Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩

মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মধ্য শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোনো রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে সুব্হে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৩৮৪)।

এই বর্ণনাটির সনদ জয়িফ। কিন্তু মুহাদ্দিসীন কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে জয়িফ হাদিস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখার কথা সহিহ হাদিসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার বিষয়টিও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
বলা বাহুল্য, পনের শাবানের দিনটি শাবান মাসেরই একটি দিন এবং তা আয়্যামে বীযের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য ফিক্হের একাধিক কিতাবেই এদিনে রোজাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন লেখা হয়েছে। আবার অনেকে বিশেষভাবে এ দিনের রোজাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন।

এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী তার ইসলাহী খুতুবাতে বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে শবে বরাতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনের তারিখে রোজা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদিসে রাসুলের বিশাল ভাণ্ডার হতে একটি মাত্র হাদিস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখ’। সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদিসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোজাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদিসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত’।
তবে হ্যাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোজা রাখার কথা বহু হাদিসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোজা রাখার যথেষ্ট ফজিলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোজা রাখতে রাসূলুল্লাহ (স.) নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, রমজানের দু’-একদিন পূর্বে রোজা রেখ না, যাতে রমজানের পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোজাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।

একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, শাবানের এই ১৫ তারিখটি তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর নবীজি প্রতি মাসের আইয়ামে বীয এ রোজা রাখতেন। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি এই দু’টি কারণকে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোজা রাখে যা আইয়ামে বীয এর অন্তর্ভূক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে প্রতিদান লাভ করবে।
তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোজাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নাত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোজার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও আইয়ামে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যে কোনো দিনই রোজা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোজা রাখে তরে ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোনো দিনের পৃথক কোনো বৈশিষ্ট নেই।

এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরজ নামাজতো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। কোনো কোনো জায়গায় এই রেওয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা ইশার পর থেকেই ওয়াজ-নসীহত আরম্ভ হয়। আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। কোথাও তো সারা রাত খতমে-শবীনা হতে থাকে। উপরন্তু এসব কিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেওয়া হয়।

মনে রাখতে হবে, এসব কিছুই ভুল রেওয়াজ। শবে বরাতের ফাযায়েল ও মাসায়েল আগেই আলোচনা করা যায়। এ রাতে মাইক ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতা-ওয়াজের আয়োজন করা ঠিক না। এতে না ইবাদতে আগ্রহী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা সম্ভব হয়, আর না মসজিদে। অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় আরামেরও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। আল্লাহ আমাদের এসব ভুল কাজকর্ম পরিহার করার তাওফীক দিন।



 

Show all comments
  • Abul Kashem ৭ মার্চ, ২০২৩, ৮:৩৬ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের শবে বরাতের বরকত দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Kashem ৭ মার্চ, ২০২৩, ৮:৩৬ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের শবে বরাতের বরকত দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Emran Hasan ৭ মার্চ, ২০২৩, ৮:৩৭ এএম says : 0
    আজ পবিত্র শবে বরাত, আসুন আমরা একে অন্যের জন্য দোয়া করি আল্লাহর কাছে সারা জীবনের গুনাহ মাফ চাই ইবাদত বন্দেগীতে রাত কাটাই, সারা বিশ্ব দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করি। পবিত্র শবে বরাত নিয়ে এত বাড়াবাড়ি না করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি সারা বিশ্বের জন্য কল্যাণ কামনা করতে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করতে অপরাধ কি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দিন আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Emran Hasan ৭ মার্চ, ২০২৩, ৮:৩৭ এএম says : 0
    আজ পবিত্র শবে বরাত, আসুন আমরা একে অন্যের জন্য দোয়া করি আল্লাহর কাছে সারা জীবনের গুনাহ মাফ চাই ইবাদত বন্দেগীতে রাত কাটাই, সারা বিশ্ব দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করি। পবিত্র শবে বরাত নিয়ে এত বাড়াবাড়ি না করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি সারা বিশ্বের জন্য কল্যাণ কামনা করতে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করতে অপরাধ কি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দিন আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Ullah ৭ মার্চ, ২০২৩, ৭:১২ এএম says : 0
    শবে বরাত ছিল আছে থাকবে ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন