Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞ: যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্বের মানবাধিকার কোথায়?

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

তৃতীয় বারের মতো ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় আসার পরপরই ফিলিস্তিনীদের ওপর দমন-পীড়ন ও হত্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই ইসরাইলি বাহিনীর দফায় দফায় হামলা ও অভিযানে ফিলিস্তিনীদের হত্যা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ইসলাইলি বাহিনী দখলকৃত পশ্চিম তীরে অভিযান চালায়। সেখানে জেনিন শরনার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করে। এতে আরও ১২ জন আহত হয়। এ অভিযানসহ এ বছর ইসরাইলি বাহিনীর হাতে ২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গত বছরের শুরু থেকে ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। গুলি ও নির্যাতন করে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। ২০২২ সালে ১৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছে। এ এমন এক বর্বরতা যা যুগের পর যুগ ধরে চলছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ তার মিত্র দেশগুলোর মধ্যে কোনো রা নেই। জাতিসংঘও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং তার কোনো প্রতিবাদ ও বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। নিরীহ মানুষ হত্যায় তার কোনো জবাবদিহি কিংবা কোনো ধরনের তিরস্কারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনিদের জন্য নেতানিয়াহুকে বলা হয় ‘কসাই’। যখনই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তখনই নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর নেমে এসেছে নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ। আগে থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল, নেতানিয়াহু পুনরায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এই কট্টরপন্থী প্রধানমন্ত্রী হলে যে ফিলিস্তিনীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে, তা আগে থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। বাস্তবেও তাই হয়েছে। ক্ষমতায় এসেই হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছেন। শরনার্থী শিবিরসহ সর্বত্র অভিযানের নামে ফিলিস্তিনীদের হত্যা করছেন। ইসরাইলকে বলা হয়ে থাকে, মধ্যপ্রাচ্যের ‘বিষফোঁড়া’। এর কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি লেগে আছে। বহুবার শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হলেও তার কারণে তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাবিশ্বও এ ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে। এমন কথাও বলা হয়েছে, আত্মরক্ষার অধিকার ইসরাইলের রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নিরস্ত্র ফিলিস্তিনীদের ওপর গুলি ও হত্যা করার মধ্যে আত্মরক্ষার কি আছে? নিরস্ত্রর ওপর গুলি বর্ষণ ও হত্যাকাÐে কি ফিলিস্তিনিদের আত্মরক্ষার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না? যুক্তরষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কাছ থেকে এমন প্রশ্রয় পেয়ে ইসরাইল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সারাবিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে এত সোচ্চার, সেই তাদের ইসরাইলের ক্ষেত্রে এসে মানবাধিকার থমকে যায়। কোনো ধরনের টুঁ শব্দ করে না। এর কারণ সম্পর্কে বুঝতে অসুবিধা হয় না। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চিরায়ত মনোভাবই হচ্ছে, বিশ্বের যে প্রান্তেই মুসলমান হত্যা ও নির্যাতন হোক না কেন, সেক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তাদের কোনো কথা থাকে না। ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় যুদ্ধ চাপিয়ে মুসলমান হত্যায় তারা মেতে উঠেছিল। সেখানে যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, তা নিয়ে কেন ভাবেনি। ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলমান নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যা হলেও তা নিয়ে কোনো কথা বলে না। তাদের মধ্য এমন প্রবণতা বিদ্যমান, মুসলমান হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় না। শুধু মুসলমান হত্যাই নয়, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু এবং মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকাও এখন স্পষ্ট। এ যুদ্ধ প্রলম্বিত করার ক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। যুদ্ধ বাঁধিয়ে অস্ত্র বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। আফ্রিকার অনেক দেশ এখন দুর্ভিক্ষের কবলে। সেখানে না খেয়ে মানুষ মরছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কোনো কথা নেই। অথচ তারা বিশ্বে মানবাধিকারের সৌল এজেন্ট হয়ে বসে আছে। মানবাধিকার ফেরি করে বেড়াচ্ছে। ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের স্বার্থ যেখানে জড়িয়ে সেখানেই তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠে। মানবাধিকার নিয়ে তাদের এই ‘একচোখা’ নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মানবাধিকারের কথা বলা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের স্বার্থের অনুকূলে মানবাধিকারের ছবক দেয়া মানায় না। ফিলিস্তিনে ইসররাইল প্রায় প্রতিদিন যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইসরাইল যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার শত্রæ হিসেবে বিবেচিত, তা আমলে নিচ্ছে না। জাতিসংঘও চুপ করে বসে আছে। এক্ষেত্রে, তাদের মানবাধিকার কোথায় গেল? দুঃখের বিষয়, ওআইসিসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। কথা বললে হয়তো, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকত। আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনে ইসরাইল যে হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছে, তা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিশ্ব বিবেকের সোচ্চার হওয়া জরুরি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কথা বলা উচিত। ফিলিস্তিন সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা উচিত।



 

Show all comments
  • Kma Hoque ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৫:২৮ এএম says : 0
    যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মানবাধিকারের কথা বলা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের স্বার্থের অনুকূলে মানবাধিকারের ছবক দেয়া মানায় না। ফিলিস্তিনে ইসররাইল প্রায় প্রতিদিন যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইসরাইল যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার শত্রæ হিসেবে বিবেচিত, তা আমলে নিচ্ছে না। জাতিসংঘও চুপ করে বসে আছে। এক্ষেত্রে, তাদের মানবাধিকার কোথায় গেল? দুঃখের বিষয়, ওআইসিসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোও এ ব্যাপারে কোনো কথা বলছে না। কথা বললে হয়তো, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকত।
    Total Reply(0) Reply
  • Karim ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৫:২৬ এএম says : 0
    ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞ চালালে তখন বিশ্বের মোড়লদের মানবাধিকার তো দেখা যায় না। কেনো এটা। তখন তো জাতিসংঘও চুপ থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • aman ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৫:২৭ এএম says : 0
    আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনে ইসরাইল যে হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছে, তা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিশ্ব বিবেকের সোচ্চার হওয়া জরুরি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কথা বলা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Kma Hoque ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৫:২৭ এএম says : 0
    ফিলিস্তিন সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Kma Hoque ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৫:৩০ এএম says : 0
    মানবাধিকার নিয়ে আমেরিকা ও তাদের মিত্রদের এই ‘একচোখা’ নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ফিলিস্তিন ও ঈসরাইল ইস্যু চিরতরে সঙ্কট করা দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Aman Ullah Talukder ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৪৯ এএম says : 0
    জাতিসংঘ মানেই আমেরিকান সংঘ! যখন ইসরাইলি ইহুদিরা ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অন্যায়ভাবে হত্যা করে তখন আমেরিকা ও অন্যান্য পশ্চিমা বিশ্ব জাতিসঙ্ঘসহ মুখে কুলুপ এটে থাকে! এই হল তাদের মানবাধিকার!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন