Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝগড়া নয়, কূটনৈতিকভাবে হবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান -মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

পঞ্চায়েত হাবিব : | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে আছে। আমরা কারো উসকানিতে পা দেবো না। আমাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। মিয়ানমারের সঙ্গে বাড়াবাড়ি নয়, ধৈর্য ধরে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি বন্ধ করার প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান। তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। ১৯৯২ সালের চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আলোচনা হবে। আলোচনায় কী কী সংশোধন করা যায় সেই বিষয়গুলো নিয়ে পরে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে চাল গম আমদানির বিষয় নিয়ে আলোচনা ওঠে। এ সময় মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির বন্ধ করার প্রসঙ্গটি ওঠে আসে। তখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মিয়ানমার তো বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা সেখান থেকে চাল আনছি। অর্থমন্ত্রী এ কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক, তবে বাড়াবাড়ি, ঝগড়া করে তো সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ধৈর্য ধারণ করে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে। যদি আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করতাম, তা হলে বিশ্বজনমত আমাদের পক্ষে থাকত না। বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে আছে। আমরা কারো উসকানিতে পা দেবো না। আমাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। ক‚টনৈতিক তৎপরতাও চলবে, মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যও চলবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখা যাবে না। তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক চলছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যও চলছে। আমরা কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করব এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ছিলাম, তখন মিয়ানমার উসকানি দিয়েছে। আমরা তাতে কান দেইনি। আমরা বাড়াবাড়ি করলে হয়তো পরিস্থিতি অন্য রকম হতো।
সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে খাদ্যের কোনো সমস্যা হবে না। প্রচুর চাল, গম আমদানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেসরকারিভাবে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল গম আমদানি হয়েছে। সরকারিভাবে সাত-আট লাখ মেট্রিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে সতর্কভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ভারতের বর্তমান সরকারের প্রতিবেশী অগ্রাধিকার (নেইবার ফাস্ট) নীতির মধ্যে বাংলাদেশ সবার আগে, সবার উপরে। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক কেবল প্রতিবেশীই নয়, আত্মীয়তার বন্ধনের মতো। দুই দেশের কোনো সমস্যাই অমিমাংশিত থাকবে না। ভারতের হাই কমিশন নতুন চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ও ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সুধী সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সুষমা স্বরাজ বলেন, আমরা স্থল সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নসহ বিবাদমান অনেক সমস্যাই মিটিয়ে ফেলেছি। এখনো যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে, তা বন্ধুত্বের ভিত্তিতেই সমাধান হবে। সে বিষয়টি নিয়েও কথা হয়েছে।
অপর এক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৯২ সালের চুক্তি ভঙ্গ করেছে মিয়ানমার। ১৯৯২ সালে মিয়ানমার সরকার সম্মত হয়েছিল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারা এমন কোনো আচরণ করবে না, যাতে করে তারা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। অথচ তারা সেই চুক্তি ভঙ্গ করে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যাতে করে নারী ও শিশুরাও নিরাপদ নয়। মিয়ানমারে বসবাসকারীরা যেন বাংলাদেশে পালিয়ে না আসে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার সম্মত হয়েছে। তবে মিয়ানমার বারবার এর লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মিয়ানমার যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, মন্ত্রিসভায় ১৯৯২ সালের চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার যে কথা সু চি বলেছেন। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আবার নতুন নতুন করে কী কী সংশোধন করা যায়, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে নে উইন সরকার মিয়ানমারে ক্ষমতায় এলে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে প্রথম রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে আসা শুরু করে, তখন সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চুক্তি করে। এরপর ১৯৯১-৯২ সালে তারা আবার দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করলে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে ওই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০৫ সালে রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া মিয়ানমার এককভাবে বন্ধ করে দেয়। ২০১২ সালে সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার অজুহাতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করলে তারা আবার আসা শুরু করে। ২০১৬ সালে তিনটি পুলিশ চৌকিতে আক্রমণের অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ওপর ফের নতুন করে নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে আট লাখ ৮৯ হাজার রোহিঙ্গা : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মতে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মোট আট লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ জন। মিয়ানমার সরকারের দাবি, গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের অন্তত ৩০টি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এরপর সেখানে সেনা অভিযান শুরু হলে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের পথে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জায়গায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা আটকা পড়ে। তবে সুযোগ বুঝে তারা এখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সহিংসতার পরে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা। রাখাইন রাজ্য থেকে এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে তিন লাখ সাত হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট আট লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। হাজার মাইল পথ হেঁটে রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক পথ হাঁটার কারণে অনেকে এখন নানা রোগে ভুগছেন। ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থার জন্য সহায়তা করছে। সেইসঙ্গে বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও ওষুধ সরবরাহও করছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অবহিত : ভোলার শাহবাজপুরের নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান
ভোলায় নতুন একটি গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আছে। এটা আমাদের দেশের জন্য বেশ ভালো সুসংবাদ। নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অবহিত করা হয়।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্স ভোলার শাহবাজপুরের পাশে নতুন একটি গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে, যেখানে ৭০০ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস পাওয়া যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে ওই বৈঠকের পরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন শফিউল আলম। তিনি বলেন, ৭০০ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস হয়ত আছে। আগে ওখানে যে কূপ আছে সেটা মিলে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংস্থান ওখানে আছে বলে আমরা ধারণা পেয়েছি। সচিব বলেন, নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান শাহবাজপুরের বর্তমান গ্যাসক্ষেত্র থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার টগবি ইউনিয়নে। অনুসন্ধানে গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছিল। তবে যাচাই-বাছাই করে আজ আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সেখানে কী পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় গ্যাস ক্ষেত্র। সা¤প্রতিক সময়ে এত বড় ক্ষেত্র আর পাওয়া যায়নি। আরও যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা উত্তোলনযোগ্য প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারব। সচিব বলেন, নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান শাহবাজপুরের বর্তমান গ্যাসক্ষেত্র থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে, বোরহানউদ্দিন উপজেলার টগবি ইউনিয়নে। অনুসন্ধানে গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছিল। তবে যাচাই-বাছাই করে আজ আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সেখানে কী পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটা একটা বড় গ্যাস ক্ষেত্র। সা¤প্রতিক সময়ে এত বড় ক্ষেত্র আর পাওয়া যায়নি। আরও যাচাই-বাছাইয়ের পর আমরা উত্তোলনযোগ্য প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারব।
জানা গেছে, ভোলার শাহবাজপুর ক্ষেত্র থেকে ২০০৯ সালের ১১ মে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। সেখানে থাকা চারটি কূপের মধ্যে তিনটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। শাহবাজাপুরে ৩৫ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে বাপেক্সের প্রকৌশলীরাদের বলে জানিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ব তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ২৬টি গ্যাস ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত প্রমাণিত গ্যাসের মজুদ ছিল ১৩ দশমিক ৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে গত কয়েকবছরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে উত্তোলন বাড়িয়ে দৈনিক ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সারা দেশে দৈনিক চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের। চাহিদা মেটানোর জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র থেকে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। স্থল, অগভীর ও গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির লক্ষ্যে একাধিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজও চলছে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ গ্রাহককে গ্যাস দিতে হয়। উৎপাদিত গ্যাসের ৪২ শতাংশ যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে. ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয় ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। আর ১৭ শতাংশ গ্যাস শিল্প কারখানায়, ১১ শতাংশ আবাসিক সংযোগে, ৭ শতাংশ সার কারখানায় এবং ৬ শতাংশ গ্যাস যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে তথ্য উপস্থাপন : বিদেশে জনশক্তি রফতানি বেড়েছে, কমেছে রেমিট্যান্স
গত অর্থবছরে বিদেশে জনশক্তি রফতানি বাড়লেও কমেছে রেমিট্যান্স। এ অর্থবছরে বিদেশে জনশক্তি পাঠানো হয়েছে আট লাখ ৯৪ হাজার ৫৪ জন। আগের অর্থবছরের চেয়ে এটা ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। তবে আগের অর্থবছরের চেয়ে গতবছর রেমিট্যান্স কমেছে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমেছে বলে মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন ২০১৭, এর খসড়ার চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
পরে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আট লাখ ৯৪ হাজার ৫৪ জন জনশক্তি রফতানি করা হয়েছে, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ৩০ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। জনশক্তি রফতানি রাড়লেও রেমিট্যান্স কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের থেকে ২০০৬-১৭ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। কেন কমেছে সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা কমার বড় কারণ হচ্ছে- সরকারি চ্যানেলে লোকজন কম টাকা দিতে চাচ্ছে। হয়তো এটা অন্য ফরমে চলে আসছে। শফিউল আলম বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ৮৪৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় হয়, যা তার আগের অর্থবছরের থেকে এক দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ট্যাক্স আদায় হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, আগের অর্থবছরের (২০১৫-১৬) থেকে সাত দশমিক সাত শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় ছিল। এটা বেড়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ৬০২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় সমাপ্তিযোগ্য ৩৪১টি প্রকল্পের মধ্যে ৩১২টির কাজ শেষ হয় । তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয়ের পরিমাণ ২০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের গম, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, পাট, শাকসবজি, চিনি, মাছ, গোশত, দুধ, ডিম এবং কয়লার প্রকৃত উৎপাদন বেড়েছে বলেও মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুতের উৎপাদন ৪৪৩ মেগাওয়াট বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ৪৯৭ কিলোমিটার বিতরণ লাইন এবং ৫৪৩ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকায় যানজট নিরসনের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর সঙ্গে এমআরটি লাইন-৬ বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্ধারিত সময়েই চালু হবে। এর অংশ বিশেষ ৩১ দশমিক ২০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড এমআরটি হিসেবে পাতাল রেল নির্মিত হবে। শফিউল জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার রেললাইন মেরামত করা হয়েছে। নতুন নির্মাণ করা হয়েছে ৪৫ দশমিক ২৮ কিলোমিটার নতুন রেলপথ, ৪৭টি নতুন রেলসেতু ও ১০টি স্টেশন। এ ছাড়া ২২টি রেলসেতু পুনর্নির্মাণ এবং ছয়টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ গত জুন মাস পর্যন্ত ২৭৬ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং শেষ করেছে। বিআইডব্লিউটিসি ৪৮টি যাত্রীবাহী জাহাজ, ৫০টি ফেরি, ৪০টি কার্গো জাহাজ এবং ৫৩টি সহায়ক জাহাজের সমন্বয়ে তিনটি ইউনিটের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও উপক‚লীয় রোডে নিরাপদ যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইনের খসড়ার চ‚ড়ান্ত অনুমোদন
শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৭-এর খসড়ার চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শফিউল বলেন, প্রতিষ্ঠানটি পুরনো, এটাকে আইনি কাঠামো দেয়ার জন্য নতুন আইন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মতোই, পরিচালনা পর্যদ, একাডেমিক কাউন্সিল আছে। এই ইনস্টিটিউট যুবকদের প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম প্রণয়ন, যুবককর্মের ওপর উচ্চতর গবেষণা ও মূল্যায়ন, সেমিনার-কর্মশালার আয়োজন এবং একাডেমিক ডিগ্রির পাশাপাশি ডিপ্লোমা সদনও দিতে পারবে। শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য একটি নির্বাহী কাউন্সিল থাকবে। শফিউল আলম বলেন, এই কাউন্সিলের প্রধান হবেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব। তার সঙ্গে আরো ২০ জনকে নিয়ে মোট ২১ সদস্যের এই কাউন্সিল তিন বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবে। এই কাউন্সিলকে সহায়তা করতে একটি একাডেমিক কাউন্সিল থাকবে। একাডেমিক কাউন্সিলের প্রধান হবেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ