Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তদন্তে নিরপেক্ষতাই লক্ষ্য দুদকের গ্রেডিং পদ্ধতি চালু

| প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : অভিযোগ অনুসন্ধানে (তদন্তে) নিরপেক্ষতা রক্ষার গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি এই বিষয়ে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে কমিশন। এখন থেকে সকল কর্মকর্তার অভিযোগ এই নীতিমালার ভিত্তিতে মূল্যায়ণ করা হবে। এরপর কমিশন সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে। সংশ্লিষ্টরা জানিযেছেন, অভিযোগ অনুসন্ধান গ্রহণের ন্যূনতম আনুকূল্য প্রদর্শনের সুযোগ বন্ধের লক্ষ্যে এ নয়া পদ্ধতি চালু করছে কমিশন। এতে কর্ েঅভিযোগ অনুসন্ধান স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করা যাবে। ইতোপূবে অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির গঠন প্রণালী থাকলেও সুনির্দিষ্ট নম্বরভিত্তিক অভিযোগ মূল্যায়ন সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা ছিল না।
এদিকে গত মাসে উচ্চ আদালতে একটি মামলা শুনানিতে একজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এছাড়াও একই মামলা শুনানিতে দুদকের গতি কচ্ছব এর ন্যায় বলে মন্তব্য করেন উচ্চ আদালতও।
নতুন নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য ইনকিলাবকে বলেন, অভিযোগ অনুসন্ধান গ্রহণের বিষয়ে ন্যূনতম আনুকূল্য প্রদর্শনের সুযোগ বন্ধের লক্ষ্যে কমিশন অভিযোগ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় গ্রেডিং সিস্টেম প্রবর্তন করেছে।এ নিয়ে প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়েছে। এখন থেকে এ পদ্ধতিতে অভিযোগ মূল্যায়ণ করা হবে।
দুদক সচিব ড. শামসুল আরোফিন বলেন, কমিশন এই প্রতিষ্ঠানের স্ব”্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে কঠোর দিক-নির্দেশনা দেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধির জন্যই কমিশনের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, শতভাগ নিরপেক্ষতা রক্ষার স্বার্থে গ্রেডিং সিস্টেম প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে অনুসন্ধানের জন্য অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তার বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো সুযোগ থাকবে না। এই পদ্ধতিগত উন্নয়নের মাধ্যমে কমিশনের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছতার দিকে ধাবিত হবে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, জ্ঞাত আয়ের উৎস বর্হিভূত সম্পদ দখল, সরকারি কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণ, বিদেশী অর্থ পাচার, সরকারি সম্পত্তি নিজে নামে ভোগ দখলের চেস্টাসহ দুদকের আইন অনুযারী বিভিন্ন অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব অনুসন্ধানে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের ইচ্ছামত অভিযোগপত্র জমা দেন কমিশনে। এতে অনেক ক্ষেত্রে উপ পরিচালিকরা যাতে তারা স্বজনপ্রীতি করতে না পারে এর জন্য এ নতুন পদ্ধতি চালু করা সিদ্ধান্ত নেন কমিশন। গত ২৯ অক্টোবর কমিশনের কার্যালয়ে এ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের স্ব”্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে কঠোর দিক-নির্দেশনা আসে। মহাপরিচালকগণ তাদের অধীন পরিচালক,পরিচালকগণ তাদের অধীন উপপরিচালক এবং উপপরিচালকগণ তাদের অধীন অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যক্রম সুপারভাইজ ও মনিটরিং করার কথা বলা হয়। এরপর গত ৩০ অক্টোবর এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপণ জারি করে কমিশন।
প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, ২০০৭ এর আলোকে অভিযোগ দায়ের ও যাচাই-বাছাই পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ বাছাই কমিটির গঠনে উল্লেখ আছে। ইতোপূর্বে তাদের জন্য একটি মানদÐ থাকলেও সুনির্দিষ্ট নম্বরভিত্তিক অভিযোগ মূল্যায়ন সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা নেই। বিভিন্ন অভিযোগ বাছাই কমিটি ভিন্ন পরিমাপক ব্যবহারপূর্বক অভিযোগসমূহ মূল্যায়ন করে থাকে। তাছাড়া, সুনির্দিষ্ট পরিমাপক পদ্ধতি না থাকায় অনেক ফলদায়ক অভিযোগ যাচাইকালে বাদ পড়ার এবং অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হওয়ার আশংকা বিদ্যমান থাকে। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে সকল অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটির জন্য অভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত নম্বরভিত্তিক নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়।
নীতিমালায় বলা হয়, ২০০৪ এর তফসিলভুক্ত হলেই কেবল নম্বরভিত্তিক যাচাই-বাছাই এর উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। দুদক আইনের আওতায় অভিযোগসমূহ পাওয়া না গেলে জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সেসব অভিযোগ কমিশন প্রয়োজন মনে করলে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠাতে পারবে।
অপর দিকে অভিযোগ যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত প্রতিটি অভিযোগকে ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে। এতে অভিযোগের সুনির্দিষ্টতার উপর নম্বর থাকবে ৪০, অভিযোগে আর্থিক সংশ্লেষে এর উপর নম্বর থাকবে ৩০ এবং গুরুত্ব বিবেচনায় নম্বর থাকবে ৩০। এর মধ্যে কোনো অভিযোগ ৭৫ বা তার বেশি নম্বর পেলে অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হবে। আর কোনো অভিযোগ ৫৬ থেকে ৭৪ নম্বর পেলে অভিযোগটি কমিশনের অনুমোদনক্রমে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ পাঠানো হবে। এছাড়া গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রতিবেদন পাঠনোর জন্য অনুরোধ জানানো হবে।
অপর দিকে কোনো অভিযোগ ১ থেকে ৫৫ নম্বর প্রাপ্ত হলে কোনো কার্যক্রম গৃহীত হবে না। অর্থাৎ অভিযোগটি নথিভুক্ত হয়ে যাবে। নম্বর বিভাজনে অভিযোগের সুনির্দিষ্টতা মূল্যায়নের ৪০ নম্বরের ব্যাপারে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত চিহ্নিতকরণে ওই ব্যক্তির নাম ও পদবী সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলে ৫ নম্বর আর অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ও পদবী সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলে ১০ নম্বর। ঘটনাস্থল ও সময় উল্লেখ না থাকলে ৫ নম্বর আর ঘটনাস্থল ও সময় যথাযথভাবে উল্লেখ থাকলে ১০ নম্বর। অভিযোগে কোনো তথ্য প্রমাণাদি সংযুক্ত না থাকলে ১০ নম্বর আর অভিযোগে তথ্য প্রমাণাদি সংযুক্ত থাকলে ২০ নম্বর। অভিযোগের আর্থিক সংশ্লেষের ৩০ নম্বরের ব্যাপারে বলা হয়, অভিযোগে জড়িত টাকার পরিমাণ ১ কোটি টাকার কম হলে ২০ নম্বর আর অভিযোগে জড়িত টাকার পরিমাণ ১ কোটি বা তার বেশি হলে ৩০ নম্বর। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনার ৩০ নম্বরের ব্যাপারে বলা হয়েছে, অভিযোগ জনস্বার্থে কম গুরুত্বপূর্ণ হলে ১৫ নম্বর আর অভিযোগ জনস্বার্থে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলে ৩০ নম্বর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ