Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চ্যাটজিপিটি কেন এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:৫২ পিএম

গত বছরের নভেম্বরে তৈরি হওয়ার পর সারা বিশ্বেই এখন চ্যাটজিপিটি নিয়ে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। শুধু জানুয়ারি মাসেই বিশ্বের প্রায় ১০ কোটি মানুষ চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অ্যাপলিকেশনটি আপনার যেকোনো প্রশ্নের উত্তর হাজির করতে পারে। সবচেয়ে অভিনব হলো, প্রচলিত কম্পিউটার সফটওয়্যার বা অ্যাপলিকেশনের বাইরে গিয়ে সেখানে সে নিজের মতো বুদ্ধিমত্তা বা মানবিকতার ছোঁয়াও দিতে পারে।

কিন্তু এটি নিয়ে আগ্রহের পেছনে কারণগুলো কী? কেন চ্যাটজিপিটি অনেকের আশঙ্কার কারণও হয়ে উঠেছে? চ্যাটজিপিটির পুরো নাম চ্যাট জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফর্মার। এটি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন একটি অ্যাপলিকেশন যাকে বলা হয় ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল টুলস’। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি চ্যাটবট সিস্টেম বা আলাপচারিতা করার অ্যাপলিকেশন। এটি ইন্টারনেটে থাকা নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে লিখিত প্রশ্নের জবাব হাজির করে। সে ফরম্যাট বা যেভাবে চাওয়া হয়, অনেকটা সেভাবেই সে এসব উত্তর দেয়।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলছেন, "এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যতোগুলো ইঞ্জিন আমরা এর আগে দেখেছি, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে স্মার্ট। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার যে এমন স্মার্টলি করে, যেটা মানুষজন এর আগে ভাবেনি। এ কারণেই এটা নিয়ে সবার এতো আগ্রহ তৈরি হয়েছে।" একে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের একটি ছোটখাটো বিপ্লব বলে তিনি বর্ণনা করছেন।

এর আগেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। গুগল বা এক্সপ্লোরারের মতো সাইটগুলোয় কোন অনুসন্ধান করলে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের লিংক হাজির করে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি যেভাবে সরাসরি সুনির্দিষ্ট উত্তর দিয়ে দেয়, এমনটা আর দেখা যায়নি। সে রচনা লিখতে পারে, চাকরির বা ছুটির আবেদন, চুক্তিপত্র, কোন ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা, ছোটখাটো প্রতিবেদন তৈরি করে দিতে পারে। এমনকি এটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম, গান বা কবিতাও লিখতে পারে।

উত্তর পছন্দ না হলে তাকে বললে সে আবার আরও ভালো করে উত্তর তৈরি করে। সুমন আহমেদ সাবির বলছেন, চ্যাটজিটিপিকে প্রশ্ন করলে হয়তো একটা লিগ্যাল ডকুমেন্ট লিখে দিচ্ছে, প্রোগ্রাম লিখে দিচ্ছে, একটা রিপোর্ট তৈরি করে দিচ্ছে। ফলে অনেকের কাজ বেশ সহজ হয়ে গেছে। সেটাও এর জনপ্রিয়তার একটা কারণ। "এমনকি আপনি যদি এর সাথে ছোটখাটো রসিকতাও করেন, সেটাও কিন্তু সে বুঝতে পারে,’’ বলছেন সাবির।

এই প্রোগ্রামের সুবিধা হলো, ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও বেশি শিখতে থাকে। ব্যবহারকারীর প্রশ্নের ধরন বা তথ্য থেকেও সে নিজেকে সমৃদ্ধ করে তোলে। তবে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, চ্যাটজিপিটি আসলে নিজে থেকে কিছু জানে না। তাকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বা তৈরি করা হয়েছে যে, সে ইন্টারনেটে থাকা তথ্য-উপাত্ত খুঁজে উত্তরটি তৈরি করে। তবে চ্যাটজিপিটি এখনো লাইভ কাজ করে না। ইন্টারনেটে ২০২১ সাল পর্যন্ত যেসব তথ্য রয়েছে, শুধু সেগুলোই তার তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিসকোর ‘ওপেনএআই’ নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান চ্যাটজিপিটি উদ্ভাবন করেছে। দুহাজার পনের সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইলন মাস্ক এবং স্যাম অ্যাল্টম্যানসহ আরও কয়েকজন। যদিও ইলন মাস্ক ২০১৮ সালে বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হলো ‘নিরাপদ এবং সুবিধার’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা।

গত বছর ৩০ নভেম্বর কোম্পানিটি চ্যাটজিপিটি তৈরির ঘোষণা করে। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানটি জিপিটি-৩ নামের একটি অ্যাপলিকেশন তৈরি করেছিল। সেটি এমন বার্তা লিখতে পারতো যা দেখে মনে হবে কোন মানুষ লিখেছে। এরপর ডেল-ই নামের একটি অ্যাপ তৈরি করেছিল। সেখানে কারও লেখা বার্তা দিয়ে চিত্র তৈরি করতে পারতো। জিপিটি-৩ এবং পরবর্তীতে তৈরি করা জিপিটি-৩.৫ মিলেই আজকের চ্যাটজিপিটি তৈরি করা হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষমতা বাড়াতে সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে মাইক্রোসফট। ২০১৯ সালে এই কোম্পানিতে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল মাইক্রোসফট। তবে গত জানুয়ারি মাসে এই কোম্পানিটি একটি পেইড ভার্সন বা টাকার বিনিময়ে ব্যবহারের একটি ভার্সন চালু করেছে। পেইড ভার্সনটি আরও দ্রুত কাজ করে। যখন পিক টাইমে অন্যরা চ্যাটজিপিটিতে ঠিক মতো প্রবেশ করতে পারেন না, সেই সময়েও কাজ করে। আপাতত শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে মাসিক ২০ ডলার করে সার্ভিস চার্জ ধরা হয়েছে। বাকিরা এই ভার্সনটি ব্যবহার করতে চাইলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বিনামূল্যের সেবাও চালু থাকছে।

চাকরির বাজার খর্ব করবে?

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, একদিকে যেমন এটা অনেকের কাজ সহজ করে দেবে, তেমনি অনেক মানুষের জন্য চাকরির একটা ঝুঁকিও তৈরি করবে। সুমন আহমেদ সাবির বলছেন, ‘মিডলেভেল কাজ যারা করেন, তাদের চাকরি হয়তো এখনি চ্যাটজিপিটির কারণে চলে যাবে না। কিন্তু এগুলোর দক্ষতা যখন আরও বাড়বে, এরকম আরও অ্যাপলিকেশন তৈরি হবে, একসময় কিন্তু সাধারণ অনেক কাজের জন্য আর প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী রাখতে চাইবে না। এখন পর্যন্ত চ্যাটজিপিটির ব্যবহার এক ধরনের অ্যামেচার পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু খুব দ্রুত বাণিজ্যিক কাজে এটার ব্যবহার শুরু হবে, অনেক মানুষ এটার ব্যবহার করতে শুরু করবে। তখন জব মার্কেটে সেটার একটা ইমপ্যাক্ট পড়তে বাধ্য। ছোটখাটো অনেক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো তখন ভাববে, এআই দিয়েই তো আমি দ্রুত কাজ করতে পারছি, খরচ বাঁচাতে পারছি। সেই চিন্তাভাবনা কিন্তু এক সময় আসবে।’

সারা বিশ্বেই গবেষক, শিক্ষার্থী এবং ব্যবসাসহ নানা পেশার মানুষজন চ্যাটজিপিটির সহায়তা নিতে শুরু করেছেন। আবু জাফর আহমেদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নানা কাজে অ্যাসাইনমেন্ট রিপোর্ট লেখার সময় পাচ্ছিলাম না। চ্যাটজিপিটিকে বললাম, মিনিটের মধ্যে লিখেছিল। একটু এডিট করে চমৎকার একটা রিপোর্ট হয়ে গেল।’

ঢাকা বসেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার কয়েকটি কোম্পানির জন্য লেখালেখি এবং কনটেন্ট তৈরির কাজ করেন আরিফুল হাসান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কনটেন্ট তৈরি করা, প্রতিবেদন লেখা, গ্রাহক সেবার মতো অনেক কাজের জন্য মানুষ এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চ্যাটজিপিটি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ