পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী/মামুনুর রশীদ মামুন, সিলেট থেকে : সিলেটে আহত র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে সেনাবাহিনীর দুঃসাহসী এই প্যারা কমান্ডো ছিলেন লাইফ সাপোটে। সিঙ্গাপুরের প্যারাগন মেডিকেল সেন্টারের নিউরো বিশেষজ্ঞ ডা. ম্যাথিউকে শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন।
গত শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় বোমার আঘাতে আহত হন এই র্যাব কর্মকর্তা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাতেই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে আসা হয়। সিঙ্গাপুরে নেওয়ার আগ পর্যন্ত লে. কর্নেল আজাদ সিএমএইচ-এর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
রবিবার সন্ধ্যায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই সেনা কর্মকর্তার চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সিলেটে জঙ্গিদের অবস্থানের খবর পেয়ে কর্তব্য পালনে সেখানে ছুটে যান আজাদ। র্যাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে তার সাহসী ভূমিকা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়। শুক্রবার রাতে সিলেটের আতিয়া মহলে অপারেশনের দায়িত্বভার সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা নেওয়ার পরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সেখানে যাওয়ার। নিজে প্যারা কমান্ডো হওয়ায় নিজের সহকর্মীদের সঙ্গে অপারেশনে অংশ নিতেই তার এই সিদ্ধান্ত ছিল বলে তার সহকর্মীরা জানিয়েছেন। গত বছর রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় প্যারা কমান্ডোদের অপারেশন থান্ডারবোল্ট-এও এই কমান্ডোর বিশেষ ভূমিকা ছিল। চলতি বছর হলি আর্টিজানে বিশেষ ভূমিকার কারণে প্রশংসিত হন। এর আগে জঙ্গিবাদ এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকার জন্য বিপিএম (বাংলাদেশ পুলিশ পদক) এবং পিপিএম (প্রেসিডেন্ট পদক) পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আবারো দেশসেবায় অবদান রাখবেন এমনটাই প্রত্যাশা তার পরিবার, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের।
যেভাবে সিলেট গেলেন : সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা দায়িত্ব নেওয়ার পর সেখানে ছুটে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখান লে. কর্নেল আজাদ। তার সহকর্মীরা বলেন, নিজে কমান্ডো হওয়ার কারণেই সিলেটে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করছিলেন তিনি। র্যাবের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই তাড়াহুড়ো করে সিলেটে যাওয়ার বিমান টিকিট সংগ্রহ করেন তিনি। জুনিয়র সহকর্মী মেজর আজাদকে নিয়ে ছুটে যান সিলেটের আতিয়া মহলে। জঙ্গিবাদ দমনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনান অভিযানের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র এবং পরিচিত সহযোদ্ধা কমান্ডোদের। সারাদিন সেখানে অবস্থান শেষে রাতেই তার ঢাকায় ফিরে আসার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ঘটনাস্থল ত্যাগ করার প্রস্তুতিও নেন তিনি এবং মেজর আজাদ। গাড়িতে ওঠার সময়ই লে. কর্নেল আজাদের চোখ পড়ে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক চৌধুরী আবু মোহম্মদ কয়সর এবং জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলামের তল্লাশির দৃশ্যে। এ সময় তাদের ডেকে বলছিলেন, এভাবে তল্লাশি করা ঠিক না। প্রশিক্ষিত বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহায়তা নেওয়ার জন্য বলেন তিনি। তার মুখের কথা শেষ না হতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বোমাটি। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দুই পুলিশ পরিদর্শক, লে. কর্নেল আজাদ, মেজর আজাদসহ অনেকেই। গুরুতর অবস্থায় তাদের নেওয়া হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় এই দুই সেনাকর্মকর্তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে আসা হয়। পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।
লে. কর্নেল আজাদের পারিবারিক নাম রাসেল। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি পড়াশোনা করেছেন বিকেএসপি-তে। বেড়ে উঠেছেন আগারগাঁও তালতলার সরকারি কলোনিতে।
প্রসঙ্গত, লে. কর্নেল আজাদ বিএমএ ৩৪ লং কোর্সের মাধ্যমে ৫ জুলাই ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২৬ অক্টোবর ২০১১ সালে মেজর থাকাবস্থায় র্যাবে যোগ দেন। তৎকালীন র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান (বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) এর তত্ত্বাবধানে কাজ করেন গোয়েন্দা শাখায়। একের পর এক সফল অপারেশন করে অপরাধীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন এই সেনা কমান্ডো। র্যাবে কর্মরত অবস্থাতেই তিনি লে. কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। গত বছর রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কমান্ডো লে. কর্নেল আজাদ। সম্প্রতি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবিতে তার পোস্টিং হয়। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে লে. কর্নেল আজাদের র্যাব থেকে বিজিবিতে যোগদানের কথা।
এবিষয়ে কথা হলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আজ রাত ৮টার দিকে একটি এযার এম্বুল্যান্সে করে লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। এ অবস্থায় দেশে তার চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।