Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থেমে থেমে আবারও আসছে রোহিঙ্গার ঢল

| প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ থেকে : সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নেমেছে। আবারও রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করেছে। চলতি মাসে গেল কয়েকদিনে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ৭ হাজারের বেশী রোহিঙ্গা এই পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করেছে। কিন্তু তারা একদিন নোম্যান্স ল্যান্ডের নাফ নদীর বেড়ী বাঁধে অবস্থান করেছেন। গত দুই দিন ধরে এসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারের দমংখালী ও সুদারদ্বীপ, কোয়ানসিবং ও নাইসাদং সীমান্তে অবস্থান করছিল। এবারে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুমানিক ৫ হাজার বলা হলেও স্থানীয়দের মতে তা হবে ৭হাজারের বেশি। রোহিঙ্গারা উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়ায় দিনভর খোলা আকাশের নিচে অবস্থান গ্রহণের পর সন্ধ্যায় তাদের কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয়ের সুযোগ দেয় বিজিবি। এ ছাড়া মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে আরও অন্তত ৩০থেকে ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়ে আছে। সুযোগ পেলে যে কোনো সময় তারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করবে বলে জানিয়েছে বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সরেজমিনে গতকাল আসা রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওপারে মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্তে উখিয়ার লম্বাবিল, আঞ্জুমানপাড়া, থাইংখালী, টেকনাফের হ্নীলার উনছিপ্রাং, দক্ষিণপাড়া সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই তাদের ভিটেবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার উদ্দেশ্য হাঁটা শুরু করে। মিয়ানমারের বুসিদং ও রাসিদং থেকে হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে আসতে তাদের দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যায়। এ ছাড়া উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়ার বিপরীতে ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের কোয়ানসিবং, নাইসাদং, দংখালী, কুমিরখালী, মংডুর সর্বদক্ষিণে নাইক্যনদিয়ায় এক মাসেরও অধিক সময় ধরে অপেক্ষা করছে আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। সুযোগ পেলেই তারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করবে। তাই ভিটেবাড়ি ছাড়া এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছেই মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এদিকে গতকালও শাহপরীর দ্বীপের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে ভোরে কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শাহপরীর দ্বীপে দায়িত্বরত এসআই নাজমুল আলম জানান, সকাল থেকে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ শাহপরীর দ্বীপ হয়ে এপারে ঢুকেছে।
গতকাল সকালে আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে গিয়ে দেখা যায়, অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা এসব রোহিঙ্গা খাবার ও পানির জন্য ছটফট করছে। বিশেষ করে শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্নাকাটির রোল বসিয়ে দিয়েছে। বয়স্করাও ক্ষুধায় কাতর হয়ে আঞ্জুমানপাড়ার ধানখেতের আইলে কড়া রোদ মাথায় নিয়ে বসে ছিলেন। সকাল ৯টার পর আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও দেশি-বিদেশি এনজিওর কর্মীরা সীমান্তে উপস্থিত হয়ে শুকনো খাবার ও পানি বিলি-বন্টন করেন। প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্যও উপস্থিত হন রেড ক্রিসেন্ট ও কুতুপালংয়ের বিদেশি হাসপাতাল এমএসএফের কর্মীরা। তবে প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল হওয়ায় তা নিয়ে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। বেশ কয়েক দিন না খেয়ে থাকা এসব রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে বেশ ধৈর্যহীন হতে দেখা যায়। খাবার ও পানি দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ার অবস্থা তাদের।
রাখাইনের বুসিডং এলাকার আবুল কালাম জানান, তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছেন এগারো দিন পূর্বে। নদী নালা, খাল বিল ও পাহাড়- পর্বত পার করে তারা বাংলাদেশে ঢুকেন। তারা জানান, মিয়ানমার সেনা ও পুলিশ তাঁদের এনভিসি কার্ড দিচ্ছেন। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন রোহিঙ্গাদের কোন সম্পদ দাবী করতে পারবেনা । সেনারা যেখানে নিয়ে যান, রোহিঙ্গাদের সেখানে যেতে হবে। এ কার্ড ছাড়া বাহির হলে রোহিঙ্গাদের চলে অমানবিক অত্যাচার। একই এলাকার মো: শাহ জানান, প্রত্যেক পরিবার হতে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন করে বিনা পয়সায় মিয়ানমার পুলিশ ও সেনাদের কুলি বা শ্রম ব্যায় করতে হয়। অনিহা প্রকাশ করলে ভয়াবহ অত্যাচার চালায়। তাই তারা নিরপদ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন। পালিয়ে আসা একাধিক রোহিঙ্গারা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহনী এখনো তাঁদের ধরণ পরিবর্তন করে নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা আরো জানান, মিয়ানমার সেনারা রোহিঙ্গাদের বাধ্য করে এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) কার্ড দিতে বাধ্য করছেন। এ কার্ড নিতে অনিহা করলে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়েদেন সেনারা।
বিজিবির মেজর ইকবাল রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বলেন, ওপারে রোহিঙ্গাদের জীবন যাপন বেশ দুরূহ হয়ে উঠেছে। তাদের স্বাধীন মতো কোন কিছুই করতে পারছেন না। এপারে ভালো জীবন যাপনের খবর পেয়ে চলে এসেছেন। তিনি আরো বলেন, ওপারের সীমান্তে রোহিঙ্গাদের তেমন অবস্থান নেই। তবে রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, এপারে আরো আসার অপেক্ষা করছেন। ২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, তাদের তল্লাশি শেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় পাঠানো হচ্ছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ