রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এটিএম এনামুল জহিরকে ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালের (রামেক) ইন্টার্নি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। গত বুধবার রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনা ঘটলে এ অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ ও ইন্টার্নি চিকিৎকদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবীতে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক প্রায় ২ ঘন্টা অবরোধ করে রাখে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। প্রধান ফটক থেকে কাটাখালি পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে ভোগান্তিতে পরে যাত্রীরা। এসময় প্রায় দুই ঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবরোধ শেষে পুনরায় বেলা ২ টার দিকে প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, বুধবার রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েকে দেখতে যান অধ্যাপক এটিএম এনামুল জহির। এসময় হাসপাতালের ৩০নং ওয়ার্ডে প্রবেশের সময় অধ্যাপক জহিরের সঙ্গে দায়িত্বরত ইন্টার্নী চিকিৎসক প্রিয়াঙ্কার ধাক্কা লাগে। এতে ওই নারী চিকিৎসক তাকে গালাগালি শুরু করলে জহির তাকে ‘ননসেন্স’ বলে মন্তব্য করেন। পরে প্রিয়াংকা মোবাইল ফোনে এ বিষয়টি ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি কামালকে জানালে কামাল অন্যান্য ইন্টার্নিদের ফোনে ডেকে নিয়ে ৩০নং ওয়ার্ডে যান এবং জহিরকে লাঞ্ছিত ও ব্যাপক মারধর করেন। মারধরের এক পর্যায়ে ওই ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্সরা তাকে উদ্ধার করে একটি কক্ষে আশ্রয় দেন। কিছুক্ষণ পরে ইন্টার্নী চিকিৎসকদের আরেকটি দল গিয়ে শিক্ষক জহিরকে আবারো ব্যপক মারধর করেন। এসময় মেঝেতে লুটিয়ে পরেন জহির। খবর পেয়ে রাজপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) দ্রæত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। বিষয়টি জানার পরে ঘটনাস্থলে যান হাসপাতালের পরিচালক। পরে মুচলেকা দিয়ে চিকিৎসা না নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে আসেন আহত শিক্ষক এটিএম এনামুল জহির। তবে গতকাল সকালে মারধরের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে রামেক ইন্টার্নি চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মির্জা কামাল বলেন, ‘ধাক্কা লাগা নিয়ে একটু চড়াও হয় চিকিৎসকরা। আমরা আগে জানতাম না যে শিক্ষক মানসিক ভাবে অসুস্থ। জানার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
ঢাকা-রাজশাহী হাসড়কে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জানান, একজন শিক্ষককে মারধর করার মতো কলঙ্কিত কাজ আর হতে পারে না। তাই তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, আমাদের শিক্ষকদেরকে আমরা কখনোই আর এভাবে দেখতে চাই না। রাস্তায় কুপিয়ে শিক্ষককে মারা হবে, বাসের হেলপার শিক্ষককে মারবে, হাসপাতালে গেলে মারধর করা হবে এগুলো আমরা আর মেনে নিতে পারি না। এর যথাযথ বিচার হওয়া দরকার। এ সময় শিক্ষার্থীরা জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
পরে বেলা ১১টা ১৫ এর দিকে ঘটনাস্থলে প্রক্টর ড.অধ্যাপক লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের কøাসে ফিরে আসার জন্য বলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনিও শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে একটি স্মারকলিপি দিতে আহŸান জানিয়ে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেন শিক্ষার্থীদের। এতেও শিক্ষার্থীরা সেখানেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে বেলা ১১টা ৪৫ এর দিকে উপস্থিত হন মারধরের শিকার অধ্যাপক এনামুল জহির। তিনিও শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বললেও শিক্ষার্থীরা ফিরে যায়নি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রায় ২ ঘন্টা যাবৎ যান চলাচল বন্ধ থাকে। জানতে চাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিল। প্রায় দুই ঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে বেলা ২ টার দিকে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করতে শুরু করলে সেখানে উপস্থিত হন বিশ^বিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড.এম আব্দুস সোবহান। সেখানে তিনি বলেন, এখনও বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত কোন কিছু জানানো হয়নি। তবে মারধরের শিকার শিক্ষক আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। এখানে বিশ^বিদ্যালয় হতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না বলে জানান। কিন্তু বিভাগ বা শিক্ষক যদি মামলা করেন তাহলে বিশ^বিদ্যালয় লজিস্টিক সার্পোর্টটুকু দিবে। এসময় বিশ^বিদ্যালয় প্রো-ভিসি ড. আনন্দ কুমার সাহা, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. প্রভাষ কর্মকার উপস্থিত ছিলেন।