Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চিনিশিল্পকে প্রাধান্য দিতে হবে

এবিসিদ্দিক | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রায়ত্ব বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনকে(বিএফআইসি) নিতে হবে। নিজস্ব চিনি কলে উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানির দায়িত্ব থাকতে হবে এই প্রতিষ্ঠানের। রাষ্ট্রায়ত্ব এই বৃহৎ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পটি প্রতিবছরই লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিকেজি চিনি ডিলারদের মধ্যে(লুজ) ৬০ টাকা আর প্যাকেট বিক্রি করা হচ্ছে ৬৫ টাকায়। এতে কেজি প্রতি লোকসান দিতে হচ্ছে প্রায় অর্ধেক। সরকার অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ব খাতে ভতুর্কি দিলেও এখাতে কোন ভতুর্কি দিচ্ছে না। এই শিল্পের সাথে যেমন কয়েক লাখ আখ চাষি পরিবার জড়িত, সেই সাথে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি জাড়িত। চিনি বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মূলতঃ আমদানিকারক ও পরিশোধনকারি মিল মালিকরা। তারা প্রচুর মুনাফা করছে। বর্তমানের আমদানিকৃত পরিশোধনকারি প্রতিকেজি চিনির দাম পড়ছে (সরকারের ট্যাক্স সহ) ৪৯ টাকা আর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। প্রতিজেজি চিনিতে মুনাফা ২৫ থেকে ৩০ টাকা। দেশের বাজারে চিনির দাম ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দাম বাড়ার কারণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিলেও সুস্পষ্ট যুক্তি দেখাতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের কেউ বলছেন, সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছে, কেউ উৎপাদনে ঘাটতি কথা বলছেন, আবার কেউ বা আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দর বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করছেন। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, মুনাফালোভী মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরাই কারসাজি করে চিনির দাম বাড়িয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বছরে দেশে চিনির চাহিদা ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মিলগুলো বছরে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন চিনি উৎপাদন করে। বাকিটা বেসরকারি পরিশোধিত চিনি কলে উৎপাদন ও আমদানি হয়ে থাকে। প্রায় ১১ লাখ টন চিনি উৎপাদন করে বেসরকারি পরিশোধনকারি মিল মালিকরা। আবার আমদানি করা মিহি দানার সাদা চিনির ক্ষতিকর উপাদান নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট। স¤প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশীয় আখের চিনির পরিবর্তে আমদানি করা চিনিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে অনেক বেশি মাত্রায়। তাই আমদানি করা এই চিনিকে বিষের সাথে তুলনা করে তা নাখাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকগণ। আমদানিকৃত অপরিশোধিত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিধায় এনিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই চিনির বিকল্প তালাশ করছে পশ্চিমাবিশ্বের উন্নত দেশগুলো। যেসব দেশে আখের চিনি উৎপাদনের ব্যবস্থা নেই সে সব দেশে বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে স্টিভিয়া। বাংলাদেশে আখের চিনি (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার অধীনস্থ চিনি কলের উৎপাদিত চিনি) থাকলেও ভোক্তা সাধারণ আমদানিকৃত চিনির প্রতি বেশি আগ্রহী। যার সুযোগটা নিচ্ছেন আমদানিকারকরা । এছাড়া সঠিকভাবে এই চিনি পরিপাক না হওয়ায় কার্বোহাইড্রেড রাসায়নিক রূপান্তর হয়ে বিষাক্ত কার্বন পরমানু সম্বলিত অস্বাভাবিক চিনি ও পাইরোভিক এসিড তৈরি করে। এই পাইরোভিক এসিড মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে জমা হয়। তাছাড়া রক্তের লোহিত কণিকায় অস্বাভাবিক চিনি জমাট বাঁধে। দেহকোষে টক্সিক এসিড নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ফলে এ কোষগুলো সতেজ থেকে স্বাভাবিক কার্যকর ভূমিকা রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না। এক সময় এ কোষগুলো মারা যায়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্থ হয়ে নানাবিধ জঠিল রোগের জন্ম দেয়। অপরদিকে আখের চিনিতে কার্বোহাইড্রেড পরিপাক করার জন্য প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস্ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকে। চিনির অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে রাষ্ট্রায়ত্ব চিনি শিল্পকে প্রাধান্য দিতে হবে। বাড়াতে হবে আখে উৎপাদন, প্রয়োজনে বিকল্প কাঁচামাল বিটের চাষ শুরু করতে হবে। আর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে চিনি শিল্প করপোরেশনের মাধ্যমেই চিনি আমদানি করতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার রাষ্ট্রায়ত্ব চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের মাধ্যমে মান সম্পন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত চিনি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। এক লাখ টন চিনি আমদানি প্রক্রিয়াধিন আছেন। এই আমদানি চলমান থাকলে একদিকে যেমন রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ঠিকে রাখা সম্ভব হবে, অপরদিকে বাজার মূল্যও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ভোক্তা সাধারনকে বেশি দামে চিনি ক্রয় করতে হবে না।
লেখক: সাংবাদিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন