ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, চালকের মাদক গ্রহণ, সিটবেল্ট না বাঁধা, হেলমেট ব্যবহার না করা এবং শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারকারীরা দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই প্রতিদিনই রাস্তায় তাজ প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের এ পর্যন্ত সারা দেশে দুর্ঘটনায় মারা গেছে এক হাজার ৯৬০ জনেরও বেশি মানুষ। আহত এবং পঙ্গু হয়েছে আরও কয়েকগুণ। মাসে ২ শ’ ১৮ জন এবং প্রতি দিন গড়ে ৭ দশমিক ২৫ জন মানুষ মারা গেছে।
আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা যেন অলঙ্ঘনীয় ব্যাপার, মৃত্যুদূত হয়ে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো। ঘর থেকে বের হয়ে আবার ঘরে ফেরা যাবে কি, এমন সংশয় বরাবরই থেকে যায়। প্রশ্ন হলো, সড়ক দুর্ঘটনায় আর কত প্রাণ যাবে? নিত্যনৈমিত্যিক এই সড়ক দুর্ঘটনার দায় কার? প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অকালে মৃত্যু বরণ করছে মানুষ। কোনো দুর্ঘটনায় গোটা পরিবারও শেষ হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, আর এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে, সরকারিভাবে নতুন নতুন সুপারিশ তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। পাগলা ঘোড়ারও লাগাম মনে হয় টেনে রাখা সম্ভব, কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা রোখা সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১২ হাজার মানুষের। দুর্ঘটনাকবলিত কোনো যানবাহনের চালককে আটক করা হলেও বেশির ভাগ সময়ই তাদের শাস্তি হয় না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমস্যা, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা, জরুরি ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাহীনতাও দুর্ঘটনা বাড়ার পেছনে দায়ী। শুধু চালকের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ নৈতিক ও কঠোর থাকতে পারলেই দুর্ঘটনা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আসলে সব পক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে উদ্যোগী হতে হবে। না হলে যে কেউ যে কোনো দিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হতেই থাকবেন, তা নিঃসংশয়ে বলা যায়।
দেশে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ১৩ লাখেরও বেশি। অথচ বৈধ চালকের সংখ্যা মাত্র ৮ লাখ। বাকি যানবাহন যাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তাদের লাইসেন্স বৈধ নয়। অনেকের একাধিক লাইসেন্সও আছে। স্বাভাবিকভাবেই এ অবৈধ লাইসেন্সধারী চালকরা গাড়ি চালাতে গিয়ে আইনের ধার ধারে না। সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত নয়, এমন চালকের সংখ্যাও নেহায়েতই কম নয়। এই চালকদের পেছনে আছে শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকতা, যে কারণে এদের শনাক্ত করাও দুষ্কর। সঙ্গতকারণে চালকরাও বেপরোয়া। এ পরিস্থিতি একটি দেশের পক্ষে কিছুতেই স্বস্তির হতে পারে না।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ গাড়ির বেপরোয়া গতি। অদক্ষ চালকের হাতে বেপরোয়া গতির যানবাহন হয়ে উঠেছে মৃত্যুর দূত। গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সর্বোচ্চ কঠোর না হলে এটা থামানো যাবে না। সড়কভেদে প্রতিটি যানবাহনের জন্য গতি নির্দিষ্ট করে তা মানতে বাধ্য করতে হবে। দক্ষ চালক তৈরির ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়া যাবে না। যাকে-তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করা না গেলে কখনোই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেডের গবেষণা অনুযায়ী, মাদকাসক্ত চালকের কারণে দেশে ৩০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দেশবাসী প্রত্যাশা করে। মাদকাসক্ত চালকের লাইসেন্স বাতিল করাসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। চালকদের সিটবেল্ট ব্যবহারের প্রতি অনীহা গ্রহণযোগ্য নয়। মালিক প্রতিষ্ঠানকে চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে, চালকের প্রতি নজর রাখতে হবে। দুর্ঘটনায় আহত-নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে মালিকপক্ষ নিজ স্বার্থেই সচেতন হবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।