Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঐতিহাসিক মিরাজুন্নবী (সা:)

অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াছিন মজুমদার | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

অধিকাংশের বর্ণনা মতে মক্কা থেকে মদিনা হিজরতের দেড় বছর পূর্বে নবুয়াতের দ্বাদশ বছরে রজব মাসের ২৭ তারিখে নবী (সঃ) এর ইসরা ও মিরাজ সংগঠিত হয়। বর্ণিত আছে নবী (সঃ) স্বীয় দুধবোন উম্মে হানির গৃহে শায়িত ছিলেন হঠাৎ গৃহের ছাদ উম্মুক্ত হয়ে যায়। জিবরাইল (আঃ) ছাদের ফাঁকা স্থান দিয়ে নবী (সঃ) কে উঠিয়ে নিয়ে যান। সেখানে নবী (সঃ) এর বুক থেকে নাভি পর্যন্ত স্থান বিদারণ করে জমজম পানি দ্বারা ধৌত করেন। অত:পর একটি স্বর্ণের পাত্রে করে ঈমান ও হিকমত নিয়ে আসা হয় তা দিয়ে নবী (সঃ) এর অন্তর পূর্ণ করে দেয়া হয়। উপর্যুক্ত কাজের মাধ্যমে এ ভ্রমন ও প্রভুর সান্নিধ্য লাভের পুরোপুরি সক্ষমতা অর্জিত হয়। অত:পর বোরাক নামক একটি জান্নাতি বাহন আনয়ন করা হয়। প্রাণীটি এত দ্রুতগামী ছিল যার প্রতিটি পদক্ষেপ দৃষ্টি সীমার শেষ প্রান্তে পতিত হত। বোরাকে আরোহন করে নবী (সঃ) কাবা গৃহ থেকে সুদুর ফিলিস্তিনে অবস্থিত মসজিদে আকছা অর্থাৎ বায়তুল মোকাদ্দাছে পৌঁছেন। মসজিদে আকছার সম্মুখে একটি পাথর ছিল। পাথরটির মধ্যে একটি ছিদ্র ছিল। ঐ ছিদ্রের মধ্যে রশি প্রবেশ করিয়ে নবীগণ তাদের বাহনকে বেঁধে রাখতো। নবী (স:) এর বোরাক ও সেভাবে বেঁধে রাখা হয়। নবী (স:) এর বায়তুল্লা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাছ পর্যন্ত ভ্রমনকে বলা হয় ইসরা বা রাত্রি কালীন ভ্রমন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষনা করেন- “পবিত্র মহিমান্বিত স্বত্বা যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের কিছু অংশের মধ্যে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় ভ্রমন করিয়েছেন। যার চতুর্দিকে আমি বরকতময় করেছি যেন আমি তাকে আমার নিদর্শন সমুহের কিছু দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনি সর্ব শ্রোতা সর্বদ্রষ্টা (সুরা বণী ইসরাইল আয়াত-১)। এ ভ্রমনের সমর্থনে বোখারী ও মুসলিম শরীফে বর্নিত একটি হাদিসের অংশ বিশেষ আলোচনা করা হলো। রাসুল (স:) রোম সম্রাট হিরা ক্লিয়াসের নিকট পত্র লিখে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে প্রখ্যাত সাহাবী দেহইয়া কলবী (রা:) কে প্রেরণ করেন। সম্রাট খুব বিচক্ষন ছিলেন। পত্র পাওয়ার পর প্রকৃত ঘটনা অনুধাবনের জন্য আরবের কিছু লোক থেকে তথ্য জানার আগ্রহ প্রকাশ করলেন তৎসময় আবু সুফিয়ান সহ কাফিরদের একটি বাণিজ্য কাফিলা সে দেশে অবস্থান করছিল। সম্রাটের নির্দেশে তাদেরকে দরবারে আনা হল। সম্রাট একের পর এক প্রশ্ন করে নবী (সঃ) সম্পর্কে জেনে নিচ্ছিলেন। আবু সুফিয়ান আন্তরিক ভাবে চাচ্ছিলেন যে এমন কিছু কথা বলবেন যাতে মোহাম্মদ (সঃ) এর ভাবমুর্তি বিনষ্ট হয়। কিন্তু মিথ্যাবাদী সাব্যস্থ হওয়ার ভয়ে তিনি তা করতে সক্ষম হচ্ছিলেন না তবে নবী (স:) কে হেয় করার জন্য তিনি মিরাজের ঘটনাটি বললেন। তিনি বললেন- মোহাম্মদ (সঃ) দাবী করে যে এক রাতে মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাছ এসে সেখান থেকে সপ্তাকাশ ও আরশ ভ্রমন করে এসেছে। যখন আবু সুফিয়ান একথা বলছিলেন তখন সম্রাটের দরবারে বায়তুল মোকাদ্দাছের প্রধান যাজক ও পন্ডিত ইলিয়ার উপস্থিত ছিলেন। সে বলল- আমি সে রাত্রি সম্পর্কে কিছুটা অবগত আছি। সম্রাট বলল কি অবগত আছেন? সে বলল- আমি প্রতি রাতে বায়তুল মোকাদ্দাছের দরজাগুলো বন্ধ করে ঘুমাতে যাই। ঐ রাতে সকল দরজা বন্ধ হলেও একটি দরজা বন্ধ হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল দরজাটির কব্জা নষ্ট হয়ে তা ফ্লোরের সাথে আটকে গেছে কয়েকজন মিলে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই অতঃপর দরজা খোলা রেখেই ফিরে আসি। ভোর বেলায় গিয়ে দেখি দরজাটিতে কোন সমস্যা নেই। এবং নবীগণের বাহন বেঁধে রাখার পাথরের ছিদ্র যা ধুলো জমে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাতে সাওয়ারি বেঁধে রাখার চিহ্ন রয়েছে। এবং মসজিদের ভিতরে কারো আগমনের ও ইবাদত করার সন্দেহ আমার হয়েছিল (তাফসীরে ইবনে কাসির ৩য় খন্ড পৃ: ২৪, মারেফুল কুরআন বাংলা পৃ: ৭৬৫)। ইসরা পর্বের পর সেখান থেকে শুরু হয় মিরাজ বা উর্ধ্ব গমন পর্ব। আকাশ থেকে কুদরতী সিঁড়ি যাকে আমরা চলমান সিঁড়ি বলতে পারি তার মাধ্যমে প্রথম আসমানের নিকট গেলেন। ১ম আসমানের দরজায় নক করা হলো, ভিতর থেকে আওয়াজ এলো আপনি কে? আপনার সাথে কে? জিবরাইল (আঃ) বলল- আমি আমি জিবরাইল আমার সাথে মুহাম্মদ (সঃ)। প্রশ্ন করা হলো তাকে কি নিমন্ত্রন করে আনা হয়েছে? জিবরাইল জবাবে বললেন- হ্যাঁ। ফেরেশতারা তখন দরজা খুলে দিলেন এবং মারহাবা মারহাবা বলে স্বাগতম জানালেন। প্রথম আসমানে হজরত আদম (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তার ডান দিকে কিছু রুহ ও বাম দিকে কিছু রুহ ছিল। তিনি ডানে তাকিয়ে হাসছেন এবং বামে তাকিয়ে কাঁদছেন। নবী (সঃ) এর কারণ জানতে চাইলে জিবরাইল (আঃ) বলল- ডান দিকের রুহ গুলো আসহাবুল ইয়ামিন ও জান্নাতি এবং বাম দিকের রুহ গুলো আসহাবুল শিমাল ও জাহান্নামী। নবী (সঃ) আদম (আঃ) এর সাথে সালাম বিনিময় করলেন। এভাবে দ্বিতীয় আসমানে ইসা (আঃ) এর সাথে, তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আঃ) এর সাথে, চতুর্থ আসমানে ইদরিস (আঃ) এর সাথে পঞ্চম আসমানে হারুন (আ:) এর সাথে, ৬ষ্ঠ আসমানে মুসা (আঃ) এর সাথে ৭ম আসমানে ইবরাহিম (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। নবী (সঃ) দেখতে পেলেন কাবা গৃহ বরাবর ৭ম আসমানে বায়তুল মামুর নামক একটি গৃহ আছে ফিরিস্তাগণ যাতে তাওয়াফের জন্য সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকে। ৭০ হাজার ফেরেশতা একত্রে তাওয়াফের জন্য প্রবেশ করে তারা বের হলে অন্য ৭০ হাজার প্রবেশ করে প্রথমবার বের হওয়া এ ৭০ হাজার আর কখনো সিরিয়াল পাবে না। সে হিসেবে আল্লাহর ফেরেস্তা সংখ্যা কত তা অনুমান করা সাধ্যাতীত। সেখান নবী (সাঃ) সিদরাতুল মুনতাহা অর্থ্যাৎ সীমান্তের বরই গাছ পর্যন্ত গমন করেন। সেথায় নবী (সাঃ) জিবরাইল (আঃ) কে তার প্রকৃত আকৃতিতে দেখেন। সেখানে রাসূল (সাঃ) অনেক অলৌকিক বিষয় দেখেন। জান্নাত এর সুখ ও জাহান্নামের শাস্তির ভয়াবহতা দেখেন। আর একটু এগিয়ে তিনি কলমের লিখার খসখস ধ্বনি শুনেন। যে কলম দ্বারা লওহে মাহফুজে ফিরিস্তাগণ আল্লাহর নির্দেশসমূহ, বান্দার ভাগ্য প্রভৃতি লিখে রাখেন। ২য় পর্যায়ের এ ভ্রমন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন-তোমরা কি বির্তক করবে যা সে দেখেছে। তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) তাকে (জিবরাইল আঃ কে) আরেকবার (পূর্ণঅবয়বে) সিদরাতুল মুনতাহায় দেখেন। যার নিকট জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। বৃক্ষটি যা দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার তা দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। তার দৃষ্টি ভ্রম হয়নি এবং লক্ষ্য চ্যুতি ও হয়নি। তিনি স্বীয় প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলী দেখেছিলেন (সূরা নাজম আয়াত-১২-১৮)। সিদরাতুল মুনতাহার সীমানায় এসে জিবরাইল (আঃ) বললেন- আমাদের এ স্তরের ফিরিস্তাদের জন্য আর একটুও সামনে যাওয়ার অনুমতি নেই। সামনে গেলেই আমরা পুড়ে যাব। তখন রফ রফ নামক আর একটি বাহন যাকে ক্যাপসুল লিফ্টের অনুরুপ বলতে পারি। তাতে আরোহন করে অসংখ্য নূরের পর্দা পেরিয়ে নবী (সাঃ) আরশে আজিম পর্যন্ত পৌঁছেন। এবং আল্লাহর রাব্বুল আলামিনকে সম্ভাষণ জানাতে ঘোষনা করেন- সকল সম্ভাষণ,সালাত, পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ জবাবে বলেন-হে নবী আপনার প্রতি সালাম, রহমত ও বরকত। নবী (সাঃ) এতে স্বীয় উম্মতকে অর্ন্তভূক্ত করে ঘোষণা করেন- আমাদের ও সকল সৎ বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম। তখন আরশবাহী ফিরিস্তাগণ বলে উঠলেন- আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। উল্লেখিত সম্ভাষণটিকে আমরা সালাতে তাশাহুদ হিসেবে পাঠ করে থাকি। আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে ৫০ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দেয়া হল। নবী (সাঃ) ফিরে আসার পথে মূসা (আঃ) এর সাথে সাক্ষাতের পর মুসা (আঃ)বললেন-আমার উম্মতের উপর দুই ওয়াক্ত সালাত ফরজ ছিল তা ও তারা আদায় করতে সক্ষম হয়নি। আপনার দূর্বল উম্মত ৫০ ওয়াক্ত কিভাবে আদায় করবে? নবী (সাঃ)কে বারবার ফেরৎ পাঠিয়ে সালাত ৫ ওয়াক্তে নামিয়ে আনলেন এবং ৫ ওয়াক্ত আদায় করলে ৫০ ওয়াক্তের প্রতিদান দেয়া হবে মর্মে জানিয়ে দেয়া হয়। তারপরও মূসা (আঃ) আরো কমিয়ে আনতে বললে নবী (সাঃ) স্বীয় লজ্জানূভূতির কারণে আর গেলেন না। মেরাজের উপহার সালাত.এ সালাতকে মুমিনের মেরাজ বলা হয়। মেরাজে নবী (সাঃ) যেমনি ভাবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেছিলেন ও আল্লাহকে অনুভব করেছিলেন। মুমিন সালাতে আল্লাহকে সেভাবে অনুভব করবে। এ প্রসঙ্গে বাদশা আওরঙ্গজেবের কন্যা জেবুন্নেছার ঘটনা তুলে ধরা যায়-বাদশার দরবারে জ্ঞানী গুণী কবিদের কবিতা প্রতিযোগীতা হত। বাদশার কন্যা জেবুন্নেছা ও অন্দর মহল থেকে কবিতা রচনা করে দরবারে পাঠিয়ে দিতো। জেবুন্নেছার কবিতা গুলো খুব সুন্দর ও প্রশংসনীয় হতো। একবার এক কবি বলেই ফেললেন জেবুন্নেছা এতো সুন্দর কবিতা লিখে সে জানি কিরূপ যদি তাকে একবার দেখতে পেতাম। তখন শাহী মহিলাগণ ইসলামী পর্দা প্রথা কঠোরভাবে মেনে চলতো তারা বাহিরের কারো সাথে দেখা দিতো না। কিন্তু ঐ কবির আকাংখার কথা জেবুন্নেছার কানে গেলে সে একটি কবিতা লিখে পাঠিয়ে দেয়। যার মর্মাথ হলো-আমি আমার কবিতার ছন্দে লুকিয়ে থাকি গন্ধ যেমন ফুলের মধ্যে লুকিয়ে থাকে যে আমাকে অনুভব করতে চায় সে যেন আমার কবিতাতেই আমাকে অনুভব করে নেয়। ফুলের গন্ধ দেখা যায় না অনুভব করা যায় আল্লাহকে দুনিয়ায় চর্ম চোখে দেখা যায় না। কিন্তু তার কুদরতের দিকে ও সৃষ্টির দিকে লক্ষ্য করলে তাকে বুঝা যায়। আর সালাতের মধ্যে বান্দা যেন তার একান্ত সান্নিধ্যে থাকে ও তাকে অনুভব করার চেষ্টা করে। তাই সালাতকে মুমিনের মেরাজ বলা হয়। মেরাজের এ শেষ পর্ব সমাপ্ত হলে নবী (সাঃ) এর পৃথিবীতে ফিরে আসার পালা। সকল নবী রাসূলগণ নবী (সাঃ) কে বিদায় জানাতে বায়তুল মোকাদ্দাছ পর্যন্ত এলো।সেখানে সমাবেত হওয়ার পর সকলে সালাতের জন্য দাড়ালেন জিবরাইল (আঃ) নবী (সাঃ) কে ইমামতি করার জন্য দাড় করিয়ে দিলেন। এভাবে তিনি হলেন ইমামুল মুরসালিন। (কোনো কোনো বর্ণনামতে নবীদের সমাবেশ ও সালাত মেরাজের শুরুতে হয়েছিল। নবী (সাঃ) আসমানে অন্য নবীদের পরিচিতি জিজ্ঞেস করেছিলেন। এতে ভ্রমনের শেষের বর্ণনা সঠিক বলে প্রতিয়মান হয়)। এতে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে নবীগন ইন্তেকালের পরেও জীবিত ও আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ও আল্লাহর হুকুমে রুহানী ভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সক্ষম। এর পর রাতের মধ্যে নবী (সাঃ) মক্কায় এসে উপস্থিত হন। সকালে তিনি এ ঘটনা বর্ণনা করলে কাফিরগণ হাসি ঠাট্টা শুরু করল। তারা আবু বকর (রাঃ) কে গিয়ে বললেন- দেখ তোমাদের নবী বলছে তিনি নাকি এক রাতের মধ্যেই মক্কা থেকে ফিলিস্তিন সেখান থেকে সপ্ত আকাশ ও আরশ ভ্রমন করে ফিরে এসেছেন।আপনি কি তা বিশ্বাস করেন? আবু বকর (রাঃ) বললেন তিনি বলে থাকলে অবশ্যই বিশ্বাস করি। কেননা সকাল সন্ধ্যায় যে অদৃশ্য আসমানী ওহি তার নিকট আসে তা বিশ্বাস করছি তাহলে মেরাজ অবিশ্বাস করবো কেন? তখন থেকে আবু বকর (রাঃ) উপাধী হলো ছিদ্দিক বা সত্যবাদী। খাটি মুমিনগণ নির্ধিদায় নবী (সাঃ) এর মেরাজ বিশ্বাস করল। দূর্বল ঈমানদারদের কেউ কেউ চুপ ছিলো। কাফিরগণ নবী (সঃ) কে পরীক্ষা করার জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসের অবস্থান তার দরজা, জানালার অবস্থান ও সংখ্যা এবং রং ইত্যাদি প্রশ্ন করতে লাগল। স্বাভাবিক ভাবে কোথাও কেউ গেলে এসব খুটিনাটি বিষয় লক্ষ্য করে না। তাই নবী (সাঃ) কিছুটা চিন্তিত হলেন। নবী (সাঃ) বলেন-আমি একটি পাথরের উপরে বসা ছিলাম কুরাইশ কাফিরগণ আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে বায়তুল মোকাদ্দাসের নিদর্শণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। আল্লাহ পাক আমার সম্মূর্খে বায়তুল মোকাদ্দাসকে তুলে ধরলেন আর আমি দেখে দেখে তাদের প্রশ্নের উত্তর গুলো দিয়ে দিলাম (বোখারী-মুসলিম)।অত:পর তারা পথিমধ্যকার প্রামান্য নিদর্শন দাবি করলো। আমি শ্যাম থেকে মক্কায় ফিরে আসছিল এমন একটি কাফেলার কথা বললাম যাদের একটি উট হারিয়েছিল। পরে তারা খোঁজা খুঁজি করে তা পেয়েছিল। তারা তিনদিন পরে মক্কায় পৌঁছে যাবে যাদের কাফেলার সর্বাগ্রে একটি ছাই রংয়ের উট থাকবে যার পিঠে চটের বস্তা মালপত্র থাকবে। অন্য একটি কাফেলা ঘুমন্ত ছিল। আমার পিপাসা পাওয়ায় তাদের ঢেকে রাখা পানপাত্র থেকে পানি পান করে আবার ঢেকে দিয়েছি। তারা তানয়ীম নামক স্থানে ছিল । কাফেলা ফিরে আসার পর ঘটনার সত্যতা মিলল। এতে ঈমানদারদের ঈমান আরো দৃঢ় হল। কাফিরদের মনে শয়তানের কুপ্ররোচনায় এটাকে যাদু বলে মনে হল। মেরাজের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আল্লাহ মুমিনদের ঈমানকে আরো দৃঢ় করুক এবং মিরাজের উপহার সালাতকে যথাযথ ভাবে মুমিনের মেরাজ হিসেবে আদায় করার তৌফিক দিন-আমিন।

লেখক: ইয়াছিন মজুমদার, অধ্যক্ষ-ফুলগাঁও ফাযিল ডিগ্রি মাদ্রাসা, লাকসাম, কুমিল্লা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ