Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শবে বরাত গুনাহ মাফের রজনী

এইচ, এম কাওছার হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশেষ কিছু ফযিলতপূর্ণ রজনী দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে পবিত্র শবে বরাত অন্যতম। আরবি বৎসরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস হলো পবিত্র শাবান মাস। অর্ধ শাবানের রাত্রি কে পবিত্র শবে বরাতের রাত্রি বলা হয়। এ রাত্রি সম্পর্কে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল- কুরআন ও হাদিস শরিফে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের পূর্বে শাবান মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। শাবান মাস যখন উপস্থিত হতো তখন রাসুল (সা.) বলতেন : তোমরা তোমাদের অন্তর কে পাক- পবিত্র করে নাও এবং নিয়ত কে সঠিক করে নাও। এ মাসে আল্লাহর রাসুল (সা.) যত পরিমাণে রোযা রাখতেন, তা অন্য কোনো মাসে রাখতেন না। হাদিসে পাকের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে- হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন : ‘আমি রাসুল (সা.) কে রমজান ছাড়া কখনো পূর্ণ মাস রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসে যত অধিক সংখ্যায় রোযা রেখেছেন, তেমন অন্য কোনো মাসে দেখিনি’। (বুখারি ও মুসলিম) সুতরাং এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে রাসুল (সা.) এ মাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন। রোযার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি হাসিল করতেন। আর এ শাবান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখার কারণ কি? সেটাও অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত উমামা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : ‘আমি আরজ করেছি, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা.) শাবান মাসে আপনাকে যত অধিক সংখ্যায় রোযা রাখতে দেখি, তত অন্য মাসে দেখি না, এর কারণ কি? তিনি বললেনঃ- এ শাবান মাস রজব ও রমজান মাসের মাঝখানের ফযিলতময় একটি মাস, অথচ লোকেরা এ মাসের ব্যাপারে উদাসীন। মানুষের আমলসমূহ এ মাসে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা হয়। আমার আমল যখন পেশ করা হয়, তখন রোযা অবস্থায় থাকা আমি অধিক পছন্দ করি’। সুবহানআল্লাহ। তাহলে একবার ভাবুন তো! আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবিবের উপর সব সময় রাজিখুশি ছিলেন, তবুও তিনি রোযা অবস্থায় আল্লাহর দিদার পছন্দ করতেন। আর আমাদের অবস্থা কেমন! সুতরাং পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বেশি বেশি রোযা, নেক আমল, জিকির-আযগার করা প্রয়োজন। কারণ শবে বরাত একটি গুনাহ মাফের মূল্যবান রজনী। পবিত্র শবে বরাতের রাত্রি কে মাগফিরাতের রজনীও বলা হয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা এ রাতে অনেকের মাগফিরাত কবুল করেন। ইমাম আহমদ (রহঃ) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে বান্দাদের প্রতি বিশেষ করূনার দৃষ্টি দেন এবং দুই শ্রেণীর লোক ব্যতীত সকলের মাগফিরাত কবুল করেন। এক, মুশরিক আর দুই, হিংসুক”। তাহলে উক্ত বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতের রজনীতে এই দুই শ্রেণীর লোক ব্যতীত সকলের মাগফিরাত কবুল করেন। সুতরাং আমাদের শিরক ও হিংসা থেকে বেচে থাকতে হবে এবং আল্লাহ তায়ালার দরবারে মাগফিরাতের দোয়া করতে হবে। শবে বরাত এমন একটি পবিত্র রজনী যে আল্লাহ তায়ালা নিজে তার বান্দাদের ডেকে ডেকে বলেন কে আছো ক্ষমা প্রার্থী? কে আছো রিজিক প্রার্থী? ইত্যাদি। তাহলে ভাবুন তো আল্লাহ কত বড় দয়াবান! যে নিজেই বান্দাদের ডাকেন তাদের দোয়া কবুলের জন্য। সুতরাং পবিত্র কুরআন এবং হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে পবিত্র শবে বরাত একটি ফজিলতপূর্ণ রজনী। আল্লাহ তায়ালা তার অগণিত গোলাম কে এ রাতে মাফ করে থাকেন। তাই আমাদের উচিত হবে শবে বরাত উপলক্ষে নফল রোযা রাখা, বেশি বেশি নফল ইবাদত করা, জিকির- আযগার করা, কবর যিয়ারত করা এবং সর্বপরি আল্লাহ তায়ালার দরবারে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা। তাহলে আল্লাহ তায়ালা দয়া করে মায়া করে আমাদের মাগফিরাত কবুল করবেন এবং সুন্দর একটি কল্যাণময় জীবন দান করবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ