Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রূপগঞ্জ থানায় ওয়ারলেস অপারেটরের ঘুষ বাণিজ্য

| প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পুলিশ সুপারের তদন্তের নির্দেশ
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা  : রূপগঞ্জ থানার ওয়ারলেস অপারেটরের ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নিরীহ লোকজন। এই এলাকার থানা থেকে আইনি সহায়তা নিতে আসা সাধারণ লোকজন প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হলেও প্রতিকার পাচ্ছেন তারা। এমনকি থানার দারোগা ও ডিউটি অফিসারদের ফাঁকি দিয়ে আদায় করছে ঘুষের লাখ লাখ টাকা। কোন কোন অভিযোগ প্রমাণিত হলেও  ওসির পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে পুনর্বহাল রয়েছেন অসাধু ওয়ারলেস কর্মচারী মো. আবু ছিদ্দিক। থানা সূত্রে জানা যায়, ওয়ারলেস অপারেটর মো. আবু ছিদ্দিক গত বছর আড়াইহাজার থানা থেকে বদলি হয়ে রূপগঞ্জ থানায় যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে প্রকৃত পক্ষে ওয়ারলেস অপারেটর হিসেবে বিটিআরসি থেকে কিংবা বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রশিক্ষণ না নিয়েই অসাধু উপায়ে ওয়ারলেস অপারেটর হিসেবে কাজ করে আসছেন। শুধু তাই নয় থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের না জানিয়ে আইনি সহায়তা নিতে আসা লোকজনকে জিম্মি করছেন নানা অযুহাতে। ফলে একটি জিডিকে অভিযোগে রূপান্তরের মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রথমে জিডি বা অভিযোগ লেখিয়ে দেয়ার কথা বলে ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করে। পরে তা এন্ট্রির কথা বলে চাহিদা মাফিক ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে। পরে কাজটি তামিল করার কথা বলে আদায় করে আরো বাড়তি টাকা। একইভাবে থানায় কেউ জিডি করতে এলে বেশি টাকা আদায়ের সুবিধায় ধারা পরিবর্তন করে মিথ্যা তথ্য সংযুক্ত করে অভিযোগ করাতে বাধ্য করে। এতে রাজি না হলেও জিডি গ্রহণ করে না ওয়ারলেস অপারেটর। আবার তাকে অতিক্রম করে দারোগার সাথে কথা বলতেও বাধা দেয়া হয়। ডিউটি অফিস থেকে বেরিয়ে কম্পিউটার অপারেটরের দোকানে এসব লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে বলে জানা যায়। ফলে আইনি সহায়তা নিতে আসা লোকজন ভয়ে তার সাথেই চুক্তি করতে বাধ্য হয়।  আর এসব অপকর্ম থানার দায়িত্বরত এসআই বা ওসির অজান্তে করে বলেই দাবি করে থানা কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকা থেকে দুলাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী তার জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হুমকী ধামকী বিষয়ে থানায় একটি জিডি করতে আসে। এ সময় ওয়ারলেস অপারেটর আবু বকর ছিদ্দিক ভুক্তভোগী দুলালকে জোর পূর্বক  অভিযোগ করাতে বাধ্য করে। এসময় তার কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। দাবিকৃত ঘুষ না দেয়ায় প্রকাশ্যে থানার উিউটি অফিস থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এ সময় পরে গিয়ে পায়ে আঘাত লাগে। পরে ভুক্তভোগী দুলাল মিয়া থানার ওসির ওপর ভরসা না পেয়ে সরাসরি বিষয়টি অভিযোগ আকারে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মইনুল হককে জানায়। পুলিশ সুপার মইনুল হক  বিষয়টি সহকারী পুলিশ সুপার ফোরকান সিকদারকে ঘটনা তদন্তের নির্দেশও দেন। তথাপিও থামছে না ওয়ারলেস অপারেটর ছিদ্দিকের ঘুষ বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে বার বার অপরাধ করেও থানার ওসিকে পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়ে ম্যানেজ করেই তার অপকর্ম করে বেড়ান সে। ফলে থানা অন্য দারোগা ও সহকারী দারোগা থেকে থানার মুন্সিও তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। থানায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানায়, ওয়ারলেস অপারেটর আবু বকর ছিদ্দিক যে থানায়ই থাকেন তার অপরাধের মাত্রা অগণিত। তবে বেশি বেশি অপরাধও করেন আবার ধরা পড়লে ওসির পায়ে ধরেও ৬ মাসের বেশি স্থায়ী হন না। থানার পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের কাজ মুন্সির অধীনে হলেও জোর পূর্বকভাবেই সে করিয়ে দেয়। আইনি সহায়তা নিতে আসা লোকজন স্বাভাবিকভাবেই থানার ডিউটি কক্ষে প্রবেশ করতে হয়। ফলে প্রথমেই কথা হয় ওয়ারলেস অপারেটের সাথে সেই সুযোগে ভুক্তভোগী ও আইনি সহায়তা নিতে লোকজনকে  কঠিন ধারার চালে জিম্মি করে আদায় করে এসব ঘুষের টাকা। এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উপযুক্ত প্রমাণের পরও বহাল তবিয়তে এই অসাধু ওয়ারলেস অপারেটর। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওয়ারলেস অপারেটর মো. আবু ছিদ্দিক বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর অভিযোগটি একটি ভুল বুঝাবুঝি মাত্র। এ সময় নানা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, ওয়ারলেস অপারেটর  আবু  ছিদ্দিকের দ্বারা কেউ হয়রানির শিকার হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ