Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শহীদদের স্বপ্ন এবং আমরা

মহিউদ্দিন খান মোহন | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ছিল শহীদ জেহাদ দিবস। শহীদ জেহাদকে সবারই মনে থাকার কথা। ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর স্বৈরশাসকের বুলেট বুক পেতে নিয়ে শাহাদৎ বরণ করেছিলেন তিনি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সে আন্দোলনে আরো অনেকেই জেহাদের মতো শহীদ হয়েছেন। তবে, জেহাদের শাহাদৎ বরণের তাৎপর্য একটু ভিন্ন। তার রক্তের ধারা বেয়েই ৯ বছরের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পূর্ণতা প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে তা রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। সেই গণঅভ্যুথানে স্বৈরশাসক এরশাদ ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হয়। অবসান ঘটে ৯ বছরের স্বৈরশাসনের।
শহীদ নাজিরুদ্দিন জেহাদ ছিলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ছেলে। উল্লাপাড়া ডিগ্রি কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ঢাকায় এসেছিলেন সাত দলীয় জোটের সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নিতে। আর তাতে অংশ নিয়ে তিনি পরিণত হন এ দেশের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশে। ১০ অক্টোবরকে বিএনপি শহীদ জেহাদ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে প্রতি বছর। বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো এদিন দৈনিক বাংলা মোড়ে শহীদ জেহাদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। এবারো তা ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু একটি সংবাদ ওইদিন সকালেই সবাইকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে দেয়। মঙ্গলবার সকালেই অনলাইন মিডিয়াগুলোতে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, শহীদ জেহাদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিতে গেলে পুলিশ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং সাতজনকে আটক করে।
খবরটি ছিল অনভিপ্রেত এবং অনাকাক্সিক্ষত। কেননা, ওইদিন নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হয়েছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মদানকারী একজন বীর শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। এমন একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের ওপর পুলিশি হামলা তাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষদের বিস্মিত ও ব্যথিত করেছে। এমনও নয় যে, সেখানে জড়ো হওয়া বিএনপি কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল বা জনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটে তেমন কোনো কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। তা হলে পুলিশ এমন আচরণ কেন করল? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে অনেক কথাই এসে যাবে। সব কথা এখানে বলা সম্ভব নয়। তবে, এটা বলা বোধকরি অসমীচীন নয় যে, সরকার যখন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিস্মৃত হয়, তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন একপর্যায়ে স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ নেয়। আর তার পরিসমাপ্তি ঘটে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়। মানুষের যেসব অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো গণতন্ত্র। আমাদের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির প্রথমটিই হলো গণতন্ত্র। আমাদের সংবিধানেও এ দেশকে জনগণের প্রজাতন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মালিক হলো জনগণ। এ দেশের প্রতিটি মানুষকে প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে। আর তা সংবিধানে একেবারে স্পষ্ট করে বলা আছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্ম, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র, কোথাও কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না- সংবিধান তার নিশ্চয়তা দিয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের যে ধরনের অধিকার ভোগ করার কথা, আমাদের সংবিধানে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে বর্ণনা করা আছে। এ দেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক- এ অঙ্গীকার করা হয়েছে সংবিধানে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সে অবাধ ও মুক্ত গণতন্ত্রের দেখা এ দেশের মানুষ আজো পায়নি। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই গণতন্ত্রকে প্রথমে লাল ঘোড়া দাবড়ে পর্যুদস্ত করা হয়েছিল, পরবর্তীতে একদলীয় শাসনের বেড়াজালে বন্দী করে মানুষের মৌলিক অধিকারকেই তিরোহিত করা হয়েছিল। এরপর মাঝে মধ্যে গণতন্ত্র এ দেশের আকাশে আষাঢ়ের সূর্যের মতো ক্ষণিকের জন্য উদিত হলেও মুহূর্তেই তা ঢাকা পড়েছে কর্তৃত্ববাদী শাসনের মেঘের আড়ালে। অথচ বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে গণতন্ত্রের অবাধ চর্চার অঙ্গীকার নিয়ে। সংবিধানের ৭ এর (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।” অর্থাৎ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির যাবতীয় কার্যক্রম সংবিধানের বিধি-বিধান মোতাবেক পরিচালিত হবে এবং সংবিধান নির্দেশিত ও বর্ণিত সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার সবাই নির্বিঘেœ এবং সমানভাবে ভোগ করবে। এটা দেশের নাগরিকদের জন্য কোনো সুযোগ নয়, এটা তাদের অধিকার। আর নাগরিকদের সে অধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব যারা যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবে তাদের ওপর বর্তায়।
অথচ আজ কি দেখা যাচ্ছে? যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন, তারা কি দেশের নাগরিকদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ভোগ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে, নাকি বিঘেœর সৃষ্টি করছে? খুব বেশি গভীর চিন্তা বা পর্যালোচনার দরকার নেই। সাদা চোখে যা দেখা যায়, তাতেই কি এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে না যে, জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, তারাই তা খর্ব করে চলেছেন।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড নির্বিঘেœ চালতে দেয়া হচ্ছে না। জনসভা, সমাবেশ, মিছিল শোভযাত্রার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি চালানো হচ্ছে পাইকারি গ্রেফতার। বলা নিষ্প্রয়োজন, এটা গণন্ত্রের কোনো সংজ্ঞায় পড়ে না। আমাদের সংবিধান এ দেশের প্রতিটি মানুষকে রাজনীতি করার, সংগঠিত হওয়ার এবং সভা-মিছিলে অংশ নেয়ার অধিকার দিয়েছে। সংবিধানের ৩৭ নং অনুচ্ছেদে এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছ। সেখানে বলা হয়েছে-“জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ- সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমতে হইবার এবং জনসভা ও শোভযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।” এ ছাড়া সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা, বিবেক, বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান বিরাজমান পরিবেশ পরিস্থিতিতে যদি প্রশ্ন করা হয়, সংবিধানের উল্লিখিত বিধানসমূহে প্রদত্ত অধিকারগুলো এ দেশের জনগণ কতটা ভোগ করছে বা অক্ষুন্ন রয়েছে, তার জবাব কি ইতিবাচক হবে? বরং নাগরিকগণ তাদের সাংবিধানিক অধিকারসমূহের অনেক কিছু থেকেই বর্তমানে বঞ্চিত, এটাই নির্মম সত্য। শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের অভিযোগ নয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনেও বিষয়গুলো প্রায়ই উঠে আসছে।
বর্তমান ক্ষমতাসীনরা নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক বলে সব সময়ই দাবি করেন। কিন্তু কিছু বিষয় আছে, যা মৌখিক দাবিতে প্রমাণিত হয় না, সত্য বলে স্বীকৃতি পায় না। এ ক্ষেত্রে দরকার চাক্ষুষ প্রমাণ। ক্ষমতাসীনদের আচরণই বলে দেয় তারা কতটা গণতান্ত্রিক। বিরোধী দলকে সভ-সমাবেশ করতে না দেয়া, বিনা উস্কানিতে মিছিলে অতর্কিতে পুলিশের ঝাঁপিয়ে পড়া, কোনো কারণ ছাড়াই নেতাকর্মীদের পাইকারি গ্রেফতার নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না।
কেউ কেউ রসিকতা করে বলে থাকেন, বাংলাদেশের বর্তমান গণতন্ত্র নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁয়ের তাজমহল। আকৃতি আগ্রার তাজমহলের মতো হলেও ভেতরে সম্রাজ্ঞী মমতাজের সমাধি নেই। এটা জেনেও এক শ্রেণীর মানুষ গাঁটের পয়সা খরচ করে সেটা দেখতে ভীড় জমায়। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। আগ্রা যাবার সামর্থ যাদের নেই, তারা সোনারগাঁ গিয়ে ফাঁকা তাজমহল দর্শন করে এক ধরণের তৃপ্তি লাভ করে। আর এ ফাঁকে ওই নকল তাজমহলের নির্মাতারা টু পাইস কামিয়ে নিচ্ছেন। শুধু কি তাই? ওই তাজমহলকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠেছে অনেক খাবারের দোকান, নানা রকম দ্রব্যাদির বিক্রয় কেন্দ্র। দোকানিরাও আগত দর্শকদের বাগে পেয়ে খাবারসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম রাখছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশেও গণতন্ত্রের এখন সে হালই বিরাজমান। ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্রের খোলস দেখিয়ে জনগণকে ভুলিয়ে রাখছে, আর একদল লোক সে সুযোগে ফায়দা লুটছে নানা কায়দায়।
এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের সবারই স্বপ্ন ছিল একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা যেখানে থাকবে না শোষণ-বঞ্চনা, বিভেদ-বৈষম্য, অবিচার-অনাচার। এ দেশের মানুষ পাবে প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ। বলা বাহুল্য, শহীদদের সে স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে পারি নি। কেন পারিনি, সে প্রশ্ন অবান্তর। কেননা, এ না পারার ব্যর্থতার কারণটি কারো অজ্ঞাত নয়। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষমতালিপ্সা এর প্রধান কারণ। প্রতিদ্ব›দ্বীকে প্রতিপক্ষ ভেবে তারা প্রবৃত্ত হন নানা ধরনের অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ডে। একবার রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেলে তা যাতে আর হাতছাড়া না হয়, সে জন্য নানা ফন্দি-ফিকির করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা জনগণের ওপর ভরসা করতে পারেন না। ভরসা করেন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনী, বিদেশী শক্তি, আর পেশিশক্তির ওপর। রাষ্ট্রীয় ও পেশিশক্তির জোরে প্রতিদ্ব›দ্বীকে দমিয়ে, ক্ষেত্র বিশেষে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার অপচেষ্টা চালান। এতে সাময়িক সুফল হয়তো পাওয়া যায়। তবে এর কুফলটা হয় সুদূরপ্রসারি। গণতন্ত্রের দুর্দশা দেখে জনগণ হতাশ হয়ে পড়ে, আস্থা হারিয়ে ফেলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর। ফলে বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে নানা রকম অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এর কুফল ভোগ করতে হয়েছে গোটা জাতিকে।
একটি সত্য আমাদের রাজনীতিকরা ভুলে যান। তাহলো, জোর করে বেশি দিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা যায় না। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, যারা ক্ষমতার বাইরে থাকেন, তারা এ কথাটি ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে বলে থাকেন। কিন্তু যেই তারা ক্ষমতার চাবিকাঠি হস্তগত করতে সক্ষম হন, অমনি বদলে যায় তাদের কথার ধরন, আচার- আচরণ। এক সময় যিনি জনগণের গণতন্ত্রের জন্য প্রাণপাত করতেন, ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি গণতন্ত্রকে নিপাত করতে দ্বিধা করেন না।
কথা শুরু করেছিলাম শহীদ জেহাদ দিবসের প্রসঙ্গ দিয়ে। কথায় অনেক কথা এসে যায়। এখানেও তাই হয়েছে। ’৯০-এর জেহাদ বা ’৮৭’র নূর হোসেন কোনো বিশেষ দলের সম্পদ নন। হয়তো তারা বেঁচে থাকতে ভিন্ন ভিন্ন দলের সমর্থক বা কর্মী ছিলেন। কিন্তু তারা আত্মদান করেছেন একটি অভিন্ন লক্ষ্যে। আর সেটা হলো, এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। তাদের সে আত্মদান কিন্তু বৃথা যায়নি। স্বৈরাচারের বন্দীশালা থেকে গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু এখন আর তা মুক্ত নেই। নতুন করে তার পায়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে সোনার শিকল। গণতন্ত্র এখন পরিণত হয়েছে একটি বাহারি রঙের চাঁদরে।
শহীদ নাজিরুদ্দিন জেহাদ বিএনপি’র ছাত্র সংগঠনের কর্মী ছিলেন, এটা ঠিক। কিন্তু তার সে পরিচয় এখন আর মূখ্য নয়। তার বড়ো পরিচয় তিনি এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সবচেয়ে দীর্ঘ ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের একজন বীর শহীদ। যেমন শহীদ নূর হোসেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী যুব লীগের কর্মী। কিন্তু বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখে শাহাদৎ বরণের পর তিনি হয়ে উঠেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। দল মত নির্বিশেষে সবাই তাকে সম্মান করে। আসলে দেশ, জাতি, গণতন্ত্রের জন্য যারা শহীদ হন, তাদের কোনো দলীয় পরিচয় থাকে না। পরিচয় তাদের একটাই, তারা শহীদ। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কর্তব্য তাদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো। কারণ, তাদের রক্তের সিড়ি বেয়েই রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহনের পথ খুঁজে পায়।
এবার ১০ অক্টোবর শহীদ জেহাদ দিবসে পুলিশ যে আচরণ করেছে, তা অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্খিত এবং নিন্দনীয়। পুলিশের এ হামলা শুধু একটি ছাত্র সংগঠনের ওপর ছিল না, এটা ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন বীর শহীদের প্রতি অশ্রদ্ধার নমুনা। এতে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ বিস্মিত ও বেদনাহত হয়েছে। কারণ, হামলকারি পুলিশ সদস্যরাও বাংলাদেশেরই নাগরিক। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ছাত্রাবস্থায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। হামলা করার আগে তাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত ছিল শহীদ জেহাদ দিবসের কথা। কিন্তু তারা সেটা করেন নি। ক্ষমতা নাকি অনেক সময় মানুষকে অন্ধ করে দেয়। তখন তার ভালো-মন্দ, সঠিক-বেঠিক, উচিত-অনুচিত বিবেচনার জ্ঞান থাকে না। হয়তো সে রকম অবস্থায় থাকার কারণেই পুলিশ শহীদ জেহাদ দিবসের অমর্যাদা করার সাহস পেয়েছে। আর এ সাহস যে তারা রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের মনোভাব থেকেই পেয়েছে, সেটা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন