Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্রাইম পেট্রোল দেখে অপহরণের পর স্কুলছাত্রকে খুন, আটক ৫ ছাত্র

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:০১ পিএম

খুলনায় অপহরণের পর গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নীরব মণ্ডলকে (১৩) হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ একই স্কুলের পাঁচ ছাত্রকে আটক করেছে। ভারতীয় ক্রাইম পেট্রোল সিরিয়াল দেখে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তারা এই অপহরণের পরিকল্পনা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নিহত নীরব খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া পূর্বপাড়া এলাকার পান-সুপারি ব্যবসায়ী শেখর মণ্ডলের ছেলে। আটকরা হচ্ছে- গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সোহেল মোল্লা (১৫), হীরক রায় (১৫) ও পিতু মণ্ডল (১৪), দশম শ্রেণির ছাত্র পিয়াল রায় (১৫) ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র দ্বীপ মণ্ডল (১৩)। এর মধ্যে পিয়ালের বাড়ি ডুমুরিয়ার ভান্ডারপাড়া তেলিগাতি এলাকায় এবং অন্য চারজনের বাড়ি গুটুদিয়া এলাকায়।

ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কনি মিয়া বলেন, নীরব মণ্ডল গুটুদিয়া এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) স্কুল ছুটির পর পিয়াল নামে একটি ছেলে নীরবকে ডেকে নিয়ে যায়। স্কুলের পেছনে পরিত্যাক্ত একটি ভবনে মধ্যে অবস্থান করছিল মিতু, সোহেল এবং দ্বীপ। নীরবকে সেখানে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা তার পা ধরে মুখ বন্ধ করতে চায়। এছাড়া রশি ঝুলিয়ে রেখেছিল দ্বীপ। আটকদের ভাষ্য অনুযায়ী- তাদের পরিকল্পনা ছিল অজ্ঞান করে তার বাবার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার। কিন্তু তারা প্রথমেই তাকে ঝুলিয়ে মেরে ফেলে। ২-৩ জন রশি টেনে ধরে রাখে, নীরব সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়।

তিনি আরও বলেন, সেখানে নীরবের লাশ রেখে তারা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। হীরকের দায়িত্ব ছিল নীরবের বাবার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করার। ওই নম্বরে ফোন দিয়ে নীরবের বাবার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি জানার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে আটক করি। লাশ উদ্ধারের আগে প্রথমে সোহেলকে আটক করি। পরে দ্বীপ, পিয়াল ও পিতুকে আটক করা হয়। আর লাশ উদ্ধারের পর হীরককে আটক করা হয়।

পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রাত ১১টার পর বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত ভবনে যাই। এ সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক, স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন। ভবনের একটি কক্ষে মরদেহটি নোংরা কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। নীরবের কাঁধে স্কুল ব্যাগ ছিল। তখন আমরা লাশটি উদ্ধার করি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ওসি কনি মিয়া বলেন, আটককৃতরা ক্রাইম পেট্রোলের একটি পর্ব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সেই প্ল্যান অনুযায়ী কার কি ভূমিকা থাকবে, সেই অনুযায়ী তারা ভূমিকা নিয়েছে। তারা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা ক্রাইম পেট্রোল দেখেই ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি এবং আগে পরে কি করবে সেই অনুযায়ী কাজ করেছে।

তিনি বলেন, সমাজিকভাবে কিশোর অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে। তারই একটা অংশ হিসেবে ছেলেগুলো এতো সহজেই এ ধরনের কঠিন একটি অপরাধ করতে সাহস পেয়েছে। তারা জানিয়েছে টাকার জন্যই নীরবকে অপহরণ করা হয়। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগে তাকে রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা হয়। এ ঘটনায় আটককৃত পাঁচজনকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত নীরব মণ্ডলের বাবা শেখর মণ্ডল বলেন, স্কুল ছুটির পর নীরব না আসায় বাসা থেকে ফোন করে আমাকে জানানো হয় নীরব এখনো আসেনি। এরপর ফোনে একজন নীরবের মুক্তির জন্য টাকা দাবি করে এবং পুলিশকে না জানাতে বলে। এ সময় আমি বলি পুলিশকে জানাবো, তখন ফোন কেটে দেয়। বিষয়টি আমি ডুমুরিয়া থানা পুলিশকে জানাই। পুলিশ ওই মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে তাদেরকে আটক করে।তিনি বলেন, এমনভাবে যেন আর কোনো মা-বাবার বুক খালি না হয়। আমরা চাই হত্যায় জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি হোক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ