Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ

| প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে আজ উৎপাদনমুখী ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাচনমূখী বাজেটের ধারাবাহিকতায় এই মুদ্রানীতির ভঙ্গিতেও থাকছে জনতুষ্টির চেষ্টা। আগামী ছয় মাসের জন্য এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারও সতর্ক মূদ্রানীতি হলেও ঋণ প্রবাহ কিছুটা বাড়ানোর চেষ্টা থাকবে। ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ইতোমধ্যে আগামি ছয় মাসের মুদ্রানীতি প্রণয়ন শেষ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে এই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে। যাতে নির্বাচনের আগে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ে। এ ছাড়া, মুদ্রানীতিতে গুণগত বিনিয়োগের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ, ব্যাংক আমানতের সুদ হার এখন যে কোনও সময়ের চেয়ে কম। এছাড়া ব্যাংকেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগযোগ্য তহবিল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী মুদ্রানীতিতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগমুখী করার উদ্যোগ থাকবে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কিছুটা কঠিন হতে পারে। তাদের মতে, মুদ্রানীতিতে কতগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন- বর্তমানে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স কমতির দিকে। চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক। এসবের প্রেক্ষিতে কিভাবে রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানো যায়- সেদিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া মুদ্রা বিনিময় হার নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। টাকার অবমূল্যায়ন হবে কি-না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে নজর দেয়া না হলে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছাবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে নতুন মুদ্রানীতির মূল চ্যালেঞ্জই হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড.এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সাধারণ মানুষের ভালোমন্দ জড়িত। এ জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে নতুন মুদ্রানীতির মূল চ্যালেঞ্জ। তবে বিনিয়োগের সঙ্গে কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি জড়িত, এ কারণে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়েও জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এবারের বাজেটে ১ লাখ কোটি টাকার উপরে ঘাটতি ধরা হয়েছে। তবে ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ার কারণে তা বেড়ে ১ লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। কিন্তু বাজেট পাশের সময় এই বিশাল ঘাটতির সমাধান নিয়ে তেমন কিছু জানাননি অর্থমন্ত্রী। তাই এত ঘাটতি কিভাবে পূরণ হবে তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। আবার মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে যদি ঘাটতি পূরণ করা হয়, তাতেও সংকট দেখা দিতে পারে। মুদ্রানীতিকে নমনীয় হতে হবে বলে মন্তব্য করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এবারের মুদ্রানীতিকে হতে হবে যথেষ্ট নমনীয়। যেটাকে সংকুলানমূলক বলা যেতে পারে। অর্থাৎ যখন যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, তখন সেটাকে সেভাবে সামাল দিতে হবে।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্যই হলো মূল্যস্ফীতি, ও মুদ্রাস্ফীতি ঠিক রাখা। এবারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এই হার ধরে রাখা যাবে কি-না বা অতিক্রম হবে কি-না, সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে মনে হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়বে।
ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির সাথে জুড়ে আছে মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপি প্রবৃদ্ধি। তাই এইখাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সব সময়ই সতর্ক কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সূত্র মতে, মে শেষে বেসরকারিখাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আবাসনসহ প্রায় সবখাতে ঋণের সুদ হার কমায় এ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অপরদিকে সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়ে পড়েছে ঋণাত্মক। তবে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়ার আশংকা রয়েছে। সেজন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাই সরকারের ঋণের প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাড়াবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকাররা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের শেষ মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজারের তারল্য সরবরাহ এবং নিট বৈদেশিক সম্পদের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তার সবগুলোই সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজি হাসান। তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে ব্যাংকখাতের উদ্বৃত্ত তারল্যের যে সংকট তা অনেকাংশেই কেটে যাবে। তাই ঘোষিত বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকার আবারও ব্যাংকমুখী হবে বলে আশাবাদী তিনি। আবু হেনা মোহা. রাজি হাসান বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট এবং রাজস্ব নীতি অনুসারে মুদ্রানীতি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই নীতিকে আরও ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করাকে নতুন মুদ্রানীতিতে প্রাধান্য দেয়া হবে। এছাড়া সতর্কতামূলক অবস্থান বজায় রেখে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখাকেও বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার আশা করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এবারের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কিছুটা বাড়িয়ে ১৭ শতাংশ করা হতে পারে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখতও মনে করেন নতুন মুদ্রানীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে মুদ্রানীতির সুফল অর্থনীতিতে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে মুদ্রানীতির পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিও বাড়াতে হবে। কারণ, হঠাৎ করে ডলারের দর বেড়ে গেলে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যায়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ