Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইউক্রেন : শান্তি আলোচনার মোড়কে আরো যুদ্ধ

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

গত এক বছর ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যেমন চলছে, তেমনি আরও একটি লড়াই সমান্তরালভাবে উন্মোচত হয়েছে: শান্তি আলোচনার মোড়কে রাশিয়া এবং পশ্চিমা জোটের মধ্যে শব্দের যুদ্ধ, যারা শান্তিপূর্ণভাবে এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে আগ্রহী বলে দাবি করছে। আপাতত বিশ্লেষকরা এবং পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন যে, প্রকুত অর্থে গুরুতর শান্তি আলোচনা কল্পনা করা অত্যন্ত কঠিন। উভয় পক্ষই আলোচনার যেশর্তগুলি নির্ধারণ করেছে, তা শীঘ্রই পূরণ করা সম্ভব বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না, এবং দু’পক্ষই বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধ পরিকর। এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে সরাসরি মোকাবেলা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। একই সময়ে, উভয় পক্ষের আলোচনার জন্য উন্মুক্ততা দেখানোর গভীর আগ্রহ শান্তিপূর্ণ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করে না। বরং এই জাতীয় আলোচনা মূলত কৌশলগত। এটি মিত্রদের আশ্বস্ত করা, বিরোধী দলকে অযৌক্তিক হিসাবে চিহ্নিত করা এবং বিশেষত, এই ব্যয়বহুল যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলির ক্রমবর্ধমান আকাক্সক্ষাকে হ্রাস করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলি এই সংঘাতের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট পক্ষ গ্রহণ করেনি, যা জ¦ালানীর দাম বাড়িয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। ফলে, দেশগুলি এই যুদ্ধে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা জোটের কড়া নিষেধাজ্ঞা ও বাকযুদ্ধের প্রতি অধৈর্যতা প্রকাশ করছে এবং রাশিয়া এই দেশগুলির সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। এই প্রেক্ষিতে, পুতিন ডিসেম্বরের শেষের দিকে রাশিয়ান টেলিভিশনে বলেন, ‘আমরা গ্রহণযোগ্য সমাধান সম্পর্কে জড়িত প্রত্যেকের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে এটি তাদের উপর নির্ভর করে। আমরা আলোচনা নাকচ করছি না, তারা করছে।’ একই সময়ে, মার্কিন কর্মকর্তারা একদিকে, ইউক্রেনকে সামরিকভাবে আরও শক্তিশালী করার জন্য ‘যাকিছু লাগে’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরও সমরাস্ত্রের যোগান দিচ্ছন, এবং তারা অন্যদিকে, রাশিয়ার সাথে মুক্ত আলোচনার কথা বলছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা পুতিনের শান্তি আলোচনার আহ্বানকে অবাস্তব বলে অভিহিত করেছেন। তবে, তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, পুতিন কিছু শক্তিশালী ুদেশের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি করেছেন এবং আরও সক্রিয় শান্তি প্রচেষ্টার জন্য তার প্রতি বেশ কয়েকটি দেশের সমর্থন বাড়ছে।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স অন শিকাগো কাউন্সিলের ডিসেম্বরের একটি জরিপে আমেরিকানরা প্রায় সমানভাবে বিভক্ত হয়েছিল এই প্রশ্নে যে ইউক্রেনকে ‘যাকিছু লাগে’ সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের করা উচিত কিনা। ৪৭ শতাংশ আমেরিকান এর পরিবর্তে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ কিইভকে শান্তির জন্য অনুরোধ করেছেন। জার্মানিতে, সাম্প্রতিক একটি ‘এআরডি-ডাচল্যান্ড ট্রেন্ড’ জরিপে দেখা গেছে যে, উত্তরদাতাদের ৫৮ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে যুদ্ধ শেষ করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে না। এই সপ্তাহান্তে বার্লিনে একটি ‹শান্তির জন্য বিদ্রোহ› সমাবেশে কমপক্ষে ১০হাজার লোক জমায়েত হয়। যুক্তরাষ্ট্রেও ডেমোক্র্যাটরা অক্টোবরের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সংঘাতের দ্রুত পরিণতি টানার আহ্বান জানিয়ে একটি খোলা চিঠি দেন, যদিও পরে তার তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। একই সময়ে, মার্কিন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক এ. মিলি অভ্যন্তরীণ সভায় যুক্তি দিয়েছিলেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের যথেষ্ট পরিমাণে অগ্রগতি অর্জনের সম্ভাবনা কম এবং এটিকে দর কষাকষির টেবিলে চলে যেতে হবে। হোয়াইট হাউস দ্রুত এই জাতীয় আলাপ নাকচ করে দেয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘পশ্চিমারা কিইভ সরকারকে সেই মুহুর্তে আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে বাধ্য করেছিল, যখন মার্চ মাসের শেষের দিকে রাজনৈতিকভাবে এটি শেষ করার সম্ভাবনা ছিল।’ এই মাসে, ক্রেমলিন ইসরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের মন্তব্য উল্লেখ করে বলেছে যে, তিনি গত বছরের গোড়ার দিকে মস্কো এবং কিইভের মধ্যে যে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন, তাকে পশ্চিমা দেশগুলি তা বন্ধ করতে বলেছে। গত গ্রীষ্মে পদত্যাগ বেনেট ইউটিউবে পোস্ট করা একটি সাক্ষাৎকারে বলেন জানিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ফ্রান্স, যাদের সাথে তিনি সমন্বয় করছেন, তার প্রচেষ্টা অবরুদ্ধ করেছে, কারণ তাদের জন্য পুতিনকে ধ্বংস করা শান্তি আলোচনার থেকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন-রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ