Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এক জাহাঙ্গীরকে ফাঁসাতে আরেক জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনায় মনসুর খুন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:১৬ পিএম

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় স্বামী মনসুরকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকার সাভার থানার হেমায়েতপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩ এর একটি দল। অভিযুক্তের নাম জাহাঙ্গীর আলম (২৯)।

তিনি নওগাঁ মান্দার কালিকাপুরের মোজাহার মণ্ডলের ছেলে। গত ১৫ নভেম্বর এ ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যান মো. জাহাঙ্গীর আলম। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, মৃত মনসুর রহমান নওগাঁ জেলার মান্দা এলাকার বাসিন্দা এবং গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর তার পাশের গ্রামের বাসিন্দা। মনসুর তার এলাকার বিভিন্ন দোকানে চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মনসুর দুটি বিয়ে করেছেন। দুই স্ত্রীসহ নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। মনসুরের প্রথম স্ত্রী হাসিনার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মেঘনা নামে আরেক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। প্রথম স্ত্রী হাসিনা হাসিনা পাশের গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়ান। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় মনসুরের বাড়িতে জাহাঙ্গীরসহ তার আরও কয়েকজন বন্ধু হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসে। বন্ধুদের পাশের ঘরে বসিয়ে হাসিনা এবং জাহাঙ্গীর শয়ন কক্ষে একান্তে সময় কাটানোর এক পর্যায়ে মনসুর এসে তাদের দেখে ফেলে। এ নিয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।

এ সময় জাহাঙ্গীরের বন্ধুরা মনসুর এবং জাহাঙ্গীরের মধ্যে চলমান বিবাদ মীমাংসার কথা বলে মনসুরকে বাড়ির পাশের একটি বাগানে নিয়ে যায়। মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা জাহাঙ্গীর এবং মনসুরকে বাড়ি থেকে বাগানের দিকে চলে যেতে দেখে ঘরের ভেতর চলে আসে। র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, মূলত এ ঘটনাটির পেছনে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরসহ আরও কয়েকজন মিলে একটি নীলনকশা সাজিয়েছিল। সেই নীলনকশা অনুযায়ী হাসিনার বাড়িতে মনসুরকে উসকে দিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মনসুরকে বাগানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাটি পূর্ব থেকেই সাজানো ছিল। এ ঘটনার পেছনের মূল কারিগরের নামও জাহাঙ্গীর। তার পিতার নাম মোজাহার, বাড়ি মান্দা কালিকাপুর। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বন্ধুদের মধ্যে পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর ছিলেন না। তিনি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, বাগানে অপেক্ষা করতে থাকেন।

উল্লেখ্য, এ জাহাঙ্গীরের সঙ্গেও কিছুদিন পূর্বে হাসিনার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং মনসুর বিষয়টি জেনে যাওয়ায় তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ কারণে হাসিনা এবং জাহাঙ্গীরের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে হাসিনা সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায়। পূর্ববর্তী প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীর অন্যান্যদের নিয়ে ১১ নভেম্বর তার নিজ বাড়িতে বসে মনসুরকে হত্যার এ নীলনকশাটি সাজায়। তবে কৌশলে সে অপর জাহাঙ্গীর যার সঙ্গে হাসিনার বর্তমানে পরকীয়ার সম্পর্ক চলমান তাকে নায়ক হিসেবে তুলে ধরে নিজেকে আড়ালে রাখে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা দুই তিন দিন মনসুরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে এবং ১৫ নভেম্বর সুযোগটি কাজে লাগাতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর জানায়, ঘটনার সময় সে বাগানে অপেক্ষায় ছিল। বাকিরা মনসুরকে বাগানে নিয়ে যাওয়ার পর তার নেতৃত্বে সকলে মিলে ঘটনাস্থলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাখা বাঁশ এবং গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। পেটানোর একপর্যায়ে মনসুর মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে থাকে।

এ সময় জাহাঙ্গীর তাকে মুখমণ্ডলে লাথি দিলে মনসুর গোঙাতে শুরু করে। সে মারা যায়নি দেখতে পেয়ে জাহাঙ্গীরের প্রচণ্ড রাগ হয় এবং একপর্যায়ে অন্যান্যদের সহযোগিতা নিয়ে জাহাঙ্গীর তার মাফলার দিয়ে মনসুরের গলায় পেঁচিয়ে গাছের ডালের সঙ্গে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মনসুরের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় তারা। ঘটনার পরদিন সকালে মৃত মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাগানে ঝুলন্ত অবস্থায় মনসুরের মরদেহটি পান। যেহেতু তিনি রাতে তার স্বামীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরকে বের হতে দেখেছেন সেহেতু জাহাঙ্গীরকে মূল হত্যাকারী হিসেবে শনাক্ত করেন।

এ ঘটনায় ১৭ নভেম্বর নওগাঁ জেলার মান্দা থানায় মৃত মনসুরের বাবা বদের আলী ওরফে বুদু কবিরাজ বাদী হয়ে জাহাঙ্গীর আলমসহ (সাহেব আলীর ছেলে) অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় জাহাঙ্গীরকে আসামি করা হলেও হত্যাকাণ্ডটির মূল পরিকল্পনাকারী এবং মনসুরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতকারী জাহাঙ্গীরের (মোজাহারের ছেলে) নাম মামলায় আসেনি।

সে পরিকল্পনাটির পেছনে থেকে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে নিজেকে আড়াল করতে সক্ষম হয় এবং তারই সাজানো নাটক অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ডের তার সহযোগী জাহাঙ্গীর (সাহেব আলীর ছেলে) মূল আসামি বলে পরিগণিত হয়। প্রাথমিকভাবে মাস্টার মাইন্ড জাহাঙ্গীরের সম্পৃক্ততার বিষয়টির কোনো ক্লু না থাকায় তাকে সন্দেহের আওতায় আনা হয় নি। কিন্তু পরবর্তীতে গভীর তদন্তে তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে।

গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। পরবর্তীতে লেখাপড়া বাদ দিয়ে এলাকায় কৃষি কাজ এবং বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। ঘটনার পর সে বাড়ি থেকে পালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। সে কোনো স্থানে কাজ না পেয়ে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন হেমায়েতপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকতে শুরু করে। পরবর্তীতে সে হেমায়েতপুর এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিল। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

২৪ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ