Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রোজারিওর রাজপুত্রবরণ

বুয়েনস আয়ার্স লোকেলোকারণ্য

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

একেই বুঝি বলে স্বপ্নপূরণ! দেড় দশক ধরে যে শিরোপাটির খুঁজে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন, সেটিই এখন লিওনেল মেসির হাতের মুঠোয়, বগলদাবায়। কদিন আগেও যে মুকুটটি জিততে না পারাকে মেসির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ বলে মনে হচ্ছিল, সেই মুকুটটি এখন মেসির মাথায়। রোজারিওর ছোট্ট জাদুকর যে এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। নিজ ভূমিতে মেসিকে বরণও করা হয়েছে তাই রাজার বেশে।

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে বুয়েনস আয়ার্সে পৌঁছাতেই মানব ঢল নামে চ্যাম্পিয়নদের এক পলক দেখতে। এর মধ্য দিয়ে আর্জেন্টাইনদের ৩৬ বছরের শিরোপা তৃষ্ণাও মিটেছে আর্জেন্টাইনদের। মেসিদের বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে অংশ নিতে প্রায় ৫০ লাখ জনতার ঢল নেমেছে বুয়েনস আয়ার্সের রাস্তায়। বুয়েনস আয়ার্সের শিরোপা উৎসব শেষে মেসি চলে যান জন্মস্থান রোজারিওতে। বাকি সতীর্থদের বিদায় জানালেও এ সময় মেসির সঙ্গে ছিলেন রোজারিওর আরেক উজ্জ্বল মুখ বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল করা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াও। জন্ম শহরেও উৎসবমুখর পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় বিশ্বকাপজয়ী এই মহাতারকাকে। রোজারিওতে মেসি-মারিয়ার সঙ্গে দেখা যায় একই শহর থেকে ওঠে আসা সাবেক ফুটবলার ও কোচ কিলি গনসালেসকেও। তারা একসঙ্গে ছবিও তুলেন।

১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম শিরোপা ঘরে নিতে পেরেছে আর্জেন্টাইনরা। আর্জেন্টাইনদের এমন অপার্থিব মুহূর্ত উপহার দেওয়ার নায়ক মেসি। রোজারিওর জনতার যেন তাই মেসিকে পাওয়ার মুহূর্তটা একটু অন্য রকমই ছিল। মেসিকে বরণ করতে আসা জনতার মুখেও তখন শোনা যায় ‘ওলে, ওলে, লিও লিও’ সেøাগান। নিজ এলাকার মানুষের ইচ্ছাপূরণে মেসিকে তখন তাদের সঙ্গে সেলফি তুলতেও দেখা যায়। ঘরে পৌঁছানো পর্যন্ত রোজারিওর উন্মাতাল জনতা সঙ্গ দিয়ে যায় এই মহাতারকাকে। নিরাপত্তারক্ষীরা অবশ্য পুরো সময় মেসি-মারিয়াকে ঘিরে রাখলেও উৎসবমুখর মানুষদের ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি তারা। কেউ কেউ তখন ‘এগিয়ে যাও চ্যাম্পিয়ন’ ধ্বনিতে পুরো এলাকামুখর করে তুলেন।

তিন যুগের শিরোপা ক্ষরা কাটিয়ে এখন উৎসবের দেশ আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপ শিরোপা নিয়ে ঘরে ফেরা মানুষদের অভ্যর্থনা জানাতে রাজধানীর বুয়েনস আয়ার্সের রাজপথে নামে মানুষের ঢল। বহুল প্রতিক্ষিত সোনালি শিরোপা এবং বিশ্বজয়ী তারকাদের একনজর দেখতে আর্জেন্টিনার রাজধানীর ওবেলিস্কে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। ছাদখোলা বাসে ভক্তদের সঙ্গে প্রায় ৮ ঘন্টা বিজয় উদযাপনের কথা ছিল চ্যাম্পিয়নদের। তবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে, কিছু সময় ছাদখোলা বাসে চলার পর, হেলিকপ্টারে করে বিজয় শোভাযাত্রা করেন মেসিরা। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য ক্ষমা চেয়েছে আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়।

বিখ্যাত ওবিলিস্ক চত্বরে যাওয়ার কথা ছিল মেসি-ডি মারিয়াদের। জনতার ঢল নামায় পরিস্থিতি কঠিন হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ছাদখোলা বাসে শোভাযাত্রা সহকারে আর এগোতে পারেননি লিওনেল মেসিরা। আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমগুলোর দাবি মেসিদের বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে অংশ নিতে প্রায় ৫০ লাখ জনতার ঢল নেমেছে বুয়েনস আয়ার্সের রাস্তায়। মেসিদের বহনকারী বাস ব্রিজের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আরও বেড়েছে। ব্রিজ থেকে সমর্থকরা লাফ দিয়ে মেসিদের বাসে পড়ছিলেন। বিশ্বকাপজয়ীদের স্পর্শ করতে চাচ্ছিলেন। দেশটির ফেডারেল পুলিশ ক্যাডেট স্কুলের সামনে গিয়ে থামানো হয় বাস। এরপর পাঁচটি হেলিকপ্টারে সেখান থেকে আকাশপথে শোভাযত্রায় অংশ নেয় আর্জেন্টিনা দলের খেলোয়াড়দের।

প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজের মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েলা সেরুতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা হেলিকপ্টারে পুরো রুটে উড়ছে, কারণ স্থলপথে মানুষের আনন্দের বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ কারণে স্থলপথে ছাদখোলা বাস চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।’এর আগে বাংলাদেশ সময় পরশুদিন সকালে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলকে বহনকারী বিমানটি পৌঁছায় এজেইজার মিনিস্ট্রো পিস্তারিনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এরপর বিশ্বজয়ী ফুটবলারদের নিয়ে যাওয়া হয় আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) প্রধান কার্যালয়ে। সেখানেই কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নেন মেসি-ডি মারিয়ারা।

বিশ্বজয়ীদের বরণ করতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। দেশজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। রাজধানী বুয়েন্স য়নস আয়ার্সের ঐতিহাসিক ওবেলিস্ক এবং এর আশপাশে জড়ো হন লাখ লাখ ফুটবলপ্রেমী। ছাদখোলা বাসের সফর বাতিল হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এএফএ সভাপতি ক্লাউদিও তাপিয়া। এর জন্য তিনি দেশটির পুলিশকে দায়ী করেন। টুইটারে তাপিয়া লিখেন, ‘তারা (পুলিশ) আমাদের ওবেলিস্কে গিয়ে লাখো মানুষের সঙ্গে আনন্দ-উৎসবে যোগ দিতে দেয়নি। যেই নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আমাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে, তারাই আমাদের যেতে দিচ্ছে না। এটা লজ্জাজনক। সব চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়ের পক্ষ থেকে হাজারো ক্ষমা চাচ্ছি।’

এদিকে স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মেসিরা রিচেরি হাইওয়েতে আসতেই ব্রিজের ওপর থেকে দুজন সমর্থক লাফ দেন বাসের ছাদের ওপর। খেলোয়াড়রা বারণ করা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। দুজনের একজন বাসের ছাদে পড়েন। খেলোয়াড়রা রক্ষা করেন যেন কোনো বিপদ না হয়। আরেক সমর্থক দুর্ভাগা। বাসের পেছনে কিছুক্ষণ ঝুলে থাকার পর ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেকটা বাধ্য হয়ে ছাদখোলা বাসে বিজয় প্যারেড বাতিল করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাতারবিশ্বকাপ২০২২

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ