Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মাদরাসা শিক্ষাকে সরকার খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে : শেখ হাসিনা

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষাকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা দেশের সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা অনেক মাদরাসা এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি। শিক্ষকদের সরকারি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। সরকার মাদরাসা শিক্ষাকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। গতকাল বুধবার এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের সময় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি তাঁর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে কম্পিউটারের বোতাম চেপে ২০২২ সালের মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন।

এ সময় মাদরাসায় পড়ুয়াদের জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা যাতে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা নিতে পারে। কারণ, মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পরে ছেলে- মেয়েরা কোথায় গিয়ে কাজ করবে? সেজন্য তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ বা তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা-এসব কারিগরি ক্ষেত্রে যাতে তারা আরও প্রশিক্ষণ নিতে পারে সেই সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের উৎসাহিত করা দরকার। তাতে মাদরাসায় পড়ুয়াদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

২০২২ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা পাস করতে পারেনি, তারা যেন মন খারাপ না করে। সামনে ভালো করার জন্য নতুন করে যেন উদ্যোগ নেয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা কেন ফেল করবে?

বিএনপির শাসনামলে দেশ শিক্ষায় পিছিয়ে যায় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর আমরা শিক্ষার হার ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করলেও বিগত বিএনপি সরকারের সময় এ হার কমে ৪৪ শতাংশে নেমে আসে। তবে আমরা (গত) বিএনপি সরকারের আমলের শিক্ষার হারকে বাড়িয়ে ৪৪ শতাংশ থেকে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ করেছি। আমাদের শিক্ষার হার বর্তমানে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ থেকে আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষার হার বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন তাঁর সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই। সেক্ষেত্রে আমাদের আজকের ছেলে-মেয়েরাইতো সোনার মানুষ। বোর্ড পরীক্ষার পর অবসর সময়ে শিক্ষার্থীদের বুনিয়াদি ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। যাতে তারা নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে। তাহলে তারা দেশ-বিদেশে চাকরি পেতে সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, সরকার তথ্য-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের জন্য এবং ইনকিউবেশন সেন্টার ও ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। পরীক্ষার নিয়মিত প্রস্তুতির পাশাপাশি তারা আইসিটি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে পারছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ ডিজিটাল ডিভাইসের যুগ কাজেই সেদিকে তারা আরো নজর দিলে সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তাছাড়া আমরা প্রত্যেকটা উপজেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাসহ বহুমুখি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, ‘শুধু বিএ, এমএ পাশ করলে হবে না, একই সময়ে তাদের তথ্য-প্রযুক্তির ওপর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ, বর্তমান যুগটা ডিজিটাল ডিভাইসের যুগ। তিনি ছেলে- মেয়েদের অযথা সময় নষ্ট না করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার আহবান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। এর প্রধান হাতিয়ার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। তাই সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাঁর সরকার শিক্ষাকে বহুমুখীকরণ করেছে। সারা বাংলাদেশে, বিশেষকরে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। ফলে শিক্ষার হার ও বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি দেখলাম পাসের হারে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। এর মানে, ছেলেদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হওয়া দরকার। আমাদের ছেলেমেয়েরা খুব মেধাবী, একটু সুযোগ পেলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে। আমরা নিয়ম করেছিলাম, ফলাফল ৬০ দিনের মধ্যে দিতে হবে। এবার আপনারা ৬০ দিনের আগেই দিয়েছেন। তাই সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রত্যেকটি উপজেলা পর্যায়ে একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারীকরণ করে দিয়েছে, বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ঘরের খেয়ে যেন ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষা নিতে পারে সেই সুযোগ আমরা করে দিচ্ছি। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত তাঁর সরকারের বিভিন্ন বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান, বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা প্রদানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার গবেষণার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করেছে। যা একসময় আমাদের দেশে ছিল না। ’৯৬ সালে সরকারে এসেই প্রথম তিনি গবেষণার জন্য পৃথক বরাদ্দ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি এটা, গবেষণারই ফসল। বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও কৃষির বর্তমানে যে গবেষণা চলছে তার সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রেও তিনি গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। শিক্ষামন্ত্রী সম্মিলিত ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। পরে একে একে ১১টি শিক্ষা বোর্ড- নয়টি সাধারণ বোর্ড, একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।

করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় গত ৬ নভেম্বর সারাদেশে স্বাভাবিক পরিবেশে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং শেষ হয় ২২ ডিসেম্বর। মাত্র ৫৭ দিনের মাথায় ফল প্রকাশ করা হলো। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭জন। এর মধ্যে ৬লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন ছাত্র এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন। বিএনপি শাসনামলে শিক্ষায় বাংলাদেশ পিছিয়ে যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমাদের একটা প্রকল্পও ছিল নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। প্রত্যেকটা জেলা যেন নিরক্ষরতামুক্ত হয় সেজন্য কয়েকটি জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণাও করেছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ সালে আমরা আর সরকারে আসতে পারিনি। এর পর বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে সেসব প্রকল্প আর কার্যকর হয়নি। ##



 

Show all comments
  • Md. Bablu ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৩৮ পিএম says : 0
    এই বিষয়ে আপনার মূল্যবান ঘোষণার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ. বিনীতভাবে, আমি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের স্বাধীন দেশ বাংলাদেশে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক মুসলিম ধর্মের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা এবং সাধারণ শিক্ষা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করতে চাই। আমাদের দেশের জন্য কঠোরভাবে এবং সততার সাথে আপনার সমস্ত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছি। আপনার মঙ্গল কামনা করি এবং আল্লাহ আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে আশীর্বাদ করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Wahid Murad ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২৩ এএম says : 0
    দালান নির্মান আর শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধি মানেই শিক্ষার মান বৃদ্ধি নয়!
    Total Reply(0) Reply
  • Jahid Hasan ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২৪ এএম says : 0
    সন্তানের সাফল্যে মায়েরা সব সময় কাঁদেন। কারণ তাদের আবেগ একটু বেশি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Jashim Hossain ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২৫ এএম says : 0
    রেজাল্ট নিয়ে মন খারাপ? শুনুন, মহান আল্লাহ্ কাউকে মেধাশূন্য করে পৃথিবীতে পাঠান নি। আপনার ভেতরের প্রতিভা টা খুঁজে বের করুন। সেটা কাজে লাগান। সামনে এগিয়ে যান এবং সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখুন। নিশ্চয় আপনার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। মনে রাখবেন, জীবনের এই লম্বা যাত্রায় আপনাকে হোচট খেতেই হবে। দাড়াতে পারেন, বসতে পারেন, একটু বিশ্রাম নিতে পারেন তবে থেমে যাওয়া যাবে না। আপনি থেমে যাবার জন্য আসেন নি। এবার এইস এস সি পরীক্ষায় যারা অকৃতকার্য হয়েছো তাদের জন্য শুভকামনা সময়
    Total Reply(0) Reply
  • A M Swapon ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২৫ এএম says : 0
    পরীক্ষা নিয়ে এতো আবেগ হওয়া ঠিক না বেশি আবেগে বিপদে পড়তে হয় আল্লাহ না করুক যদি ফেল হইত তাহলে যেকোনো একটা বিপদ হয়ে যাইতো
    Total Reply(0) Reply
  • Nasrin Subedar ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২৬ এএম says : 0
    সবাই কেন যানি জিপিএ পাওয়া টা কে মন্দ বলে। আবার না পেলেও রাগ করে। ছেলে মেয়েরা যে কোন দিকে যাবে তার ঠিক নেই। আমি বলি বাবা মা কে ছেলে মেয়েদে একেবারে নিকটে থাকেন। ইনশাআল্লাহ সব ভালো হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nizamul Islam Jcd ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২৬ এএম says : 0
    ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট(এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল স্নেহের শিক্ষার্থীদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ