রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নাজিম বকাউল, ফরিদপুর থেকে
ফরিদপুরে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগে ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে শুরু হয়েছে নানামুখী রাজনীতি। আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অযোগ্য ও বিভিন্ন দলছুট নেতাদের মনোনয়ন দেবার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে জেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা মনোনয়ন বাণিজ্য করছেন এমন অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে যারা বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে আসীন রয়েছেন তাদের অনেকেই ‘রাজনীতির গ্যাড়াকলে’ পড়ে মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের কেউ কেউ ‘স্বতন্ত্র’ হিসাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে দলের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা ও সালথা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরকান্দার একটি ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জানান, প্রভাবশালী একনেতা দলীয় চেয়ারম্যানদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন দিচ্ছেন এমন ব্যক্তিদের যারা কোনদিন আওয়ামী লীগ করেনি। তাছাড়া ঐ নেতাকে ম্যানেজ করে দলের ‘বিতর্কিত’ কয়েকজনকে মনোনয়ন দেবার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন। যার ফল বেশি একটা ভালো হবে না। প্রাপ্ত অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরকান্দার চরযশোরদী ইউনিয়নে এমন একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে যিনি দলের মধ্যে ব্যাপক বিতর্কিত। এছাড়া তিনি পূর্বে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। দলের পরীক্ষিত নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা ইসরাইল হোসেন মনোনয়ন চাইলেও তাকে দেয়া হয়নি। যিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৫ বারের সভাপতি ছিলেন। তাকে মনোনয়ন না দেয়ায় ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আবদুল্লাহ খান অভিযোগ করে বলেন, ইসরাইল হোসেনের মতো যোগ্য ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়াটা চরম বোকামী। একই কথা জানালেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইদ্রিস আলী, জালাল মাতুব্বর। তারা বলেন, দলের মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয়দের কোন মতামত নেয়া হচ্ছে না। ‘বিশেষ একনেতা’ তার ইচ্ছে খুশি মতো মনোনয়ন দিচ্ছেন। এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ওহিদুল বারী আলমকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কাইচাইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিন্নাহ সরদারকে বাদ দিয়ে সেখানে আরেকজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র এ দুটি ইউনিয়নেই নয়, বেশির ভাগ ইউনিয়নে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বাদ দিয়ে দলছুট বিএনপি নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। মনোনয়ন নিয়ে সবচে বেশি অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে সদরপুরে। সেখানকার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে আসা প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সদরপুর ইউনিয়নে সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী কাজী জাফরকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ ইউনিয়নের দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুলকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। বাবুলের বাবা সদরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন।
মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে এখানে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বাবুলকে মনোনয়ন না দেয়ায় আওয়ামী লীগে দুটি গ্রুপ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। মনোনয়ন প্রসঙ্গে শহিদুল ইসলাম বাবুল জানান, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাদ দিয়ে বিএনপি থেকে ধরে এনে প্রার্থী করা হচ্ছে। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। একসময় যাদের হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। তাদেরই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। এটা চরম অপমানজনক ও আওয়ামী লীগের জন্য লজ্জাজনক। এজন্য তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাহকে দায়ী করেন। একই অবস্থা ফরিদপুর সদর, আলফাডাংগা, মধুখালী, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন, সালথার বিভিন্ন ইউনিয়নে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং তাদের মনোনীত প্রভাবশালীরা বিভিন্ন ইউনিয়নগুলোতে ‘নৌকা প্রতীক’ মনোনয়ন দিচ্ছেন বলে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। ফলে দলের অনেক চেয়ারম্যান প্রার্থীই প্রকাশ্যে কোন কথা না বললেও ভেতরে ভেতরে চরম ক্ষুব্ধ। চেয়ারমান প্রার্থীরা মুখবুজে এমন অনিয়ম সহ্য করলেও প্রকাশ্যে কথা বলতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী। দলের প্রার্থীকে জেতাতে দলের মধ্য থেকেই পরীক্ষিত নেতাদের মনোনয়ন দেবার দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝ থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।