ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
আমরা পরিশ্রম করতে চাই না, কিন্তু উন্নতি করতে চাই। আমরা কষ্ট করতে চাই না, কিন্তু সফলতা অর্জন করতে চাই। আমরা ব্যবসা বাণিজ্যে শুধু মুনাফা করতে চাই, কিন্তু ক্ষতি মানতে চাই না। আমরা সুন্দর সমাজ চাই, কিন্তু সেই সুন্দর সমাজ নির্মাণের জন্য কাজ করি না। আমরা জীবনে সুখী হতে চাই, কিন্তু সেই সুখ অর্জনের জন্য যা করা দরকার, তা করি না। আমরা সবাই শর্টকার্ট পথে ধনী হতে চাই, কিন্তু ধনী হবার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে চাই না। আমরা সবাই বিখ্যাত হতে চাই, কিন্তু বিখ্যাত হবার জন্য যে সাধনার দরকার তা করতে চাই না। কর্মক্ষেত্রে আমরা সবসময় প্রমোশন চাই কিন্তু প্রমোশন পাবার জন্য নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলি না। আমরা ভালো বেতন এবং সম্মানের চাকরি চাই। কিন্তু সেই ভালো বেতন এবং সম্মান পাওয়ার জন্য নিজেকে যে অধিকতর যোগ্য করে তুলতে হবে, সেটা করতে চাই না। আমরা অপরের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার আশা করি, কিন্তু অপরের প্রতি ভালো ব্যবহার করতে চাই না। আমরা অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলি, কিন্তু অধিকার প্রদানের কথা বলি না। নিজের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা যতটা সোচ্চার, অপরকে তার অধিকার প্রদানের বেলায় ততটাই নিশ্চুপ। আমরা কেবল পেতে চাই কিন্তু দিতে চাই না। মানুষের মনে এবং চিন্তায়, কাজে এবং কর্মে এই যে চরম বিপরীত অবস্থান, তা আমাদের সমাজকে কলুষিত করছে। সর্বত্রই অশান্তি সৃষ্টি করছে এবং আমাদেরকে কেবলই পিছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারছি না। কিন্তু উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে হলে এবং নিজেকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে যেতে হলে আমাদেরকে পরিশ্রম করতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে। পরিশ্রম আপনার জীবনে যেমন সফলতা নিয়ে আসবে ঠিক তেমনি দায়িত্ব আপনার যোগ্যতাকে বৃদ্ধি করে আপনাকে অধিকতর দায়িত্বসম্পন্ন ও যোগ্য করে তুলবে। দায়িত্ব পালন করতে করতেই আপনি অধিকতর যোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠবেন এবং এর মাধ্যমেই আপনি পৌঁছে যাবেন সফলতার শীর্ষে। সুতরাং দায়িত্ব নিন, তাহলে যোগ্যতা বাড়বে।
Servival of the fittest. কথাটির সাথে আমরা পরিচিত। কিন্তু বাস্তব জীবনে সেটার গুরুত্ব আমরা অনুধাবন করি না। আজ পর্যন্ত পরিশ্রম এবং দায়িত্ব পালন ছাড়া কেউই সফলতা অর্জন করতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। দায়িত্ব পালন করতে করতেই আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হবেন। যে খাতেই আপনি সফল হতে চান না কেন, আপনাকে পরিশ্রম করতেই হবে। আপনাকে দায়িত্ব নিতেই হবে এবং সব সময় অধিকতর দায়িত্ব আপনার কাঁধে নিতে হবে। ঘাত, প্রতিঘাত সহ্য করেই বড় হতে হয়। চাকরি বলেন, ব্যবসা বলেন, খেলাধুলা বলেন অথবা সাংস্কৃতিক জগত বলেন পরিশ্রম এবং দায়িত্ব পালন ছাড়া আপনি সফল হতে পারবেন না। রাজনীতির ক্ষেত্রেও আপনাকে সফল হতে হলে রাজনীতির ময়দানে অনেক বেশি দায়িত্ব আপনার কাঁধে নিতেই হবে। আপনাকে একজন সমাজসেবক হতে হলেও সমাজের দায়িত্ব আপনাকে নিজের কাঁধে নিতে হবে। আজকের বিশে^ সফলতার শীর্ষে অবস্থানকারী বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, কার্লুস স্লিম, বারাক ওবামা, সত্য নাদেলাসহ সবাই কিন্তু কঠোর পরিশ্রম এবং দায়িত্ব পালন করেই নিম্ন অবস্থান থেকে সমাজের শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছেছেন। কারো দয়া এবং অনুগ্রহে তারা কেউ এই সফলতা অর্জন করেননি। স্টিভ জবস কিংবা মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আলীর বেলায়ও কথাটা সত্য। পেলে কিংবা ম্যারোডোনা, রোনান্ডো কিংবা মেসি সবাই কঠোর পরিশ্রম এবং বড় বড় দায়িত্ব পালন করেই বিখ্যাত হয়েছেন। এরকম হাজারো মানুষের উদাহরণ দেয়া যাবে, যাদের সবাই নিজের কাঁধে দায়িত্ব নিয়েই বড় হয়েছেন। দায়িত্ব এড়িয়ে কেউ বড় হননি এবং দায়িত্ববানরাই সফল হয়। তাইতো বলা হয় Fortune favour the great . .
মনে করুন, আপনি সদ্য পড়াশোনা শেষ করে কর্ম জীবনে প্রবেশ করা একজন মানুষ। আপনার যদি আর্থিক সচ্ছলতা থাকে এবং চাকরিটা আপনার ইমিডিয়েট প্রয়োজন না হয় তাহলে আপনি একটু সময় নিন এবং একটি ভালো চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিন আর নিজেকে অধিকতর যোগ্য করে গড়ে তুলুন। আর আপনার যদি আর্থিক সচ্ছলতা না থাকে, চাকরিটা আপনার ইমিডিয়েট প্রয়োজন হয়, তাহলে জীবনের শুরুতেই আপনি একটি চাকরিতে যোগদান করুন। চাকরিটা যদি আপনার পছন্দমত এবং যোগ্যতা অনুযায়ী নাও হয়, তবু চাকরিতে যোগ দিন এবং মন দিয়ে আপনার দায়িত্ব পালন করুন। মনে রাখবেন, কোন কাজই ছোট নয়, আবার কোন পেশাই অবহেলার নয়। ছোট পদে চাকরিতে যোগদান করেও যুগে যুগে দেশে দেশে অনেক মানুষ সফলতার শীর্ষে পৌঁছেছেন। সুতরাং আপনিও পারবেন। সব সময় আশাবাদী হবেন। যে প্রতিষ্ঠানের যে পদে আপনি চাকরি করছেন, সে পদে আপনি নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করুন এবং অধিকতর দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হোন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আপনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ভালো মত পালন করুন। দেখবেন প্রতিষ্ঠান নিজ প্রয়োজনেই আপনাকে প্রমোশন দেবে এবং উচ্চ পদে আসীন করবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনি নিরবে কাজ করুন এবং অধিকতর দায়িত্ব পালন করুন। আপনি শতভাগ সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে কাজ করুন। দেখবেন সফলতা অবধারিত এবং আপনি সময়ের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে উন্নীত হবেন। আর যদি ঐ প্রতিষ্ঠানের চাকরি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে আপনি সেই চাকরির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো চাকরির জন্য চেষ্টা করুন। সময়ের ব্যবধানে আপনি একটা ভালো চাকরি যোগাড় করতে পারবেন। তখন আপনি আপনার স্বপ্ন পূরণে সফল হবেন। কিন্তু কোন অবস্থায়ই আপনি আরো ভালো চাকরির আশায়, নতুন চাকরি পাবার আগে বর্তমান চাকরি ছাড়বেন না। মনে রাখবেন, একটি সফলতা মানুষকে আর একটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।
চাকুরি না করে আপনি যদি ব্যবসা করতে চান অর্থাৎ একজন উদ্যোক্তো হতে চান, তাহলে কী ধরনের ব্যবসা দিয়ে আপনি যাত্রা শুরু করবেন তা আগে ঠিক করুন। এক্ষেত্রে আপনি এককভাবে শুরু করতে পারেন আবার কয়েকজন মিলে যৌথ উদ্যোগেও শুরু করতে পারেন। তবে এককভাবে শুরু করার চেয়ে যৌথ উদ্যোগে শুরু করাটা ভালো। কারণ একাধিক ব্যক্তির চিন্তা কাজ করবে, ফলে অপেক্ষাকৃত ভালো নীতি গৃহীত হবে। কাজের চাপ একজন ব্যক্তির ওপর না পড়ে একাধিক ব্যক্তির ওপর পড়বে, ফলে আপনার চাপ কমবে। রিস্ক একজনের ওপর না পড়ে একাধিক ব্যক্তির ওপর ডিস্ট্রিবিউট হবে, ফলে এগিয়ে যেতে সুবিধা হবে। সুতরাং আগে শুরু করুন। মনে রাখবেন শুরু করাটাই আসল কাজ। সাহসী হোন এবং সাহস করে শুরু করুন। ভয়, জড়তা, অলসতা এবং কাপুরুষতাকে পরিত্যাগ করুন। মাইক্রোসফট, ডেল, অ্যাপল, কোকাকোলা, পেপসি, সিঙ্গার, মটরোলা, নকিয়া, জিইসি, জেনারেল মটরস, হুন্দাই, টয়োটা, হোন্ডা, হুন্দাই, ভলবো, মার্সিডিজ, হাইডেলবার্গ, লাফার্জ, ইউনলিভার, ম্যাকডোনাল্ড, স্যামস্যাং, মিটসুবিসি, নাইকি, এডিডাস, ইউনি লিভার, টাটা, মিত্তালসহ বিশে^র বড় বড় শিল্প গ্রুপ স্বল্প পরিসরেই শুরু করেছিল এবং সেটার ওপর ভিত্তি করেই তারা আজকের অবস্থায় এসেছে। আমাদের বাংলাদেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপসমূহের সৃষ্টিও কিন্তু একইভাবে। স্কয়ার, আকিজ, এসিআই, ট্রান্সকম, প্রাণ-আর এফএল, বেক্সিমকো, বিএসআরএম, কেএসআরএম, আবুল খায়ের, পিএইচপি, এস. আলম, যমুনা, মেঘনা, বসুন্ধরা, কেডিএস, টি.কে, বিআরবি, সামিট গ্রুপ সহ সবাই কিন্তু ছোট পরিসরেই যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু ধৈর্য্য, পরিশ্রম, আন্তরিকতা এবং দায়িত্ব গ্রহণের চ্যালেঞ্জ তাদের আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। সুতরাং আপনিও সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
তবে তাড়াতাড়ি ধনী হবার জন্য কখনো অত্যাধিক মুনাফা করবেন না এবং প্রতারণার আশ্রয় নিবেন না। একইভাবে তাড়াতাড়ি সফল হবার জন্য চেষ্টা করবেন না। কারণ short term gain, মানে হচ্ছে long term pain. চাকরি কিংবা ব্যবসা বাণিজ্যের বাইরে আপনি যদি সৃজনশীল কোন পেশায় নিজেকে তৈরি করতে চান তাহলেও আপনাকে নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনাকে নিরবে কাজ করতে হবে। ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার, একাউন্টেন্ট কিংবা বৈমানিক, লেখক কিংবা সাংবাদিক, কবি কিংবা সাহিত্যিক, গায়ক কিংবা নায়ক, রাজনীতিক কিংবা সমাজসেবক অথবা খেলোয়াড় যে ক্ষেত্রেই আপনি সফলতা অর্জন করতে চান না কেন, আপনাকে সাধনা করতেই হবে। আপনি যদি সমাজ নির্মাণের কর্মী হতে চান, তাহলেও আপনাকে নীরবে কাজ করে যেতে হবে। আপনাকে দায়িত্ব কাঁধে নিতেই হবে এবং ধৈর্য্যরে সাথে এগিয়ে যেতে হবে। ব্যর্থতায় কখনো হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না।
সময়ের পরিক্রমায় আপনিও একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন। সেই যাওয়া কিন্তু চিরতরে যাওয়া। এটাই চিরন্তন বাস্তবতা। আর জীবন কিন্তু একটাই। সুতরাং জীবনটাকে ভালো কাজে ব্যয় করুন। এই পৃথিবীর জন্য, এই পৃথিবীর মানুষের জন্য এবং এই পৃথিবীর অনাগত মানুষগুলোর সুখের জন্য আপনি কিছু মহৎ কাজ করুন। মানবতার কল্যাণে আপনি কিছু কর্ম করুন। তার জন্য আপনার মূল্যবান সময়কে কাজে লাগান।
লেখক : প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।