Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদানির পর্দাফাঁস : কে এই হিন্ডেনবার্গ!

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১১:১৬ এএম

তাদের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই ঝড় উঠে গেছে ভারতীয় শেয়ার বাজারে। প্রকাশিত হয়েছে যে কারচুপি করে নিজেদের সংস্থার শেয়ার দর বাড়িয়েছে ভারতের অন্যতম নামী শিল্পগোষ্ঠী আদানি। এর রেশ ধরে বড় ধাক্কা খেয়েছে গৌতম আদানির শিল্পগোষ্ঠী। যাদের রিপোর্ট ঘিরে এত হইচই, সেই ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ সংস্থা আদপে কারা?

আমেরিকার লগ্নি-সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা হলো ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’। কোনো সংস্থার শেয়ার বিক্রিতে গলদ রয়েছে কি না, কিংবা বাজার থেকে সংস্থাগুলো যে ঋণ নিচ্ছে তাতে স্বচ্ছতা বজায় রয়েছে কি না, এই ধরনের বিভিন্ন বিষয় যাচাই করে দেখে এই সংস্থা।

‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন। কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক পাশ করেছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে পড়াশোনা শেষের পর ‘ফ্যাক্টসেট রিসার্চ সিস্টেমস আইএনসি’ নামে এক সংস্থায় কর্মজীবন শুরু করেন অ্যান্ডারসন। তবে আর্থিক সংস্থায় পা রাখার আগে ইসরাইলে অ্যাম্বুল্যান্স চালক হিসেবেও কাজ করেছেন অ্যান্ডারসন।

২০১৭ সালে ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর প্রতিষ্ঠা করেন অ্যান্ডারসন। ‘ম্যান মেড ডিজাস্টার’ অর্থাৎ, মানুষের জন্য যে বিপর্যয় ঘটে, তা খুঁজে বার করা কাজ ওই সংস্থার। কোনো সংস্থার লেনেদেনে অনিয়ম হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখে হিন্ডেনবার্গ।

আর্থিক বিপর্যয় খুঁজে বার করা যে সংস্থার কাজ, ওই সংস্থার নামকরণের সাথেও এক বিপর্যয়ের ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে। ১৯৩৭ সালের ৬ মে আমেরিকার নিউ জার্সিতে ম্যাঞ্চেস্টার টাউনশিপে অবতরণের সময় আগুন লেগে গিয়েছিল জার্মানির যাত্রিবাহী বিমান ‘এলজেড১২৯ হিন্ডেনবার্গ’ বিমান। এই দুর্ঘটনা ‘হিন্ডেনবার্গ বিপর্যয়’ নামে পরিচিত। ওই বিপর্যয়ের ঘটনার নামেই নামাঙ্কিত ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’।

বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করে সরব হয়েছে হিন্ডেনবার্গ। তবে যে সংস্থার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ করে সাফল্য পেয়েছিল হিন্ডেনবার্গ, তারা হল আমেরিকার বৈদ্যুতিক ট্রাক নির্মাণকারী সংস্থা নিকোলা কর্পোরেশন।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিকোলার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছিল হিন্ডেনবার্গ। তাদের অভিযোগ ছিল, প্রযুক্তিগত বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়েছে নিকোলা।

তীব্র গতিতে ছুটছে বৈদ্যুতিক ট্রাক। এমনই একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল নিকোলা। ওই ভিডিওটিকে চ্যালেঞ্জ করে হিন্ডেনবার্গ। তারা দাবি করে যে ওই গাড়িটি পাহাড়ের নিচে গড়িয়ে পড়েছিল।

বিনিয়োগকারীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগে নিকোলার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিল্টনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আমেরিকার একটি আদালত। হিন্ডেনবার্গ জানিয়েছিল, নিকোলার প্রাক্তন কর্মীদের কাছ থেকে এই প্রতারণার ব্যাপারে তথ্য পেয়েছিল তারা। আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রেও একই দাবি করেছে হিন্ডেনবার্গ।

হিন্ডেনবার্গের তরফে দাবি করা হয়েছে, কারচুপি করে নিজেদের সংস্থাগুলোর শেয়ার দর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী। এ নিয়ে দু’বছর ধরে তদন্ত চালিয়ে তারা এই তথ্য জানতে পেরেছে বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।

হিন্ডেনবার্গের দাবি, এ নিয়ে গবেষণা চালাতে তারা আদানি গোষ্ঠীরই কয়েক জন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্তার সাথে কথা বলেছেন। পাশাপাশি কয়েক হাজার নথি পর্যালোচনা করেছেন তারা। সব দিক খতিয়ে দেখেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে।

যদিও হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন’ বলে পাল্টা দাবি করেছে আদানি গোষ্ঠী। তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে লগ্নিকারীদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এই শিল্পগোষ্ঠী।

তবে শুধু আদানি বা নিকোলা নয়, ২০১৭ সালে পথচলা শুরুর পর থেকেই একের পর এক সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেছে হিন্ডেনবার্গ।

কমপক্ষে ১৬টি সংস্থার অনিয়মের কথা ফাঁস করেছে হিন্ডেনবার্গ। সংস্থার ওয়েবসাইটে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের অন্যতম নামী শিল্পগোষ্ঠী আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ করে হইচই ফেলে দিয়েছে এই বিদেশী সংস্থা।

হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ, কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর কয়েক গুণ বাড়িয়ে আদানিরা বিশাল সম্পদ তৈরি করেছেন। এই কায়দায় গত তিন বছরে আদানির শেয়ার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮০০ শতাংশের বেশি। তবে সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে পাল্টা মুখ খুলেছে আদানি গোষ্ঠী। তবে এতে বিড়ম্বনা কমেনি আদানিদের।

হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের জেরে আদানিদের শেয়ারের দাম মুখ থুবড়ে পড়ছে। গত বুধ এবং শুক্রবার আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ারমূল্য কমেছে ৪.১৭ লাখ কোটি রুপিরও বেশি।

ইলন মাস্কের নগদে টুইটার কেনা নিয়েও স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ তোলে হিন্ডেনবার্গ। তাদের দাবি ছিল, নগদে টুইটার কেনা এবং ক্রমে তা নিয়ে চলা অশান্তিতে সংস্থার শেয়ার দর অন্যায্যভাবে কমেছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ