Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কর্মমুখী, আধুনিক ও বিশ্বমানের শিক্ষা অপরিহার্য

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিবিএস’র মতে, দেশে বর্তমানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ। আর ভিন্নমত হচ্ছে, দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৪.৬৬ কোটি। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী ৪ সপ্তাহ কাজ খুঁজেছে অথচ পায়নি, কিন্তু আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে কাজ পেতে পারে বা আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই বিদ্যমান মজুরিতে কাজ শুরু করবে এমন মানুষকে বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। এর মধ্যে শিক্ষিত বেকার ২.২০ কোটি। বিশ্বব্যাংকের সা¤প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের যুবসমাজের ৯.১% বেকার। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সা¤প্রতিক তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। এই অবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই ১০ লাখ বাংলাদেশীকে ফেরত আসতে হবে মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। এছাড়া কয়েক মাসে বেকারের সংখ্যা আরো বেড়েছে। কারণ, দেশ-বিদেশে তেমন কর্মসংস্থান হয়নি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব বাড়ছেই। ভবিষ্যতে এটি দেশের অর্থনীতিতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে’। অর্থাৎ তথ্য-প্রমাণে অনুমেয় বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ৫ কোটির অধিক। তারা চরম দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। যার বিরাট অংশ বিপথে ধাবিত হচ্ছে। অনেকেই ভিটে-মাটি বিক্রি করে দালালের কাছে কয়েক লাখ টাকা খুইয়ে বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে বিদেশে গেছে ও যাচ্ছে। এরই মধ্যে বহুজন বঙ্গোপসাগরে ও ভূমধ্যসাগরে অথবা আফ্রিকার মরুভূমিতে অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। আবার যারা সব বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে বিদেে পৌঁছতে পারছে, তাদেরও বিপত্তির অন্ত নেই। পালিয়ে বেড়ানো, কাজ না পাওয়া, উদ্বাস্তু শিবিরে থাকা, কাজ পেলেও ঠিকমতো বেতন না পাওয়া, নানা নির্যাতন ইত্যাদি রয়েছে। এসবও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে ও হচ্ছে। সর্বপরি অবৈধভাবে থাকতে গিয়ে ধরা পড়ে ৩৮টি দেশের কারাগারে রয়েছে ৯৬৪০ জন বলে চলতি বছরের প্রারম্ভে জানা গেছে। ইতোমধ্য এই সংখ্যা আরো বেড়েছে। কারণ, বিদেশে বন্দি থাকাদের দেশে ফেরত আনার বা মুক্ত করার চেষ্টা তেমন করা হয় না আমাদের দেশের পক্ষ থেকে! অথচ অন্য যেকোন দেশের একজন মানুষও যদি অন্যদেশে বন্দি থাকে, তাহলে তাকে উদ্ধার করার জন্য সরকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ব্যাপক তৎপরতা চালায়। যা’হোক, কর্মসন্ধানী মানুষের দেশের বাইরে উল্লেখিত বর্ণনাতীত পরিস্থিতির যারা শিকার হয়েছে, তাদের অর্ধেকের বেশি শিক্ষিত ও উচ্চ শিক্ষিত। এরা এবং অবশিষ্টরা যদি দেশে কাজ পেত, তাহলে বেকার থেকে নিজে এবং পরিবারের সকলকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেত না। কিংবা বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে বিদেশে গিয়ে চরম পরিস্থিতির শিকার হতো না। মা-বাবা, ভাই-বোন ও অন্য আপনজনের আদর-সোহাগের মধ্যেই দিনাতিপাত করতো। বিবাহ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখী সংসার গড়ে তুলতো। নিজের ও দেশের উন্নতি করতো। এ মধুর স্বপ্ন শুধু তাদেরই নয়- প্রতিটি মানুষেরই। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে কাজ না পেয়ে। অন্যদিকে প্রায় এক কোটি পদে লোক পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিআইডিএস’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যার সারাংশ হচ্ছে: ‘দেশে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে পৌনে দু’লাখ পোশাক শিল্পে, ২ লাখ নির্মাণ খাতে, পৌনে দু’লাখ স্বাস্থ্যসেবা খাতে (নার্সিং ও টেকনিশিয়ান মিলে), ৮৮ হাজার তথ্য প্রযুক্তি খাতে, ৩৬% হালকা প্রকৌশল খাতে, ৭৬% কৃষিজাত পণ্যে (এর মধ্যে পুরোপুরি দক্ষ কর্মীর সংকট ৭৭%, আধাদক্ষ ৭৫% ও অদক্ষ ৭৫%) এবং হসপিটালিটি ও পর্যটন খাতে আধাদক্ষ ৬২ হাজার, অদক্ষ ১ লাখ ২৬ হাজার এবং দক্ষ ৩৭ হাজার কর্মীর অভাব রয়েছে। এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘আগামী ২০২০ সাল নাগাদ দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে কৃষিজাত পণ্য খাতে ২৯ লাখ, পোশাক শিল্পে ৬০ লাখ, স্বাস্থ্য সেবা খাতে ১২ লাখ ৯০ হাজার, চামড়া খাতে ১৮ হাজার, আইটি খাতে ২০ হাজার, নির্মাণ খাতে ৪৪ লাখ, হালকা প্রকৌশল খাতে ৬৮ হাজার, জাহাজ শিল্প খাতে ৭ হাজার । এ সংকট পূরণে ২০২১ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পে ১৫ লাখ এবং বাকি ৮টি খাতে আরও ৪০ লাখ কর্মীকে দক্ষ করে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা খাতে নার্সিং ও মেডিকেল টেকনিশিয়ানের প্রকৃত ঘাটতির ব্যাপারে নীতিগত স্বীকৃতি দিয়ে তা পূরণে দ্রুত গুণগত প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। একইভাবে কৃষিজাত পণ্য খাতে গুণগত মান নিশ্চিত করতে ফুড টেকনোলজিস্ট এবং ফুড প্রকৌশলী গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে’। প্রতিবেদনটি প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, ‘দক্ষ কর্মীর অভাব আগে থেকেই ছিল। প্রতিটি বাজেট বক্তব্যে আমি এ বিষয়টি আনার চেষ্টা করেছি। আজকের এই গবেষণা প্রতিবেদনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন রয়েছে। জাহাজ শিল্পে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার ৫ লাখ কর্মী প্রশিক্ষণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। উন্নয়নশীল দেশের জন্য দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। কারণ যে পরিমাণ উন্নয়ন হচ্ছে এর জন্য দক্ষ শ্রমিক খুবই প্রয়োজন। শুধু বিদেশে দক্ষ শ্রমিক রফতানির জন্য নয়, অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে এর প্রয়োজন রয়েছে।
বিআইডিএস’র উক্ত প্রতিবেদনে শুধুমাত্র দক্ষ শ্রমিকের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে আরো লাখ লাখ আধাদক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে, গত আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত হিসাববিদদের সন্মেলনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে ১,২০০ হিসাববিদ আছে। কিন্তু এর চাহিদা হচ্ছে ১৮ হাজার। আরো উল্লেখ্য, দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা রয়েছে কয়েক লাখ, যা আইনত নিষিদ্ধ। তবুও দরিদ্র সন্তানরা জীবিকার তাগিদেই এই নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত রয়েছে। অবশ্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে,২০২১ সাল নাগাদ বিপজ্জনক শিশুশ্রম এবং ২০২৫ সাল নাগাদ দেশকে শিশুশ্রম মুক্ত করা। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে(?) এখানেও কয়েক লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এর বাইরে রয়েছে কয়েক লাখ গৃহকর্মী শিশু শ্রমিক, যার অধিকাংশই নারী। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ওয়ার্ক ফ্রি ফাউন্ডেশনের বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক, ২০১৬ অনুযায়ী বিশ্বের ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। এই সূচক অনুসারে, বাংলাদেশের ১৫ লাখ ৩১ জার ৩০০ মানুষ ‘আধুনিক দাসের’ জীবন যাপন করে। এর আগে বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক ২০১৪-তে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল নবম। তখন দেশে আধুনিক দাসের সংখ্যা ছিল ছয় লাখ ৮০ হাজার ৯০০ জন। সূচকে জোরপূর্বক শ্রমকাজে অথবা জোরপূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা, বাণিজ্যিকভাবে যৌনকাজে ব্যবহার ও মানবপাচারের শিকার লোকজনকে দাস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এসব শ্রমিকদের মুক্ত করা হলে তদস্থলে প্রয়োজন হবে কয়েক লাখ শ্রমিক। অন্যদিকে, বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, এ দেশে কয়েক লক্ষ বিদেশী অবৈধভাবে কাজ করছে। যার ৮০% ভারতীয়। এদের অধিকাংশই টেকনিকাল ও হাই অফিসিয়াল কর্মে লিপ্ত। এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর মন্তব্য স্মরনযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিদেশে ১.১০ কোটি বাংলাদেশী কাজ করে বছরে দেশে পাঠাচ্ছে ১৫ বিলিয়ন ডলার। অথচ মাত্র দ্ইু লাখ বিদেশী পেশাজীবী নিয়োগের মাধ্যমে আমরা বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলছি’। এই বিদেশীদের আউট করে দেওয়া হলে সে স্থানেও কয়েক লাখ দক্ষ লোকের দরকার। অপদিকে, আগামী এক দশকে বিশ্বে দশ লাখ পাইলট দরকার। অন্যদিকে, গত মার্চ মাসে সরকারী পদ শূণ্য ছিল প্রায় সাড়ে তিন লাখ (মোট পদের ১৯%) বলে এক দৈনিকে প্রকাশ। বর্ণিত শূন্য পদগুলো কিন্তু শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানের। এর বাইরে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে বহু এবং তাদের লোকের ঘাটতির সমষ্ঠি বর্ণিত ঘাটতির চেয়ে অনেক বেশি। যেমন সব রকমের নষ্ট ইলেকট্রিকাল পণ্যের মেকানিক, কম্পিউটার অপারেটর, গৃহকর্মীসহ বিভিন্ন কাজের বহু দক্ষ কর্মীর প্রচন্ড অভাব রয়েছে। এভাবে দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ক্ষতির এখানেই শেষ নয়।বর্তমানে বিদেশে পৌনে এক কোটির মতো বাংলাদেশী কর্মরত আছে,তাদেও অধিকাংশই অদক্ষ/আধাদক্ষ। সর্বপরি তারা আন্তর্জাতিক ভাষা, বিশেষ করে ইংরেজী ভাষায় অদক্ষ। তাই তাদের অধিকাংশের কর্ম নিম্ন শ্রেণীর। এর মধ্যে ক্লিনার, বাবুর্চি, দোকানী ও নির্মাণ কাজে বেশি। তারা বেতন পায় অন্যদেশের শ্রমিকদের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। ফলে সংশ্লিষ্টরা ও দেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বিদেশ গমনেচ্ছুদের বিশ্বের চাহিদা মাফিক শিক্ষা ও দক্ষ করে গড়ে তোলা দরকার। সে সাথে অন্তত ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা প্রয়োজন। কারণ, ইংরেজী বিশ্ব ভাষায় পরিণত হয়েছে। আর আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত যেহেতু প্রবাসী আয়, তাই ইংরেজীতে অভিজ্ঞ এবং কাজে দক্ষ হওয়া ছাড়া আগামীতে বিদেশে কর্মসংস্থান কঠিন হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বিষয়ক একটি বিল কংগ্রেসে উত্থ্যাপন করা হয়েছে আগস্ট, ১৭ মাসের প্রথম সপ্তাহে। উক্ত বিলটির প্রধান শর্ত হচ্ছে, যারা অভিবাসী হয়ে আছেন এবং হবেন তাদেরকে অবশ্যই ইংরেজীতে দক্ষ হতে হবে। নতুবা ইমিগ্রান্ট হওয়া যাবে না এবং যারা ইতোমধ্যেই ইমিগ্রান্ট হয়ে আছেন, তাদেরটা বাতিল করা হবে। এরূপ অবস্থা মোটামুটি পশ্চিমা দেশগুলো জুড়েই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপস্থ বাংলাদেশীদের বেশিরভাগই ইংরেজীতে অদক্ষ। অপরদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৪০ লাখের বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই আরবীতে দক্ষ নয়। ফলে চাকরি পেতে অসুবিধা হয়। হলেও বেতন কম। অন্যদিকে, ভারতীয়দের বেতন বেশি। কারণ, তাদের অনেকেই আরবীতে দক্ষ। কারণ, ভারতের মাদ্রাসার মোট শিক্ষার্থীর ২৫% হিন্দু। তারা মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে চাকরি নেওয়ার লক্ষ্যেই মাদাসায় শিক্ষা গ্রহণ করে বলে বিবিসি বাংলার খবরে প্রকাশ। অন্যদিকে, দেশের নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হয়েছে। নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষার জন্যই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে পন্ডিতদের অভিমত। শিক্ষার মান খুব খারাপ হওয়ায় যারা কর্মরত আছে, তাদের উৎপাদনশীলতা এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। তেমনি জ্ঞাণভিত্তিক অর্থনীতিও পশ্চিমা দেশগুলো দূরে থাক, এই এশিয়া অঞ্চলের মধ্যেও নিম্ন। ফলে দেশের উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দেশী প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশী লোকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।
দেশে একদিকে ৫ কোটি লোক বেকার, অন্যদিকে কোটির অধিক দক্ষ লোকের অভাবে কাজ হচ্ছে না। অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রেই দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এর জন্য দায়ী কে? নিশ্চয় দেশ পরিচালনাকারীরা। বিশেষ করে শিক্ষা খাতের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। কারণ, দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান, তা সেকেলে। বর্তমান যুগে সম্পূর্ণ অচল। আর সে কারণেই মহাসংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে টিভির এক টকশোতে এক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির অভিমত প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর যারা শিক্ষা গ্রহণ করছে, তাদের কাজের সুযোগ দেশের মোট কাজের মাত্র ৫%, আর বাকী ৯৫% কর্মই উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় ও তার নিম্নপর্যায় পর্যন্ত এবং কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন। তাই বিপুল সংখ্যক লোকের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে লাভ কি? অপরদিকে, অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত: হাজার হাজার জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিগ্রী কলেজ থাকার দরকার কি? এসব বিভাগীয় শহরে একটি করে রেখে বাকীগুলোকে কারিগারী উচ্চ শিক্ষা কেন্দ্র এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সিক্স থেকে এসএসসি পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা (যেকোন একটি বিষয়ে)ও ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং প্রতিটি স্তরের শিক্ষার আধুনিক পাঠ্যসূচি চালু ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মানোন্নয়ন করা দরকার।
এই অবস্থায় বর্নিত বিশ্লেষণ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই রয়েছে গলদ। তাই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে আমূল পরিবর্তন করা দরকার। যেমন: দেশ-বিদেশের চাহিদা মাফিক কর্মমুখী শিক্ষা ও তার আধুনিক কারিকুলাম এবং বিশ্বমানের মানোন্নয়ন অপরিহার্য। আর এসব বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি স্তরেই মেধাবী শিক্ষক প্রয়োজন। কারণ, এনালগ শিক্ষক দিয়ে ডিজিটাল শিক্ষাদান হবে না। সর্বপরি শিক্ষার অনুকূল পরিবেশও সৃষ্টি করা দরকার। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষাঙ্গণকে জাতীয় রাজনীতিমুক্তকরণ ও নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ এবং আইন কানুন কঠোরভাবে প্রয়োগ, সাহিত্য চর্চা(সায়েন্স ফিকেসন ভিত্তিক), শরীর চর্চা, সাতার, নিদর্লীয় স্টুডেন্ট পার্লামেন্ট ইত্যাদিকে প্রাধান্য দেওয়া আবশ্যক। এছাড়া, অবিলম্বে সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের শূন্য পদ নিরপেক্ষভাবে পূরণ, নানাবিধ সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা দরকার। স্মরণীয় যে, উন্নত দেশগুলোর কর্ম প্রতিষ্ঠানগুলো ৫-১০ বছর মেয়াদী লোকের চাহিদা নির্ণয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানে প্রেরণ করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সে অনুযায়ী শিক্ষাদান করে উপযুক্ত কর্মী গড়ে তোলে। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করেই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে। তাদের বেকার থাকতে হয় না। কোন প্রতিষ্ঠানেরও কর্মীর ঘাটতি পড়ে না। এই পদ্ধতি আমাদের দেশেও চালু করা দরকার। অর্থাৎ আমাদের দেশেরও সব কর্ম প্রতিষ্ঠানকে ৫-১০ বছর মেয়াদী লোকের চাহিদা নির্ণয় করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা প্রয়োজন বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে। মন্ত্রণালয় তা কমপাইল করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করবে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সে অনুযায়ী শিক্ষাদান করবে। তাহলে আর কাউকে বেকার থাকতে হবে না। বিশেষ করে শিক্ষিত লোকের। আর প্রতিষ্ঠানগুলোরও দক্ষ লোকের ঘাটতি হবে না। উপরন্তু সব কর্ম প্রতিষ্ঠানে দক্ষ কর্মীবাহিনী গড়ে তোলার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন ও সকলকে মাঝে মধ্যেই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। তাহলেই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। ধরে নিতে হবে যে শিক্ষা গ্রহন করার পর চাকরি পাওয়া যাবে না।তাই এমন শিক্ষা গ্রহণ করা উচেৎ, যাতে নিজে নিজেই কর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করা যায়। যেমন: খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কারিগরী সংক্রান্ত শিক্ষা গ্রহণ করলে তার চাকরি খুঁজতে হবে না। নিজেই কর্ম করে চলতে পারবে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন