Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউনেস্কোর স্বীকৃতি বিশাল গৌরবের প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত হওয়ায় ‘গভীর সন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষার জন্য বিশাল গৌরবের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসনামলে এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে জাতির পিতার ওই ভাষণ গণমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধ থাকলেও বঙ্গবন্ধুর সেই কণ্ঠ ‘সাধারণ মানুষের হৃদয় থেকে কোনদিনই মুছে যায়নি।
৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণা করায় ইউনেস্কো এবং সংস্থাটির মহাসচিব ইরিনা বোকোভাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করায় আমি ইউনেস্কো এবং এর মহাসচিব ইরিনা বোকোভাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে গত ৩০ অক্টোবর এই অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন দেশের আরও ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে এবার বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকেও ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করে ইউনেস্কো।
ইরিনা বোকোভা সোমবার প্যারিসে ইউনেস্কো কার্যালয়ে ওই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করার পর বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিবৃতি দেন বলে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাঙালীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে। অর্থনৈতিক শোষণ ছাড়াও তারা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আঘাত হানে। তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার উদ্যোগ নেয়। পাকিস্তানীদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রুখে দাঁড়ান। তার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রাম। বাঙালিদের উপর নেমে আসে অত্যাচার এবং নির্যাতন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬-দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম এক যৌক্তিক পরিণতির দিকে ধাবিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা ঘোষণার অপরাধে পাকিস্তান সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাকে প্রথমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং পরে কুর্মিটোলায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে রাখে। শুরু হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কার্যক্রম। কিন্তু বাঙালীরা দমবার পাত্র নন। তারা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করে আনেন। সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের পতন হয়। আরেক সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করে নির্বাচনের প্রতিশ্রæতি দেয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানী শাসকদের নিপীড়ন এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াইড়ের পর ১৯৭০ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। তারা উল্টো বাঙালিদের উপর অত্যাচার নিপীড়ন শুরু করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভার ডাক দেন। সেদিনের জনসমুদ্রে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণই ছিল প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ভাষণে বাঙালীদের প্রতি পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠীর হত্যা-নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র মূর্ত হয়ে উঠে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের আবশ্যকতা ও আকাঙ্খা ছিল এ ভাষণের মূল লক্ষ্য। শত্রুর মোকাবিলায় তিনি বাঙালি জাতিকে নির্দেশ দেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।’ স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে ৭ মার্চের এই ভাষণ গোটা জাতিকে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের পর থেকেই পূর্ব বাংলার নিয়ন্ত্রণভার বাংলার মানুষের হাতে চলে যায়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে দেশ। কিছু সেনানিবাস ছাড়া দেশের অন্য কোথাও পাকিস্তানী শাসনের কোন নিদর্শন ছিল না। জাতির পিতার এই সম্মোহনী ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারে তিনি অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন। সামরিক আদালতের বিচারে তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।
জাতির পিতার নির্দেশে পরিচালিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার এই ভাষণের দিক-নির্দেশনাই ছিল সে সময়ের বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র।
তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার অনন্য বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার আলোকে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাঙালি জাতির আবেগ, স্বপ্ন ও আকাঙ্খাকে একসূত্রে গ্রথিত করেন। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণে দিক-নির্দেশনাই ছিল সে সময়ের বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র যার আবেদন আজও অ¤øান। প্রতিনিয়ত এ ভাষণ তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে এবং অনাদিকাল ধরে অনুপ্রাণিত করে যেতে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, মা বেগম ফজিলাতুন্নেছাসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদতবরণকারী পরিবারের সকল সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

 



 

Show all comments
  • তানিয়া ২ নভেম্বর, ২০১৭, ৪:০২ এএম says : 0
    অবশ্যই। এটা দেশের জন্য গৌরবের
    Total Reply(0) Reply
  • M.A. Razzaq ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৯ পিএম says : 0
    দলমত নির্বিশেষে সবার মেনে নেয়া উচিৎ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙ্গালী জাতীর মুক্তির সনদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০০ পিএম says : 0
    ইউনেসকো যখন রামপাল বিদুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে ছিলো তখন তারা খারাপ ছিলো!এখন তারা খুব ভালো!!!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Alamgir ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০০ পিএম says : 0
    অনতিবিলম্বে আব্রাহাম লিংকনের গ্যাটিসবার্গ এ্যাড্রেস ভাষণের মত আমাদের দেশের নবম-দশম বা একাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে ইংলীশ ভার্সনে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে অর্ন্তভূক্ত করা হউক।
    Total Reply(0) Reply
  • Khokan ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০০ পিএম says : 0
    ৭ ই মার্চের ভাষণ শুধু বাঙালির জন্য নয় সারা বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Jahinur Islam ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০১ পিএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি। বাংলাদেশ স্বাধীনের তার প্রধান ভুমিকা রয়েছে।কিন্তু দেশে কি আজ সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা আছে.? আজ কি সবাই স্বাধীন ভাবে কথা/বসবাস করতে পারে.? কবি ঠিকেই বলেছেন "স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন"। যুগে যুগে এটা প্রমাণিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Jobayer ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০২ পিএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুর ভাষনের স্বীকৃতির কোনো দরকার হয় না এটা বাংলাদেশের মুক্তির দলিল হিসাবেই স্বীকৃত তারপরো ওদেরকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • পথিক ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০৩ পিএম says : 0
    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ভাষন বিশ্ব ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়াই ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Riad Mia ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০৩ পিএম says : 0
    ৭ই মার্চ শুধু একটি স্বাধীনতা ও বাঙালির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ভাষন নয়,এটা হলো একটি শোষিত জাতির যথাযথ বর্ণনা ও রাজনৈতিক মহাকাব্য!
    Total Reply(0) Reply
  • Aman Ul Hoque ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০৪ পিএম says : 0
    মনেহয় এখনো কোন ক্রান্তি লগ্নে এই একটি ভাষনই যথেষ্ট সমস্ত বাঙ্গালির রক্তে আগুন ধরিয়ে দিতে বুকে কাপুন ধরিয়ে দিতে। জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ