Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পরিবার ও সমাজে অস্থিরতা

মো. তোফাজ্জল বিন আমীন | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সামাজিক অবক্ষয় নদীর স্রোতের মতো প্রবেশ করছে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে। হেন কোনো অপরাধ নেই, যা এই সমাজ বা রাষ্ট্রে সংঘটিত হচ্ছে না। স্বামী স্ত্রীকে, বউ স্বামীকে, সন্তান মাকে, মা সন্তানকে, ভাই তার ভাইকে হত্যা করতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। সমাজ ও রাষ্ট্রে সুষ্ঠু বিচার না পেয়ে বাবা-মেয়ে, মা-মেয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। অর্থসম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ মামুলী বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য সন্তান হত্যা পর্যন্ত কেউ কেউ করছে। নরসিংদীর শিবপুরের চাচীর অপকর্ম দেখে ফেলার কারণে আগুনে পুড়ে জীবন দিতে হয়েছে ১৫ বছরের কিশোরী আজিজাকে। পারিবারিক বন্ধন স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতা, আত্মার টান সবই আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে। সমাজে এসব ঘটনা ঘটে মূলত নিজের স্বার্থ ও ছাড় দেয়ার মানসিকতা না থাকার কারণে। আগে মানুষ বড় পরিবারে সবাই মিলে একসঙ্গে বসবাস করত, তবু এত রক্তক্ষয়ী সংঘাত হতো না। এখন মানুষ ছোট ছোট পরিবারে বিভক্ত হয়ে গেলেও সামান্য কারণে প্রিয়জনকে হত্যা করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিক মূল্যবোধের পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধের দিকে নজর দিতে হবে।
একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও বিবেকবোধ পরিবার থেকেই জাগ্রত হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করতে সাহায্য করে বটে। কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের উন্মেষ ঘটাতে পারে না বলেই সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা দেখা দেয়। পরিবারের সবারই কম বেশি কিছু নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব একা কারও পক্ষে পালন করা অত্যন্ত কঠিন। একটা সময় তো এমন ছিল যে পরিবারের পিতা-মাতা সন্তানকে স্কুলে না পাঠালেও নৈতিক মানবিকতা শিক্ষা দিতো। এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। এখন অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, পিতা-মাতা সন্তানের পরীক্ষার ফল ভালো করার জন্যে নিজেরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। একশ্রেণির অভিভাবক এই সমাজে আছে যারা টাকা দিয়ে পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র খরিদ করতেও কুণ্ঠাবোধ করছে না। সবাই চায় তার সন্তান অনেক টাকা পয়সা উপার্জন করুক। কিন্তু খুব কমই চায় তার সন্তান একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ হোক।
আমাদের সমাজের সবাই খারাপ তা কিন্তু নয়! অনেক ভালো মানুষ রয়েছে। কিন্তু ঐ সমস্ত ভালো মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গাঁও-গেরামের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। শহরের উচ্চবিত্ত পরিবারে মধ্যেও ভালো মানুষের অভাব দেখা দিয়েছে, যা মোটেও কাম্য নয়। একশ্রেণির নীতিহীন অভিভাবক রয়েছে যারা টাকার বিনিয়ে সন্তানের চাকরির জন্য জমি বন্ধক বা বিক্রি করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। সন্তানের চাকরির জন্য ঘুষ দেয়াকে তারা অপরাধও মনে করছে না। এই অপরাধবোধটুকু যদি পিতা-মাতার বিবেকের মধ্যে জাগ্রত না হয় তাহলে দেশকে কীভাবে দুর্নীতি মুক্ত করা যাবে বোধগম্য নয়। এই অপসংস্কৃতির জোয়ার যত দিন এই দেশ বা সমাজে চলবে ততদিন সমাজ বা রাষ্ট্র থেকে অস্থিরতা দূর করা সম্ভব হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন