো ও কার্ড তৈরি করে দেওয়ার বিষয়ে এখনও উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই। আমরা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা হকারদের বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে একটি প্রকল্প তৈরির কাজ করছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রকল্পে হকার পুনর্বাসনের জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে কম খরচে বিদেশ পাঠানো, স্বল্প মেয়াদী ঋণ দেওয়াসহ অন্যান্য বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি অনুমোদন দেয় তাহলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আসলে এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এখনও বলার মতো কিছু হয়নি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ২০০১ সালে ফুটপাত পরিচ্ছন্ন এবং উন্মুক্ত রাখতে বিচারপতি আবু সাঈদ আহাম্মেদ ও বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্দেশ দেয়। ২০১০ ও ২০১২ সালে সদরঘাট ও মৎস্য ভবন থেকে সেগুনবাগিচা এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতেও আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এ ছাড়া ঢাকা সিটি ম্যানুয়াল-১৯৮২ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অধ্যাদেশ-১৯৭৬-এ ফুটপাত দখলমুক্ত এবং পথচারীদের হাঁটার উপযোগী রাখার কথা বলা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিএসসিসি

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ