Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খাবার থেকে আয়োডিন পাই

| প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৭ এএম

এখন আমরা প্রায় সকলেই থায়রয়েড হরমোন কম বেশী হলে কি হয় বা আয়োডিন গ্রহণ কিভাবে করতে হয় এই সংক্রান্ত তথ্য কম-বেশি জানি। কিন্তু তারপরও প্রাত্যহিক ব্যবহারে সুবিবেচন প্রসুত আচরনের ঘাটতি ব্যাপক। একজন মানুষের একদম ভ্রুণ অবস্থা থেকে শুরু করে মৃত্যু বরণ করা পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে থায়রয়েডের হরমোন অন্যতম প্রধান প্রভাবশালী উপাদান। আবার খাদ্য গ্রহণে বিজ্ঞান সম্মত দৃষ্টিভঙ্গী অতিসহজেই আয়োডিনের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম আয়োডিন ঘাটতি অঞ্চলের একটি। অতএব, বাংলাদেশী মানুষদের খাদ্য উপাদান হতে সর্বোচ্চ পরিমাণ আয়োডিন প্রাপ্তী নিশ্চিত করনে পদক্ষেপ গ্রহণ আশু জরুরী।

১৯৯৩ সন থেকে শুরু করে ২০০৭ সন পর্যন্ত ইউনিসেফের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ইউনিভার্সাল সল্ট আয়োডিনেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। যার মূল লক্ষ্য ছিল খাবার লবণে প্রয়োজনীয় আয়োডিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এ কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে লবণ ফ্যাক্টরীগুলোতে প্রয়োজনীয় আয়োডিন সরবরাহ, সরবরাহকৃত আয়োডিনের মিশ্রন নিশ্চিত করা ও বাজারে আয়োডিন মিশ্রিত লবণকে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করতে উৎসাহিত করা হতো। এতে যথেষ্ট কাজ হয়েছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরের অবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।

পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই আয়োডিনের প্রধান উৎস হল লবণ। কিন্তু লবণে মিশ্রিত আয়োডিন একটি উদ্বায়ী পদার্থ। এটি খোলা বাতাসে উড়ে যায়। তাই বাজারের খোলা লবণে আয়োডিন পাওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। ইউনিভার্সাল সল্ট আয়োডিনেশন প্রোগ্রামের কারণে প্যাকটজাত লবণের ব্যাপারে ধারণা তৈরি হয়েছে বটে, তবে প্যাকেটজাত লবণে আয়োডিনের মিশ্রন বা উপস্থিতি সরকার বা তদারককারী সংস্থার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক।

খাদ্য গ্রহণের সময় লবণ মিশ্রনের পদ্ধতিও আয়োডিন প্রাপ্তির একটি নিয়ামক ঘটনা হতে পারে। আমরা সাধারণত লবণ খোলা রাখতে অভ্যস্ত। তাহলে ঐ লবণের উদ্বায়ী আয়োডিন বাতাসে হারিয়ে যায়। লবণের আয়োডিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে প্যাকেট থেকে লবণ নিয়ে শুরু থেকেই কোন ভাল ঢাকনা ওয়ালা কৌটা বা বয়োমে তা সংরক্ষণ করতে হবে। যা প্রয়োজনের সময় ঐখান থেকে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে বা খেতে হবে। কৌটা বা বয়োমটি আবার চুলার খুব কাছে রাখা ঠিক হবে না।

ভৌগলিক কারণে বা আচরণগত কারণে বাংলাদেশের মানুষ আয়োডিন সমৃদ্ধ সামদ্রিক খাদ্য গ্রহণে খুব একটা অভ্যস্ত নয়। জাপানসহ সকল দ্বীপ রাষ্ট্রের মানুষ তাদের গৃহীত সামদ্রিক মাছ ও আগাছা থেকেই প্রয়োজনীয় আয়োডিন পেয়ে থাকে। আমাদের বঙ্গপোসাগর থেকে প্রাপ্ত মৎস্য আমাদের খুব ভাল আয়োডিনের উৎস হতে পারে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট জনসচেনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তবে বর্তমানে ঢাকাসহ কিছু বড় শহরে সামদ্রিক মৎস্য প্রাপ্তি ও তা খাবার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

জানা থাকা ভাল সামুুদ্রিক আগাছা ছাড়াও সামুদ্রিক মাছ, শেল ফিস-কড, টুনা, শ্রিম্প ইত্যাদিতে ভাল পরিমান আয়োডিন বিদ্যমান। এছাড়াও দুগ্ধ জাতীয় খাবার-দুধ, পনির, মাঠাতে আছে আয়োডিন। ডিম, মুরগী, কলিজায়ও কিছু আয়োডিন আছে। তাই প্রয়োজনীয় আয়োডিন সংগ্রহের জন্য যার যার সাধ্যমত আমরা খাবারের প্রতি মনোযোগি হব। এমনটা করতে পারলেই শিশু থেকে শুরু করে বড়দেরও সকলেই এই আয়োডিন ঘাটতি জনিত বিভিন্ন রোগ থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব। সরকারের পাশাপাশি আমরা যারা জনস্বাস্থ্যের সাথে জড়িত তারাও জনগনকে সচেতন করতে যার যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করে যাব।


ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন