পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ব চার বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে শিল্পঋণের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ ও আবাসন ঋণের ক্ষেত্রে নয় শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে এসব ব্যাংকের সুদহার ছিল ১৩ শতাংশ পর্যন্ত। সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক নতুন সুদহার চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে এবং অগ্রণী ব্যাংক সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করেছে। এছাড়া সরকারি অন্যান্য ব্যাংকগুলোও শিগগিরই সুদহার কমাচ্ছে।
এদিকে ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে আমানতের সুদহার কমলেও স¤প্রতি কিছুটা বাড়ছে। মূলতঃ দীর্ঘ সময় পর বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এমনটি হয়েছে। গত আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। বেসরকারি খাতে ঋণ বৃদ্ধির এ প্রবণতায় গত আগস্টে ব্যাংকগুলোর আমানতের গড় সুদহার বেড়ে চার দশমিক ৯৩ শতাংশে ওঠে। আগের মাস জুলাইয়ে যা ছিল চার দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর আগের মাস শেষে ছিল চার দশমিক ৮৪ শতাংশ। গত তিন মাসে এভাবে সুদহার একটু করে বেড়েছে। দেশে বিদ্যমান ৫৭টি ব্যাংকের বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর শাখা সংখ্যা পাঁচ হাজারের মতো। এর ফলে এসব ব্যাংকে ঋণে সুদহার কমানো হলে তার প্রভাব পড়ে অনেক বেশি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাষ্ট্রায়ত্ব জনতা ব্যাংক ১৩ শতাংশ সুদে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় শিল্পে মেয়াদি ঋণ বিতরণ করছিল। এসব ক্ষেত্রে সুদহার দুই শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার সব ক্ষেত্রে সুদহার কমানোর বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে শাখা ব্যবস্থাপকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। সেখানে ১ অক্টোবর থেকে নতুন এ সুদহার হিসাব করতে বলা হয়েছে। একইভাবে ব্যাংকটি চলতি মূলধনের ওপর ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১-১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসন খাতেও সুদহার ১৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১-১২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের উপ-ব্যবস্থাপক মো. আবদুল হালিম বলেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বোর্ড অব ডিরেক্টরস ৪৯১তম সভার অনুমোদনক্রমে ঋণ ও অগ্রিম এর খাত সমূহ পূনবিন্যাসপূর্বক এ সুদ হার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর সুদের হার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করে দেয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ইচ্ছা করলেই সর্বনিম্ম রেট নির্ধারণ করতে পারে। কিন্ত নানা কারণে অনেকে তা করেন না। ব্যবসাবান্ধব মাত্রায় ঋণের এ হার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। হালিম আরও বলেন, আমরা ঋণের সুদহারের ওপর মূল্যায়ন করবো। এই মূল্যায়নে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে (ব্যাংকের যাবতীয় খরচের ওপর) যদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তবে ঋণে সুদের হার ফের পরিবর্তন হবে আর ইতিবাচক হলে সুদের হার আরও কমবে। এক্ষেত্রে সুদের হার আরও কমতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন ওই কর্মকর্তা।
অগ্রণী ব্যাংক গত সেপ্টেম্বরে ঋণের সুদহার কমায়। অন্য সব সরকারি ব্যাংকের চলতি মাস থেকে নতুন সুদহার কার্যকর করার কথা রয়েছে। এর আগেও সরকারি ব্যাংকগুলো কয়েক দফা সুদহার কমায়।
অগ্রণী ব্যাংকের ডেপুুটি জেনারেল ম্যানেজার খন্দকার জায়েদুল হক বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সুদহার কমানো সরকারের নীতিগত সিন্ধান্তের বিষয়। এখানে অনেকগুলো উপদানকে সামনে রেখে ঋণে সুদের হার কম-বেশি করা হয়। ভবিযৎতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদের হার পর্যায়ক্রমে সিঙ্গেল ডিজিটে নামতে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি। মুক্তবাজার ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার নির্ধারণ করতে পারে না। তবে ব্যাংকগুলো নিজেরা যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান প্রধান বলেন, সব ধরনের ঋণের বিপরীতে সুদহার কমানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমানো হয়েছে বড় উদ্যোক্তাদের ঋণের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, আবাসন খাতে সুদহার ১১ শতাংশ থেকে কমিয়ে নয় শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া প্রায় সব ধরনের ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা হয়েছে।
অন্যদিকে ঋণে সুদের হার কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সোনালী ব্যাংকও সব ধরনের ঋণের সুদহার কমিয়ে এনেছে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ঋণে সুদহার নামিয়ে আনা নিঃসন্দেহে খুব ভালো খবর। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে বিনিয়োগ আকর্ষণে এটা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তবে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর জোর দিতে হবে। আর কম সুদের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন এক খাতের নামে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী সমাজ।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছওে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ কম থাকায় ব্যাংকগুলোয় ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে ব্যাংকে জমেছে মাত্রাতিরিক্ত অলস অর্থ। এসব অর্থের বিনিয়োগ বাড়াতে এবং আমানতের চাপ কমাতে ব্যাংকগুলো আমানত ও ঋণের সুদের হার কমাতে থাকে। গত দুই বছরে ব্যাংকগুলো ব্যাপক হারে আমানতের সুদের হার কমিয়েছে কিন্তু সেই হারে ঋণের সুদের হার কমায়নি। ফলে ব্যাংকিং খাতে ঋণের চাহিদাও বাড়েনি। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর আয় কমে যায়। আয় বাড়াতে ঋণের ওপর যখন তখন চার্জ আরোপ করছে, আবার সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে ঋণগ্রহীতাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। এদিকে আমানতের সুদের হার মাত্রাতিরিক্ত কমানোয় গ্রাহকরা এখন ব্যাংকে আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে আমানতের একটি অংশ ভোগবিলাসে বা অন্য খাতে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের আশঙ্কা এতে ঋণ ও আমানতের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সুদকে সব সময় বাজারভিত্তিক রাখার জন্য সুদ পরিবর্তনের শর্ত থাকে কিন্তু আমাদের দেশে ব্যাংক কখনো সুদ কমায়নি। সব সময় বাড়ায়। এটি হয়েছে কারণ ব্যাংকিং খাতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়নি। এক ধরনের মনোপলির মধ্যে গ্রাহকরা পড়ে গেছেন। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণগ্রহীতারা বেশি বিপাকে। সুদ থেকে রেহাই পেতে গ্রাাহক আগেই ঋণ পরিশোধ করতে চাইলে সেক্ষেত্রে আর্লি সেটেলমেন্ট ফি আদায় করছে। এগুলো বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। কোনো ঋণের ক্ষেত্রে অহেতুক সুদহার বাড়ানো হচ্ছে কিনা তা দেখার উদ্যোগ নিতে হবে।
এরআগে চলতি বছর জুলাই থেকে কৃষি খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি ও প্রকৃত কৃষকদের কাছে ঋণ সহজলভ্য করতে কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা ১০ শতাংশের পরিবর্তে নয় শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহারের উর্ধ্বসীমা ১০ শতাংশ ধার্য করা হয় বলে ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।