Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেলে কাটা পড়ে কেন এত প্রাণহানি

মো. তোফাজ্জল বিন আমীন | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেল লাইনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য থেকে জানা গেছে, এবারের কোরবানির ঈদে ঘরমুখো ও ফিরতি যাত্রায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৩২২ জন। এর মধ্যে রেলপথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশ রেল পুলিশের ভাষ্যমতে, ২০১৬ সালে প্রায় এক হাজার মানুষ রেললাইনে কাটা পড়ে মারা গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে আরো বেশি হবে। গত ৭ অক্টোবর শুক্রবারে কমলাপুর, মহাখালী এবং গাজীপুরের শ্রীপুরে রেলে কাটা পড়ে তিনজনের মৃত্যু য়েছে। গত সাত মাসে সারা দেশে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা ছয় শতাধিক। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গড়ে প্রতিদিন দুইয়ের অধিক মানুষ রেলে কাটা পড়ে মৃত্যুর মিছিলে শামিল হচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। রেললাইনের উপর দিয়ে হাঁটা আইনত নিষিদ্ধ হলেও অনেকে তা মানছে না। যদিও ১৮৯০ সালের রেল আইনে বলা হয়েছে, রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুটের মধ্য দিয়ে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। রেলকতৃপক্ষ যদি জনগণের ভেতরে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে তাহলে দুর্ঘটনা মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব।
আমরা মনে করি, কয়েকটি সমস্যার সমাধান করতে পারলে রেলে কাটা পড়া মানুষের সংখ্যা কিছুটা হলেও কমবে। অনেক সময় দেখা গেছে, কোনটা রেল ক্রসিং আর কোনটা রাস্তা তা চোখে দেখা যায় না। ঢাকার কারওয়ান বাজার ও মহাখালী রেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই দেখা যায় রাস্তার দুপাশে কয়েক’শ মানুষ রেল লাইনের উপর দিয়ে হাঁটছে। বিশেষ করে লেগুনা ও বাস চালকেরা যাত্রী উঠানোর জন্যে রেল লাইনের উপরই দাঁড়িয়ে থাকে। সিগন্যাল পড়লেও তারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই রেলক্রসিং পার হওয়ার চেষ্টা করে। এতে করে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। এমনকি কর্তব্যরত গেটম্যানের গাফিলতির কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা সময় মতো ক্রসিংয়ের উপর দিয়ে যানবাহন ও পথচারিদের সরানোর কাজটি করে না। রেললাইনের উপর বাজার, বস্তি ও বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বাজার ও স্থাপনা উচ্ছেদের নামে ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা কমবে।
রেললাইনে বহু কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এর মধ্যে লেভেল ক্রসিং মূলত দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর জন্য দায়ী। দেশে রেলওয়ের নেটওয়ার্কে দুই হাজার ৫৪১টি লেভেল ক্রসিং থাকলেও গেটম্যান আছে মাত্র ২৪২টিতে। এ ছাড়াও দেশব্যাপী ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক লেভেল ক্রসিং তৈরি হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই অনেক রেল ক্রসিং ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে করা হয়েছে। এইগুলির সিংহভাগই অরক্ষিত। ক্ষমতাসীন সরকারের ছত্রছায়ায় রেললাইন ঘেঁষে শত শত বস্তিঘর এবং ভ্রাম্যমাণ বাজার গড়ে উঠেছে। রেলপুলিশ রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু হওয়ার পেছনে তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেছে। প্রথমত রেললাইনে বসে আড্ডা দেয়া, দ্বিতীয়ত কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে বা মোবাইলে কথা বলতে বলতে রেল লাইনে হাঁটা, তৃতীয়ত রেল আসতে দেখেও দ্রæত পার হওয়ার চেষ্টা করা। রেলে কাটা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য জনসচেতনা বাড়ানো বিকল্প নেই। রেলকর্তৃপক্ষের উচিত, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা। লিফলেট, প্রচারপত্র বিলি করে জনসচেতনতা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি বড় স্টেশনগুলোতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কী করণীয় সে সম্পর্কে ব্যানার, ফেস্টুন, মাইকিং করার ব্যবস্থা করা। আর ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাকে চিহ্নিত করে একটা সময়সূচি সংশ্লিষ্ট এলাকার স্পটে টানিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা। যাতে লেখা থাকবে রেল কখন আসবে এবং কখন যাবে। সম্ভব হলে রেললাইনের দুই পাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন