Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধ্বংস্তূপের নিচে প্রাণস্পন্দন

বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে আজ তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে গোটা বিশ্ব : ধ্বংস্তূপের নিচ থেকে জীবিত মানুষ এবং লাশ উদ্ধার চলছে : এখন পর্যন্ত উদ্ধার ১১২০০

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

‘আমাকে এখান থেকে বের করে নাও, আমি তোমার জন্য যেকোনো কিছু করব’। বয়সে বড় বাচ্চাটা অনেকটা ফিসফিস করে বলছে, ‘আমি তোমার চাকর হয়ে থাকব’। মেয়েটার এমন কথার জবাবে একজন উদ্ধারকর্মী বললেন, ‘না...না’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে হারেম শহরের কাছে ছোট এক গ্রাম বেসনায়া-বেসিনেহ। ওই গ্রামের দুই বোন তুরস্ক-সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে। দু’জনই বয়সে শিশু। বড় বোনটি ছোট বোনটিকে সান্ত¦না দেয়ার চেষ্টা করছে। উদ্ধারকর্মীদের উদ্দেশে এই নরক থেকে উদ্ধারের আর্ত আবেদন জানাচ্ছে মেয়েটি।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বড় বোনটির নাম মরিয়ম। ভিডিওতে দেখা যায়, সে তার ছোট বোনটিকে আগলে রেখেছে। আলতো করে ছোটটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তারা পরস্পরের সঙ্গে চাপাচাপি করে কোনোরকমে শুয়ে আছে। হতে পারে তারা বিছানাতেই ছিল। আর সেখানেই চাপা পড়েছে। ছোট বাচ্চাটির নাম ইলাফ। তাদের বাবা মুস্তাফা জুহির আল-সাঈদ জানায়, ইলাফ ইসলামিক নাম, যার অর্থ ‘সুরক্ষা’।

ঘটনার বয়ান দিয়ে মুস্তাফা জুহির আল-সাঈদ জানান, তার স্ত্রী এবং তিন সন্তান গত সোমবার ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার কয়েক ঘণ্টা আগেই শুয়ে পড়েছিলেন। আমরা বুঝতে পারলাম মাটি কাঁপছে...আর পলেস্তারা আমাদের মাথায় পড়তে শুরু করেছে। আমরা দু’দিন ধরে এই ধ্বংসস্তূপের নিচেই আটকে ছিলাম। চাপাপড়া অবস্থায় তিনি এবং তার পরিবার উচ্চস্বরে কোরআনের আয়াত পাঠ করছিলেন যেন কেউ না কেউ তাদের আওয়াজ শুনতে পান। মানুষ আমাদের আওয়াজ শুনতে পারেন এবং আমাদের উদ্ধার করা হয়, আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের। খোদার প্রতি কৃতজ্ঞতা আমরা বেঁচে আছি এবং যারা আমাদের উদ্ধার করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। মরিয়ম এবং ইলাফকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কম্বলে মুড়িয়ে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলে।

মুস্তাফা জুহির আল-সাঈদ এবং তার দুই মেয়ে মরিয়ম এবং ইলাফ ভাগ্যবান। উচ্চস্বরে কোরআনের আয়াত পাঠের শব্দ শুনে উদ্ধারকর্মীদের নজরে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি ভাইরাল ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিশালাকৃতির কংক্রিটের নিচ থেকে একটি হাত বাইরে বের হয়ে রয়েছে। পাশে একটি কুকুর সেই হাত ধরে টানছে আর চিৎকার করছে। হত্যভাগ্য ওই ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। উদ্ধারকারীদের দৃষ্টির বাইরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কত এমন নাম না জানা হতভাগ্য রয়েছেন কে জানে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ধ্বংস্তূপের নিচ থেকে লাশ উদ্ধারের সংখ্যা ১১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকস্পে উদ্ধারকাজ এখনো চলছে। এখনো হাজার হাজার মানুষ মাটি ও দেয়লের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে। উদ্ধারের জন্য আর্তনাদ করছেন অনেক আটকে পড়া মানুষ। দু’দেশের সরকার আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত মানুষ ও লাশের সন্ধান করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারী দল দুই দেশে পৌঁছে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়েছে। অনেকে উদ্ধার কাজে যোগ দিতে পথে রয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ত্রাণসহায়তা পাঠিয়েছেন। কিন্তু প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাস্তাঘাট ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় এখনো লাখ লাখ মানুষ নিদারুণ কষ্টে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্পে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন তার প্রকৃত চিত্র পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। তবে গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে লাশ উদ্ধার হওয়ার সংখ্যা ১১ হাজার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এএফপি জানিয়েছে, ভূমিকম্পে চাপা পড়ে প্রাণ হারানোর মধ্যে তুরস্কে ৮ হাজার ৫৭৪ জন এবং সিরিয়ায় ২ হাজার ৬৬২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ২৩৬ জন। বুধবার ভূমিকম্প এলাকা পরিদর্শন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান জানান, শুধু তুরস্কে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৮ হাজারের বেশি।

অন্যদিকে সিরিয়ার সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২৫০-এ দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪ জন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেট জানায়, সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমে কমপক্ষে ১২৮০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ২৬০০ জনেরও বেশি।
গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক তুরস্ক ও সিরিয়ার এই ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া কয়েক হাজার ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ উদ্ধারে দিন-রাত কাজ করছেন হাজার হাজার উদ্ধারকারী দল। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটকে পড়া ব্যক্তিদের আত্মীয়রা ধ্বংসস্তূপের পাশে অপেক্ষা করছেন। তাদের আশা, স্বজনদের হয়তো জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু তীব্র শীতের কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা কঠিন হয়ে উঠেছে। গৃহহীনদের দুর্দশা বেড়েছে। এছাড়া কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নেই। ফলে, উদ্ধারকারীরা হিমশিম খাচ্ছেন।
চতুর্দিকে বোবা কান্না : ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের নিচে আটকে পড়া শত শত মানুষকে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়ার উদ্ধারকারীরা বলেছেন, তীব্র ঠাণ্ডা এবং বৈরী আবহাওয়ার কারণে লোকজনকে জীবিত উদ্ধারের সময় দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে লোকজনকে উদ্ধারে সময়ের বিপরীতে লড়াই করতে হচ্ছে।

দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধে ইতোমধ্যে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া তুরস্ক সীমান্ত লাগোয়া সিরিয়ার কিছু শহরে ভূমিকম্পের আঘাত অত্যন্ত তীব্র হয়েছে। এসব সীমান্ত এলাকায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে অনেক বেশি। সিরিয়ায় ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া লাখ লাখ মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে আন্তর্জাতিক সহায়তা মাত্র পৌঁছাতে শুরু করেছে। সময়ের সাথে সাথে ভূমিকম্পের প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মানুষের বেঁচে যাওয়ার অনেক গল্পও প্রকাশিত হচ্ছে। যেমন সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে সদ্যোজাত এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও তার নাভি বাঁধা ছিল মৃত মায়ের সাথে। এই শিশুর মা ভূমিকম্পে মারা গেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং উপসাগরীয় দেশগুলোসহ বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারী দল ও ত্রাণ সরবরাহ আকাশপথে পৌঁছাতে শুরু করেছে। কিন্তু সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তাদের রক্ষা করার প্রচেষ্টা ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। তুরস্কের কাহরামানমারাস শহরের বাসিন্দা আলি সাগিরোগলু বলেন, ‘আমি আমার ভাইকে ধ্বংসাবশেষ থেকে ফিরে পাব না; আমি আমার ভাগ্নেকে ফিরে পাব না। চার পাশে দেখুন, এখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা নেই। দুই দিন ধরে আমরা এখানে সরকারি কাউকে দেখতে পাইনি... শিশুরা ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছে।’

শীতকালীন ঝড় তুরস্কের অনেক রাস্তায় দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক সড়ক প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কিছু অঞ্চলে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় আসা লোকজনের জন্য নতুন বিপদ সৃষ্টি করেছে শীতল বৃষ্টি আর তুষারপাত। লাখ লাখ মানুষ দেশটির মসজিদ, স্কুল, এমনকি বাস স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছে। আর ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া অনেকে এখনও উদ্ধারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। তবে তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা দ্রুতই ফুরিয়ে আসছে বলে তুর্কি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক : ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নাগরিকদের নিহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে একদিনের শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয় ৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং নিহতদের রুহের শান্তির জন্য দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

এদিকে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্কে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে যাচ্ছে মোট ৬০ সদস্যের উদ্ধারকারী দল। এই উদ্ধারকারী দলটিতে ফায়ার সার্ভিসের ১২ জন, সেনাবাহিনীর ২৪ জন, চিকিৎসক ১০ জন ও ১৪ জন বিমান ক্রু রয়েছেন। উদ্ধারকারী দলটি ভূমিকম্প-পরবর্তী জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও চিকিৎসাসেবা দেবে। বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমানে চড়ে তুরস্কে পৌঁছবে উদ্ধারকারী দলটি। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে। পুরান ঢাকার ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তিনি বলেন, বুধবার রাত ১০টায় বাংলাদেশের একটি বিমানে চড়ে তারা তুরস্কে যাবেন। তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে সেখানকার সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে তুরস্কে একটি সম্মিলিত সাহায্যকারী দল পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে গোটা বিশ্ব : ভূমিকম্পে বিপর্যয়ের মুখে পড়া তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ত্রাণসামগ্রী, উদ্ধারকারী দল ও সরঞ্জাম যাচ্ছে তুরস্কে। বিশেষ করে ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।

যুক্তরাষ্ট্র ৭৯ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞকে তুরস্কে পাঠিয়েছে। এছাড়া প্রায় ১০০ জন লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি দমকলকর্মী ও ভবন প্রকৌশলী, ৬টি বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুরের দল তুরস্কে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)-এর দু’টি দল ইতোমধ্যে তুরস্ক গেছে। যুক্তরাজ্য ৭৬ জন অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞকে তুরস্কে পাঠিয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত কুকুরের একটি দল। পাশাপাশি একটি জরুরি চিকিৎসা দলও তুরস্কে পাঠায় যুক্তরাজ্য।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তুরস্ককে সাহায্য করার জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলগুলোকে একত্রিত করেছে। ইতোমধ্যে কোপার্নিকাস স্যাটেলাইট সিস্টেমের জরুরি মানচিত্র পরিষেবা প্রদানের জন্য সক্রিয় করা হয়েছে। ইইউর অন্তত ১৩টি সদস্য দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। ইইউ বলেছে, তারা সিরিয়াকে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

ইতালির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা তুরস্ককে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। একটি অগ্নিনির্বাপক দল পিসা থেকে তুরস্কের পথে রওনা দিয়েছে। ইতালীয় সামরিক বাহিনী বলেছে, পরিবহন ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের পাশাপাশি স্বাস্থ্য এবং অন্য কর্মীদের তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে। ফ্রান্সও জানিয়েছে, একটি উদ্ধারকারী দল তুরস্কের পথে রওনা দিচ্ছে। স্পেন জানিয়েছে, তারা ৮৫ জন কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবক দমকল বাহিনীর একটি দলসহ তুরস্কের দু’টি শহরে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে।

জরুরি মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাশিয়ার উদ্ধারকারী দল সিরিয়া যাচ্ছে। দেশটিতে মোতায়েন রুশ সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে এবং জীবিতদের সন্ধানে সহায়তা করতে ৩০০ জনের সমন্বয়ে ১০টি ইউনিট পাঠিয়েছে। রুশ সামরিক বাহিনী মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য কেন্দ্র স্থাপন করেছে। জার্মানি জরুরি জেনারেটর, তাঁবু এবং কম্বল সরবরাহ করছে। পানি শোধনাগারের সরঞ্জামসহ ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে দেশটি। জার্মানি টিএইচডব্লিউ নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা থেকে তুরস্কে দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ জার্মানি সোমবার গভীর রাতে তুরস্কে কয়েক ডজন ডাক্তার এবং উদ্ধার বিশেষজ্ঞের দল পাঠিয়েছে।

অস্ট্রিয়া সামরিক বাহিনীর দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ৮৪ জন সৈন্য তুরস্কে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পোল্যান্ড পাঠাচ্ছে ৭৬ জন দমকলকর্মী ও ৮টি প্রশিক্ষিত কুকুর ও অন্যান্য সরঞ্জাম। গ্রিস ২১ জনের একটি উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে তুরস্কে। এই দলে রয়েছে দু’টি প্রশিক্ষিত কুকুর ও বিশেষ উদ্ধারকারী গাড়ি। রোমানিয়া দু’টি সামরিক উড়োজাহাজে করে তুরস্কে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কর্মী এবং সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে। ক্রোয়েশিয়া পাঠাচ্ছে ৪০ জন উদ্ধারকর্মী ও ১০টি প্রশিক্ষিত কুকুরের একটি দল। তাদের সঙ্গে থাকছে উদ্ধারকারী সরঞ্জাম ও ভ্যানগাড়ি। জাপান তুরস্কে ৭৫ জন উদ্ধারকর্মীর একটি দল পাঠাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া ৬০ জন উদ্ধারকর্মী এবং চিকিৎসা সামগ্রী পাঠাচ্ছে তুরস্কে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জানিয়েছে, তারা মানবিক সহায়তার জন্য প্রাথমিকভাবে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠাচ্ছে তুরস্কে। এছাড়া দেশটির জিয়নগি প্রাদেশিক সরকার জানিয়েছে, তারা তুরস্কে ১ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে। তুরস্কের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশ ১০ সদস্যের উদ্ধারকারী দল তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে। এ দলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের পাঁচজন করে সদস্য থাকবেন। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিমানে (সি-১৩০) দল তুরস্ক গেছে। পাকিস্তান একটি ফ্লাইটে ৫০ জনের একটি উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে তুরস্কে। আরেকটি ফ্লাইটে পাঠিয়েছে ত্রাণ সহায়তা। ভারত তুরস্কে ১০০ জনের একটি অনুসন্ধানকারী দল পাঠাচ্ছে। ভারতের একটি চিকিৎসা দল প্যারামেডিকস এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধ তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে।

সুইস প্রশিক্ষিত কুকুর পরিষেবা রেডডগ-এর ১৪টি কুকুর এবং ২২ জন উদ্ধারকর্মী তুরস্কে পাঠানো হচ্ছে। তুরস্কে ৮০ জনের একটি উদ্ধারকারী দল পাঠানো হচ্ছে। এ দলে সামরিক বাহিনীর দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরাও থাকছেন। চেক প্রজাতন্ত্র তুরস্কে ৬৮ জনের একটি দল পাঠাচ্ছে। সার্বিয়া তুরস্কে ২১ জনের একটি উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে। মলদোভা ৫৫ জনের একটি উদ্ধারকারী দল তুরস্কে পাঠিয়েছে। লেবানন তুরস্কে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে সামরিক বাহিনীর সেনাদের পাঠাচ্ছে। জর্ডান থেকে জরুরি ত্রাণ সহায়তা সিরিয়া ও তুরস্কে পাঠিয়েছে । ইরানের একটি উড়োজাহাজ ইতোমধ্যে সিরিয়ার দামেস্ক বিমানবন্দরে ত্রাণসহায়তা নিয়ে পৌঁছেছে। ইরাক সিরিয়ায় উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য একটি জরুরি উদ্ধারকারী দল পাঠাচ্ছে। মিসর তুরস্কে জরুরি ত্রাণসহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। মেক্সিকো তুরস্কে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং উদ্ধার অভিযান বিশেষজ্ঞের একটি দল পাঠাচ্ছে। নিউজিল্যান্ড তুরস্কের রেড ক্রিসেন্টে ৬ লাখ ৩২ হাজার মার্কিন ডলার সহায়তা দিচ্ছে। চীনের রেড ক্রস সোসাইটি তুর্কি রেড ক্রিসেন্ট এবং সিরিয়ান রেড ক্রিসেন্টকে ২ লাখ মার্কিন ডলার করে সহায়তা দিচ্ছে।



 

Show all comments
  • Mourshedul Alam ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৮ এএম says : 0
    এত ক্ষয়ক্ষতি পরও কিছুদিন পর আবারও সংবাদ পরিবেশন করা হবে, সিরিয়ায় সরকারি বাহিনী কিংবা মার্কিন কোয়ালিশন বাহিনীর বোমা হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অথবা জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলায় সাধারণ মানুষের জীবন অবসান। এখানে কথিত মানবতার দেশ পশ্চিমারা তাদের স্বার্থের জন্য এই যুদ্ধ থামাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir Evan ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি আমাদের বাংলাদেশকে এমন বিপদ হতে রক্ষা করিও! আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৮ এএম says : 0
    তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্পে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি! শিশু সহ হাজার হাজার মানুষের মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটেছে। দৃশ্যগুলো দেখে খুবই কষ্ট লাগছে। আল্লাহ্ তুমিই সকল বিপদ থেকে হেফাজত এবং রক্ষার মালিক।
    Total Reply(0) Reply
  • Shahalam Babu ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৮ এএম says : 0
    আল্লাহ্ পাক সিরিয়া তুরস্ক জনগণকে হেফাজত করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Dola Datta ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৯ এএম says : 0
    ইস ভগবান এদের রক্ষা কর। খুব খারাপ লাগতেছে বাচ্চাদের জন্য। মানুষের মৃত্যু কতটা ভয়াবহ হয়।তবুও আমাদের মানব জাতি হিংসা, অহংকার, নিয়ে থাকে। কে যে কিভাবে বিপদ এ পরবে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানে
    Total Reply(0) Reply
  • Iɴ Sᴇᴀʀᴄʜ ᴏғ Tʀᴜᴛʜ【সত্যের সন্ধানে】 ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৯ এএম says : 0
    · আল্লাহ মুসলিম উম্মাহ কে হেফাজত করুন এবং আমাদের সবাইকে রহম করুন
    Total Reply(0) Reply
  • IELTS Aid ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২০ এএম says : 0
    · বিশ্ব কঠিন বাস্তবতার অভিজ্ঞতা লাভ করলো। এমন ঘটনা আর যেন না হয় সেই প্রার্থনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • IELTS Aid ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২০ এএম says : 0
    · বিশ্ব কঠিন বাস্তবতার অভিজ্ঞতা লাভ করলো। এমন ঘটনা আর যেন না হয় সেই প্রার্থনা করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Suriya Parvin ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২০ এএম says : 0
    আল্লাহ রহমত অবশ্য আসবে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ রহমত করুক সবার উপর আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধ্বংস্তূপের নিচে প্রাণস্পন্দন

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ