Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

২০২৪ সালের পর দেশে দারিদ্র্য থাকবে না

উন্নয়ন মেলায় অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আগামী ২০২৪ সালের পর দেশে আর কোনো দারিদ্র্য থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তঁর মতে, বর্তমান সরকার একটি জনবান্ধব সরকার। দারিদ্র্য বিমোচনে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২৪ সালের পর দেশে আর দরিদ্র মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। গতকাল রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ছয় দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনের সময় দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশ। সেটি আমরা এখন কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশে (বিবিএসের হিসেবে এখন দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৩) নামিয়ে এনেছি। দারিদ্র্য বিমোচনে পিকেএসএফের ভূমিকার প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যকে শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, পিকেএসএফ সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম।
তবে বিকেলে অন্য একটি সেমিনারে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য কখনো বিমোচন সম্ভব নয়। তবে কমানো যাবে। পুরোপুরি রিডিউস করা যাবে না। তাছাড়া একা একটি সরকারের পক্ষে দারিদ্র্য কমানো সম্ভব নয়’। তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাই না। দেশের মধ্যে প্রায় মৌলবাদিতা দেখা যায়। এটা অশনি সংকেত। আমার ধারনা সঠিক, আমাদের দেশ থেকে পুরোপুরি কখনো দারিদ্র্য যাবে না। এর কারণ, দেশে বিচারহীনতা। সবার ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অনেক জট পাকানো বিষয় আছে। প্রধামনন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছা সত্তে¡ও অনেক বিষয়ে হাত দিতে পারেন না। সে কারণে আমি বলছি, দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়।
আবদুল মান্নান বলেন, ‘যারা আমাদেরকে ঋণ দেয়, তাদেরকে আমরা দাতা সংস্থা বলি। অনেকে আমার কাছে নথি পাঠিয়ে বলে ওমুক দাতা সংস্থা এত টাকা প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করি, তারা কি ঋণ দিচ্ছে; না অনুদান দিচ্ছে। তখন কর্মকর্তারা বলে, ঋণ। আমি তাদেরকে বলি, ঋণ দিলে দাতা সংস্থা কেন বলব। তারা ঋণদানকারী সংস্থা। দুর্ভাগ্য আমাদের, কর্মকর্তাদের মাথায় ঢুকে গেছে তারা আমাদের দাতা। অথচ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা কারো কাছে হাত পাতবো না’।
ইউনূসের সমালোচনায় কৃষিমন্ত্রী
সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রী তার বক্তব্যে নোবেল জয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নাম না নিয়ে তার সমলোচনা করে বলেন, ‘দা থেকে আছাড়ি বড় হলে সমস্যা। আপনি সরকার থেকে টাকা নেবেন। আর দেশের বাহিরে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবেন। পদ্মা সেতুতে টাকা না দিতে বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দেবেন। এটা হতে পারে না। বর্তমান সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে দেখিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে’।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, মেয়েরা হাত বদলের পণ্য নয়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মেয়েরা কি হাতবদলের জিনিস?। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিদের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কয়দিন আগে রাজধানীর রূপনগরে জঙ্গি অপারেশন হয়েছিল। সেখানে শাকিরা নামের এক মেয়ে ছিল। ঘরের ভেতর বীরপুরুষেরা বসে থেকে বাইরে পাঠাল মেয়েটাকে। মেয়েটার প্রথম স্বামী ক্যান্সারে মারা যায়। বিয়ে করার পর শাকিরা জানতে পারল, দ্বিতীয় স্বামী জঙ্গি। পরে সে নিজেও জঙ্গি হলো। জঙ্গিরা আসলে ঠিক করে রাখে, একজন নারী মারা যাওয়ার পর তাঁর অমুকের সঙ্গে বিয়ে হবে, অমুক মারা গেলে আরেকজনের সঙ্গে বিয়ে হবে। পিকেএসএফ মেয়েদের এই বোধ থেকে বের করে আনতে পারলে সেটা হবে মহৎ কাজ’।
কৃষি মন্ত্রী বলেন, সরকার গণমুখী না হলে উন্নয়ন সংস্থাগুলো যতই পাথরে মাথা ঠুকুক, বেশি দূর এগোতে পারবে না। দা থেকে আছাড়ি বড় হলে সমস্যা। সরকার ভুল করলে তা ধরিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে সরকারের অযৌক্তিক বিরুদ্ধাচরণ করা ঠিক না। মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, ‘আজকে গ্রামের সাধারণ নারীরাও মোবাইলে নম্বর টিপতে পারে। অথচ একটা সময় ছিল, ফোন করলেও ১০ টাকা, ধরলেও ১০ টাকা। সেখান থেকে বের করে আনা হয়েছে। এখন একজন বৃদ্ধও ফোন করতে পারেন। কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘উন্নয়ন আগে না কি মানবাধিকার আগে এটা নিয়ে দেশে বিদেশে অনেক বির্তক হচ্ছে। তবে পিকেএসএফ অধিকারের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ, অধিকার নিশ্চিত করা গেলে উন্নয়ন এমনতিই হয়ে যায়। তিনি বলেন, উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করি’।
প্রান্তিক পর্যায়ের উৎপাদনকারীদের পণ্যের বাজার স¤প্রসারণ করতে উন্নয়ন মেলার আয়োজন করেছে পিকেএসএফ। মোট ৯০টি প্রতিষ্ঠানের ১৩৩টি স্টল মেলায় অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় প্রতিদিন সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। আগামী ৩ নভেম্বর শুক্রবার মেলার শেষ দিন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ