Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রস্তুতিহীন বিরোধী দলের অংশ গ্রহন না করার ঘোষনায় সরকারী দলের প্রর্থীরা ‘মনোনয়ন মানেই বিজয়ী’ মানষিকতায়

ছয়মাস পর থেকেই বরিশাল সিটি নির্বাচনের ক্ষন গননা শুরু

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ৯:৫৭ এএম | আপডেট : ১০:০৯ এএম, ১৪ নভেম্বর, ২০২২

আগামী ছয়মাস থেকে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বরিশাল সিটি করপোশেনের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে নানামুখি জল্পনা শুরু হলেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দলে তেমন কোন প্রকাশ্য তৎপড়তা নেই। জাতীয় পার্টি অবশ্য আরো ৬ মাস আগেই প্রার্থী ঘোষনা করে রেখেছে। ঘোষনা অনুযায়ী প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোন র্নিবাচনে না আসার সিদ্ধন্তে অবিচল থাকলে তা আসন্ন এ নির্বাচনে সরকারী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনে ‘দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মানেই বিজয়ী’ এমন বাড়তি স্বস্তি দেবে বলেও মনে করছেন মহলটি। তবে আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বরিশাল সহ দেশের ৫টি সিটি করপেরেশনের নির্বাচন নিয়ে প্রাক-প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহন শুরু করেছে। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বরিশালে প্রথম সাধারন সভা অনুষ্ঠিত হয় ঐ বছরের ১৪ নভেম্বর। নিয়মনুযায়ী আগামী বছরের ১৪ মে থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে পরবর্তি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ নগর পরিষদের।

এমনকি দেশের প্রধান বিরোধী দল অংশ নেয়া না নেয়ার প্রসঙ্গটি বাদ দিলে এ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের মত প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে যথেষ্ঠ মতভেদ রয়েছে। তেমনি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে দক্ষিণাঞ্চলে সর্ববৃহত একটি নির্বাচন নিয়ে দলটির মধ্যে নুন্যতম কোন প্রস্তুতিও নেই।
প্রায় একই পরিস্থিতি ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মধ্যেও। দলের একটি বড় অংশ বরিশাল মহানগরীর আগামী নির্বচনে বর্তমান মেয়রই প্রার্থী হচ্ছেন’ বলে ধরে নেয়ার পাশাপাশি দলীয় ‘মনোনয়ন লাভ মানেই নগরীর চাবি হাতে পাওয়া’ মনে করছেন। পাশাপাশি দলের মধ্যেই একাধীক শিবির দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে নানা ভিন্নমত রয়েছে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, সরকার ও বিরোধী দলের প্রার্থী যেই হোক না কেন, সাধারন মানুষ যদি ভোট দিতে পারে, তবে দল ও প্রার্থীদের অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মকান্ড পর্যালোচনা করেই নগরীর চাবি তুলে দেবেন। অতি সম্প্রতি চরম বাঁধা ও প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে বরিশাল মহানগরীতে বিএনপি’র বিভাগীয় গনসমাবেশ নতুন করে করে ভাবাতে শুরু করেছে শাষক জোটকে। বিরোধী দলের সমাবেশে এত জনসমাগম কিসের ইংগিত দিচ্ছে, তা বিবেচনায় নিয়ে আগামী বছরের মাঝামাঝী বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে সরকারী দল নতুন করে সব কিছু চিন্তা করবে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
আর তা কি বিগত সিটি নির্বাচনের পথ ধরেই অনুষ্ঠানের চিন্তা করছে শাষক দল, নাকি যে সময়টুকু অবশিষ্ট আছে, তারমধ্যে আরো ভাল কিছু করে নগরবাসীর সন্তুষ্ট অর্জনের চেষ্টা করবে, তা সময়ই বলতে পারবে বলেও মনে করছে মহলটি। তবে ২০১৮ সিটি নির্বচনে সরকারী দল ও দলীয় প্রার্থীর প্রতি পুলিশ ও প্রশাসনের যে মনোভাব ছিল, তা আগামীতে কতটুকু কাজ করবে, সে বিষয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। কারণ, প্রশাসনের সাথে বরিশালে সরকারী দলের শীর্ষ পর্যায়ে যে দুরত্ব তৈরী হয়েছিল, তা এখনো কাছে আসেনি। পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশনও ‘আগের মত আজ্ঞাবহ নাও থাকতে পারে’ বলে মনে করছে মহলটি। এসব বিবেচনায় সরকারী দল বরিশাল সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে এ ভোট নিয়ে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আশা করছে মহলটি।
১৯৭৩ সালের জতীয় নির্বাচন পরবর্তি ভোটগুলোতে বরিশাল শহর ও সদর আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের হাতছাড়া। ১৯৯১-এর ডিসেম্বরে ও ১৯৯৮-এর আগষ্টে সদর আসনের দুটি উপনির্বাচন এবং ২০০১ ও ২০০৮ সালে সদরের সংসদীয় আসন ও ২০০৩ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হন দলটির বিদায়ী মহানগর সভাপতি মুজিবুর রহমান সারোয়ার। ২০১৩’র সিটি নির্বাচেনেও বিএনপি প্রার্থী আহসান হাবীব কামাল বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮-এর সিটি নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনে সারোয়ার দলীয় প্রার্থী হলেও সকাল ১১টার আগেই ভোটের বাক্স ভড়ে যাওয়ায় ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। দুটি নির্বাচনেই মহাজোটের প্রার্থী বাদে সারোয়ার সহ অন্য সব দলই সকাল ১১টার পরে ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন।
তবে বিএনপি’র মুজিবুর রহমান সারোয়ারের বিপক্ষে বরিশালে ও কেন্দ্রে দলের অভ্যন্তরেই প্রতিপক্ষ বড় ধরনের শক্তিশালী না হলেও এখনো পুরোমাত্রায় সক্রিয়। ফলে সম্প্রতি বরিশাল জেলা ও মহানগরের নতুন কমিটিতে সারোয়ারের স্থান হয়নি। অথচ সব প্রতিকুলতার মধ্যেও বরিশালের রাজনীতির মাঠে ইতোপূর্বে তিনি সংগঠনিক কর্মকান্ডকে অব্যাহত রাখতে সক্ষম ছিলেন। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এতদিনের ‘বিএনপির শক্ত ঘাটি বরিশাল’এ দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি কোন পর্যায়ে থাকে, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।
তবে আগামী বরিশাল সিটি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল ইতোমধ্যেই ক্ষন গণনা সহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার পাশাপাশি সব কিছুই মূল্যায়ন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু আগামী বছরের সিটি নির্বাচনে জনগনের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, তার ওপরই নির্ভর সব কিছুই নির্ভার করছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ